রাউল ওয়ালেনবার্গ
রাউল ওয়ালেনবার্গ (ইংরেজি: Raoul Wallenberg, জন্ম: ৪ আগস্ট, ১৯১২ - মৃত্যু: ১৭ জুলাই, ১৯৪৭?)[1][2][3][4] সুইডেনের স্থপতি, ব্যবসায়ী, মানবতাবাদী ও বিশিষ্ট কূটনীতিবিদ ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হলোকস্টের সময়কালে হাঙ্গেরীয় বংশোদ্ভূত প্রায় এক লক্ষ ইহুদী জনগোষ্ঠীকে নাৎসি পার্টি কর্তৃক নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন ও জাতীয় বীরে পরিণত হয়েছিলেন। নিজের জীবন বিপন্ন করে প্রায়শঃই তিনি বিশ্বব্যাপী বীরোচিত তৎপরতা চালিয়েছিলেন। সুইডেনের বিশেষ দূত হিসেবে বুদাপেস্টে জুলাই থেকে ডিসেম্বর, ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। সেখানে তিনি নিরাপত্তামূলক পাসপোর্ট সরবরাহ করে হাজার-হাজার ইহুদীর প্রাণ বাঁচান ও সুইডিশ অঞ্চল তৈরী করে ইহুদীদের আশ্রয় দেন।[5]
রাউল ওয়ালেনবার্গ | |
---|---|
![]() জুন, ১৯৪৪ সালের ওয়ালেনবার্গের পাসপোর্টের স্থিরচিত্র | |
জন্ম | লিডিঙ্গো মিউনিসিপালিটি, সুইডেন | ৪ আগস্ট ১৯১২
মৃত্যু | অনুমিত ১৭ জুলাই ১৯৪৭ ৩৪) অনুমিত সোভিয়েত ইউনিয়ন | (বয়স
জাতীয়তা | সুইডিয় |
যেখানের শিক্ষার্থী | মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | কূটনীতিবিদ, ব্যবসায়ী |
পিতা-মাতা | রাউল অস্কার ওয়ালেনবার্গ মারিয়া "মাজ" সোফিয়া উইসিং |
প্রারম্ভিক জীবন
স্টকহোমের কাছাকাছি ক্যাপ্পস্তা এলাকায় ওয়ালেনবার্গ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রখ্যাত ব্যাংকার ও শিল্পপতির পরিবারের সন্তান ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযু্দ্ধকালীন সময়ে ১৯৪০-এর দশকে ব্যবসায়ের লক্ষ্যে হাঙ্গেরী গমন করেন। এডলফ হিটলারের নির্দেশনায় ইউরোপের সকল ইহুদীকে হত্যার নীল নকশায় হস্তক্ষেপ করে বাঁধাগ্রস্ততার পরিবেশ সৃষ্টি করেন। ১৯৪৪ সালে বিশ্ব ইহুদী কংগ্রেস এবং আমেরিকান যুদ্ধ শরণার্থী সংস্থা রাউল ওয়ালেনবার্গকে হাঙ্গেরী থেকে বাদ-বাকী ইহুদীকে রক্ষা করার জন্যে আকুল আবেদন জানায়।
ইহুদী উদ্ধার
সুইডিশ সরকার ওয়ালেনবার্গকে কূটনৈতিক হিসেবে হাঙ্গেরীর রাজধানী বুদাপেস্টে প্রেরণ করেন। সেখানে তিনি প্রায় বিশ হাজার ইহুদীর মাঝে পাসপোর্ট বিলি করেন এবং নিরপেক্ষ রাষ্ট্র সুইডেনের নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করেন। এছাড়াও তিনি আশ্রিত ইহুদীদের আবাসনের জন্যে নিজ অর্থ ব্যয় অথবা বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রদত্ত অর্থ দিয়ে বাড়ী ক্রয় কিংবা ভাড়া করেন। লুথারবাদে বিশ্বাসী ব্যক্তিত্ব ওয়ালেনবার্গকে রোমান ক্যাথলিক এবং অন্যান্য অ-ইহুদী নেতৃবর্গ ব্যাপকভাবে সহায়তা করেন।
নাৎসি পার্টির একজন কর্মকর্তা এডলফ আইখম্যানের পরিচালনায় এ সকল ইহুদীকে রাজনৈতিক বন্দীশিবিরে প্রেরণ করা হয়। ঐ কর্মকর্তা জার্মান পরিকল্পনায় হস্তক্ষেপ বন্ধের জন্যে ওয়ালেনবার্গকে আদেশ দেন। কিন্তু তিনি তা পালন করতে অস্বীকৃতি জানান। পরবর্তীতে আইখম্যান তাকে বেশ কয়েকবার হত্যা করার চেষ্টা চালালেও তিনি প্রাণে বেঁচে যান। সোভিয়েত সেনাদল কর্তৃক বুদাপেস্ট মুক্ত করার চূড়ান্ত পর্যায়ের দিনগুলোয় ওয়ালেনবার্গ নাৎসি পার্টিকে গণহত্যা বন্ধ করার অনুরোধ জানান। প্রায় সত্তর হাজার ইহুদীকে হত্যার লক্ষ্যে শহরের অন্যত্র আলাদা অংশ বা ঘেটোতে স্থানান্তর করে গণহত্যা করেছিল।
দেহাবসান
১৭ জানুয়ারি, ১৯৪৫ সালে সোভিয়েত রেড আর্মি বুদাপেস্ট অবরুদ্ধ করে ও রাউল ওয়ালেনবার্গকে গ্রেফতার করে।[6] সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, ওয়ালেনবার্গ আমেরিকার গুপ্তচর ছিলেন।[7] ১৯৫৭ সালে সোভিয়েত সরকার তাদের প্রতিবেদনে জানায় যে ১৯৪৭ সালের ১৭ জুলাই হৃদযন্ত্র ক্রিয়া বন্ধের কারণে লুবিয়েঙ্কা ও মস্কোয় অবস্থিত ভবনের কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। উভয় ভবনই কেজিবি'র সদর দফতর কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হতো। কিন্তু অনেক লোকই জানান যে তারা তাকে সোভিয়েত কারাগারে জীবিত দেখেছেন এবং ১৯৪৭ সালের পর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
সম্মাননা
রাউল ওয়ালেনবার্গের বীরত্বগাঁথা ও সাহসিকতাপূর্ণ কর্মকাণ্ড বিশেষ করে হাঙ্গেরীয় ইহুদীদের জীবন বাঁচানোর ন্যায় মানবতাধর্মী আচরণে অগণিত সম্মাননা অর্জনসহ তার নামে পুরস্কারের নামকরণ করা হয়েছে। ১৯৮১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস প্রতিনিধি টম ল্যান্টোস তাকে জীবনদাতা হিসেবে উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে কংগ্রেসে বিল উত্থাপন করায় রাউল ওয়ালেনবার্গকে মরণোত্তর মার্কিন নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও তিনি কানাডা, হাঙ্গেরী এবং ইসরায়েলেরও সম্মানিত নাগরিক হিসেবে ঘোষিত হয়েছেন। ইসরায়েলে তার স্মারকস্তম্ভ রয়েছে ও রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে। ১৯৮১ সালে জাতিসংঘ রাওল ওয়ালেনবার্গ কমিটি সৃষ্টি করা হয় যাতে মানবধর্মী আদর্শ ও অহিংসাত্মক সাহসী কার্যকলাপের বিষয়াবলী অন্তর্ভুক্ত। এ কমিটি রাউল ওয়ালেনবার্গ পুরস্কার বার্ষিকী আকারে প্রদান করে থাকে। ১৯৯৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়। হলোকস্টে তার ভূমিকা ও অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ ২৬ জুলাই, ২০১২ সালে ইউনাইটেড স্টেটস কংগ্রেস কর্তৃক কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল প্রবর্তন করা হয়।[8]
তথ্যসূত্র
- The date of death is based on a letter given to his family by Soviet authorities in 1957 and is disputed by some.
- "German's Death Listed; Soviet Notifies the Red Cross Diplomat Died in Prison", New York Times, 15 Feb 1957; Retrieved on February 14, 2007
- "Raoul Wallenberg"। Notable Names Database। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০২-১২।
- "Archives Throw Doubt on Wallenberg Death Date"। The New York Times। এপ্রিল ১, ২০১০। সংগ্রহের তারিখ মে ২২, ২০১০।
- "Yad Vashem database". Yad Vashem. Archived from the original on February 7, 2007. Retrieved 2007-02-12. "who saved the lives of tens of thousands of Jews in Budapest during World War II ... and put some 15,000 Jews into 32 safe houses."
- Raoul Wallenberg’s arrest order, signed by Bulganin in January 1945
- "Unraveling Raoul Wallenberg's Secrets". Time. May 19, 2008
- "The Library of Congress: Bill Summary & Status 112th Congress (2011 - 2012) H.R. 3001"
বহিঃসংযোগ
- The Importance of Raoul Wallenberg - a Swedish Human Right Hero at The Global Herald
- Raoul Wallenberg - Righteous Among the Nations - Yad Vashem
- Raoul Wallenberg Center at the Auschwitz Institute for Peace and Reconciliation
- The International Raoul Wallenberg Foundation
- The Raoul Wallenberg Committee of the United States
- Searching for Raoul Wallenberg
- Holocaust Rescuers Bibliography with information and links to a variety of books about Raoul Wallenberg
- University of Michigan Wallenberg Committee
- Public Lecture by Dr Paul Levine 'Raoul Wallenberg in Budapest: Myth, History and Holocaust' held at the Wiener Library London on 8 March 2010 PODCAST
- Raoul Wallenberg - Holocaust Heroes Budapest Raoul Wallenberg - Holocaust Heroes Budapest