রক্তবীজ
রক্তবীজ হিন্দু ধর্মগ্রন্থ দেবীভাগবত পুরাণ ও মার্কণ্ডেয় পুরাণে বর্ণিত শুম্ভ ও নিশুম্ভের প্রধান সেনাপতি । মহাদেবের আশীর্বাদে মহাদানব রক্তবীজের শোণিত ধরনীতলে পতিত হইলেই এক নতুন রক্তবীজের সৃষ্টি হইত ।
দেবী কৌষিকীর সহিত যুদ্ধ
দেবীভাগবত পুরাণ ও মার্কেণ্ডেয় পুরাণে বর্ণিত কাহিনী অনুসারে যখন শুম্ভ ও নিশুম্ভ ত্রিলোক বিজয় করে ঋষিদের অত্যাচার ও দেবতাদের স্বর্গচ্যুত করে তখন দেবতারা মহামায়ার স্তব করেন । দেবতার স্তুতিতে প্রসন্ন হয়ে পার্ব্বতীর গাত্র কোষ হইতে পরম তেজস্বী, পরম রূপবতী নারীর আবির্ভাব হয় । পার্ব্বতীর কোষ হইতে সমুৎপন্ন বলিয়া সেই মহাকায়া দেবী কৌষিকী নামে বিখ্যাতা হয় । দেবী কৌষিকী রূপভেদে দুর্গা । আর দেবী পার্ব্বতীর গাত্রবর্ণ কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করে বলিয়া দেবী কালীকা নামে বিখ্যাতা হন । দেবতাদের অভয় প্রদান করে দেবী কৌষিকী, শুম্ভ ও নিশুম্ভ বধের নিমিত্ত রণক্ষেত্রে গমন করেন। রক্তবীজ সমরক্ষেত্রে অবতরণ করে দেবীর সহিত যুদ্ধাভিলাষে উদ্যত হয় । দেবী খড়্গ প্রহারে রক্তবীজের মুণ্ডছেদন করে । অনন্তর মহাসুরের শোণিতধারা ভূমিতলে পতিত হয় ও পতিত রুধি হইতে সহস্র রক্তবীজের সৃষ্টি হয় । দেবী কখনও খড়্গ কখনও শূল প্রহারে নবসৃষ্ট রক্তবীজের দেহ বিদারণ করিল কিন্তু নবসৃষ্ট সহস্র রক্তবীজের শোণিতধারা হইতে পূর্ব্বের ন্যায় অযুত লক্ষাধিক নতুন অসুরের সৃষ্টি হইল । অনন্তর রণভূমি রক্তবীজে পরিব্যপ্ত হইয়া উঠিল । সেই মহাসুরকে দমন করা দুসাধ্য জ্ঞাত হইয়া সেই মহাদেবী কৌষিকী, প্রলয়কারী দেবী কালীকাকে আহ্বান করেন । রণক্ষেত্রে কালীকা দেবি অবতরণ হইবামাত্র দেবীকে আদেশ করিয়া কহিলেন, কালী তোমার জিহ্বা বিস্তার করিও, আমি রক্তবীজের দেহ বিদারণ করিবামাত্র তুমি মহাসুরের রক্ত পান করিও । এইরূপে রক্তবীজের রক্ত ধরনীতলে পতিত না হওয়ায় ফলে নতুন রক্তবীজ সৃষ্টি হইবে না । দেবী রক্তবীজের হনন করিবামাত্র কালীকা দেবীও সেই শোণিতধারা পান করে ফলে সকল রক্তবীজের বিনাশ হয় ।