লে গিদ মিশলাঁ

লে গিদ মিশলাঁ (ফরাসি: Les Guides Michelin; আ-ধ্ব-ব: [ɡid miʃ.lɛ̃]) তথা মিশলাঁ নির্দেশিকাসমূহ হল হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ভ্রমণের জন্য তথ্যপঞ্জিমূলক কিছু নির্দেশিকা যেগুলি বিশ্বখ্যাত টায়ার প্রস্তুতকারক ফরাসি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মিশলাঁ গত একশত বছরের বেশি সময় ধরে প্রকাশ করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছরের শেষের দিকে লাল নির্দেশিকা নামে যে গ্রন্থটি ছাপিয়ে থাকে সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন রেস্তোরাঁর খাবার ও সেবার মান উল্লেখ থাকে যার সর্বোচ্চ মান তিন তারকা। অতীতে মিশলাঁ নির্দেশিকার বিষয়বস্তুগুলি ইউরোপকেন্দ্রিক হলেও বিগত কয়েক দশক ধরেই তারা বিশ্বব্যাপী রেস্তোরাঁর মান নির্ণয় করে আসছে। রাস্তার ধারের ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান থেকে শুরু করে অভিজাত হোটেলের পানশালা, সব ধরনের রেস্তোরাঁই এতে স্থান পেয়েছে। এর মান মূলত খাবারের স্বাদ, পরিবেশনা, মান ইত্যাদির উপর নির্ভর করে নির্ণিত হয়।

১৯২৯ সালে প্রকাশিত লাল রঙা গিদ মিশলাঁ-র ২৫তম সংস্করণ

১৯০০ সালের দিকে ফরাসি দুই ভাই অঁদ্রে মিশলাঁ ও এদুয়ার মিশলাঁ মিলে মিশলাঁ নামের টায়ার প্রস্তুরতকারক প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেসময় ফ্রান্সের রাস্তায় আনুমানিক ৩০০০ মোটরযান চলত। গাড়ির চাহিদা, তথা টায়ারের চাহিদা বাড়াতে, মিশলাঁ নির্দেশিকা প্রকাশিত হয়। প্রথম মুদ্রণে বইটির প্রায় ৩৫ হাজার সংখ্যা ছাপানো হয় যেগুলি বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। এই নির্দেশিকাতে মোটরযানের মালিকদের জন্য ফ্রান্সের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন মানচিত্র, টায়ার মেরামত বা পরিবর্তন, যান্ত্রিক মেরামত, সরাইখানা, রেস্তোরাঁ এবং তেল স্টেশনের পরিচিতি দেওয়া থাকে। চার বছর পর, অর্থাৎ ১৯০৪ সালে, মিশলাঁ বেলজিয়ামেও একই ধরনের নির্দেশিকা প্রকাশ করে। পরবর্তীতে তারা আলজেরিয়া ও তিউনিশিয়া (১৯০৭); আল্পস ও রাইন (১৯০৮); জার্মানি, স্পেন ও পর্তুগাল (১৯১০); আয়ারল্যান্ড ও ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ (১৯১১); এবং লে পেই দ্যু সোলেই (উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ ইতালি ও ক্রোয়েশিয়া) (১৯১১) প্রকাশ করে। প্রথমে ফরাসি ভাষাতে হলেও ১৯০৯ সাল থেকে তারা বইগুলির ইংরেজি সংস্করণও প্রকাশ করা শুরু করে।

গিদ মিশলাঁ-তে রেস্তোরাঁ পর্যালোচনার পদ্ধতি

বিভিন্ন রেস্তোরাঁর খাবারের স্বাদ চেখে দেখার জন্য মিশলাঁ কর্তৃপক্ষ যাদেরকে নিযুক্ত করেন তাদেরকে আঁস্পেক্তর (ফরাসি Inspecteur) বা পরীক্ষক বলা হয় এবং গোয়েন্দা সংস্থার গোয়েন্দাদের মতো তাদেরও পরিচয়ের গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। তাদের মান বিবেচনা মূলত খাবারকেন্দ্রিক। খাবার পরিবেশনকারীর ব্যবহার, রেস্তোরাঁর পরিবেশ বা খাবারের নাম যেন তাদেরকে প্রভাবিত না করে, সে ব্যাপারে কড়া নির্দেশনা দেওয়া থাকে। খাবার চেখে দেখার জন্য সাধারণত দুইজন পরীক্ষক একসাথে একটি রেস্তোরাঁয় গিয়ে থাকেন। তবে সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়ার জন্য তারা কিছু আচারবিধি অনুসরণ করেন। তাদের সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার আগেই টেবিল সংরক্ষণ করে থাকেন। দুইজনের একজন সাধারণত ৩০ মিনিট আগে পৌঁছাতে হয়। খাবার ফরমায়েশ করার সময় তাদের একজন নির্দিষ্ট মেনু থেকে এবং অন্যজন "আ লা কার্ত" (অর্থাৎ ইচ্ছানুযায়ী) তালিকা থেকে বিভিন্ন পদ নির্বাচন করেন। সাথে তারা অর্ধেক বোতাল ওয়াইন এবং কলের পানির জন্য বলে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে তারা ইচ্ছে করেই মেঝেতে কাঁটাচামচ রাখেন এটা দেখার জন্য যে রেস্টুরেন্ট সেটা খেয়াল করেছে কিনা। সব শেষে তারা ৪টি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে তারকা দিয়ে থাকেন। ১) খাবারের পদ বা ব্যঞ্জনটি জিভে জল আনতে সক্ষম কি না, ২) খাবারের ঘ্রাণ মোহনীয় কি না, ৩) খাবারের প্রত্যেক গ্রাস আপনাকে অনুরণিত করছে কি না, এবং ৪) খাবারের দামটি পরিমাণের সাথে যথার্থ কি না।

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.