রহিমউল্লা

রহিমউল্লা (? - ১৮৬১) সুন্দরবন অঞ্চলের কৃষক বিদ্রোহ তথ নীল বিদ্রোহের প্রখ্যাত নেতা ও শহীদ।[1][2]

রহিমউল্লা
জন্ম?
মৃত্যু১৮৬১
আন্দোলনকৃষক বিদ্রোহ

বিদ্রোহের সূচনা

সুন্দরবনের বারুইখালি অঞ্চলে কৃষকদের প্রধান ছিলেন রহিমউল্লা। তিনি অত্যন্ত কৃষকমহলে জনপ্রিয় ছিলেন। এসময় মরেল জমিদারীর অত্যাচারী ম্যানেজার ডেনিস হেলির লাঠিয়াল বাহিনী সাধারন প্রজাদের ওপর জুলুম ও লুঠতরাজ চালাতো। রহিমউল্লা নিজে দুর্দান্ত লাঠিয়াল ছিলেন। তিনি এই সকল জুলুমবাজির প্রতিরোধ করেন সাহসের সাথে ও প্রতিরোধ দল গড়ে তোলেন। ১৮৬১ সালের নভেম্বর মাসে গুনী মামুদ তালুকদার নামক এক বিত্তবান জমিদার হেলির সাহায্যে জমি দখলের চেষ্টা করলে রহিমউল্লা বাধা দেন এবং প্রচন্ড সংঘর্ষ হয়। হেলির লাঠিয়াল সর্দার রামধন মালো মারা গেলে জমিদার বাহিনী পলায়ন করে।[2]

সম্মুখ যুদ্ধ ও মৃত্যু

এই ঘটনার কয়েকদিন পরে ডেনিস হেলি প্রতিশোধার্থে গভীর রাত্রে অতর্কিতে তার বাড়ি আক্রমন করে। সাথে ছিল ভাড়াটে লেঠেলবাহিনী। রহিমউল্লা অনুমান করেছিলেন যে তার বাড়ি আক্রান্ত হতে পারে। বাড়ীর চারিদিকে পরিখা কেটে প্রতিরোধের ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। বিপুল সংখ্যক বন্দুকধারী ও লাঠিয়ালদের সাথে রহিমউল্লা ও তার সাথীদের ভয়াবহ খন্ডযুদ্ধ হয় সারারাত ধরে। রহিমউল্লা নিজেই বন্দুক হস্তে লড়াই করেন। গুলি ফুরিয়ে গেলে বাড়ির মেয়েদের রুপোর বালা চূর্ন করে গুলির কাজ চালানো হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বিদ্রোহী রহিমউল্লা। উভয় পক্ষে সতেরো জন নিহত ও বহু আহত হয়। রহিমউল্লা ও অন্যান্য কৃষক বিদ্রোহীদের মৃতদেহগুলি জংগলে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলে হেলির লোকজন। বাড়ির মহিলাদের ওপর অত্যাচার চালানো হয়।[1][3]

তদন্ত

এই ভয়ংকর ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন তদানিন্তন খুলনার মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। নিজেই মোড়েলগঞ্জে গিয়ে হেলিকে দোষী সাব্যাস্ত করে দীর্ঘ রিপোর্ট দেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে। হেলি পলায়ন করলে তার নামে গ্রেপ্তারি পরওয়ানাও জারী করেছিলেন তিনি। ততকালীন আমলে বঙ্কিমচন্দ্রকে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দেওয়ার ব্যবস্থা ও ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা করেছিল সাহেব হেলি। পনেরো বছর এই মামলা চলে এবং যশোর দায়রা আদালতে একজনের ফাঁসি, ৩৪ জনের দ্বীপান্তরের আদেশ হয়। দুর্ভাগ্য হেলিকে কেউ সনাক্ত করতে না পাড়ায় সে মুক্তি পেয়েছিল।[1]

তথ্যসূত্র

  1. ভারতের কৃষক বিদ্রোহ ও গনতান্ত্রিক সংগ্রাম, সুপ্রকাশ রায় (১৯৭২)। সুন্দরবন অঞ্চলের বিদ্রোহ। কলকাতা: ডিএনবিএ ব্রাদার্স। পৃষ্ঠা ৩৪১।
  2. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, প্রথম খন্ড (২০০২)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৪৬৩।
  3. "নীল বিদ্রোহের সুতিকাগার চৌগাছা"। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারী ২০১৮
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.