মুহাম্মদ বিন তুগলক
মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ (আরবিঃمحمد بن تغلق), (অপর নামঃ শাহজাদা ফখর মালিক, জুনা খান) ১৩২৫ থেকে ১৩৫১ সাল পর্যন্ত মুহাম্মদ রাজবংশের শাসক ও দিল্লির সুলতান ছিলেন। মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন তুগলকের জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন। ১৩২৫ সালে তার বাবা গিয়াসউদ্দিন তুগলকের মৃত্যু হলে তিনি সিংহাসনে আরোহন করেন। মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ যুক্তি, দর্শন, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞানে একজন পন্ডিত ছিলেন এবং শারিরীক বিজ্ঞান এবং ঔষধবিজ্ঞানে তার ভাল ধারণা ছিল । এছাড়াও তুর্কিশ, আরবি, ফার্সি এবং উর্দু ভাষা তার আয়ত্তে ছিল।[1] মুলতানে জন্মগ্রহণকারী তুগলক বংশের এই শাসক সম্ভবত মধ্যযুগের সবচেয়ে শিক্ষিত, যোগ্য ও দক্ষ্য সুলতান ছিলেন তবে তার পাগলাটে এবং পাশবিক আচরনের কারনেও তার কূখ্যাতি রয়েছে। তার শাসন আমলেই মরোক্কোর বিশ্ববিখ্যাত ভ্রমণকারী ইবন বতুতা তার সম্রাজ্য ভ্রমণ করেন।[2]
মুহাম্মদ বিন তুগলক | |
---|---|
দিল্লির সুলতান | |
রাজত্বকাল | ১৩২৫-১৩৫১ |
মৃত্যু | সিন্ধু,পাকিস্তান |
সমাধিস্থল | দিল্লি |
পূর্বসূরি | গিয়াসউদ্দিন তুগলক |
উত্তরসূরি | ফিরোজ শাহ তুগলক |
রাজবংশ | তুগলক রাজবংশ |
ধর্মবিশ্বাস | ইসলাম |
সাম্রাজ্যের ভেঙে পড়া
মুহাম্মদ বিন তুগলক ১৩৫১ সালে বর্তমান পাকিস্তানের সিন্ধু রাজ্যের ঠাট্টা অঞ্চলে সুমরু গোষ্ঠির সাথে যুদ্ধে মৃত্যুবরন করেন। তার জীবিত থাকা অবস্থাতেই তার রাজ্যে ভাঙনের সূত্রপাত হয়। তার রাজত্বকালেই দাক্ষিনাত্যের মালভূমি অঞ্চল তার রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তৎকালীন দক্ষিণ ভারতের কিছু অংশের শাসক প্রলয়ভেমা রেড্ডি ও মুসুনুরি কাপানিডু তাদের নিজ নিজ শাসিত অঞ্চল দিল্লির অধীন থেকে মুক্ত করাতে সক্ষন হন। এতে করে দিল্লির অধীনস্থ অন্যান্য অঞ্চলসমূহের শাসক এবং তাদের গভর্নরদের কাছে দিল্লির মর্যাদা কমে যায় এবং ভাঙন অবশ্যম্ভাবি হয়ে পড়ে।
মুদ্রা ব্যাবস্থা
মুহাম্মদ বিন তুগলক তৎকালীন সমসাময়িক অন্যান্য সম্রাজ্যের মত মুদ্রা ব্যাবস্থা চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তার পূর্বসূরীদের চেয়েও অনেক বেশি মুদ্রা বাজারে ছাড়েন। তার চালুকৃত স্বর্নমূদ্রাগুলি ওজনে অন্যান্য মুদ্রার চেয়ে অনেক ভারী ছিল এবং আরবি হরফের ক্যালিগ্রাফি সংযুক্ত ছিল। এই মুদ্রাকে বলা হত “টংকা”। তিনি রূপার মুদ্রাও চালু করেছিলেন যা “আধুলি” নামে পরিচীত ছিল কিন্তু চালুর সাত বছরের মধ্যে জনগনের কাছে এর অগ্রহণযোগ্যতার জন্য তুলে নিতে বাধ্য হন। মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ কাগজে ছাপা মুদ্রা চালু করার পরিকল্পনা করেছিলেন কিন্তু কিছু প্রভাবশালী প্রজা এবং কয়েকজন সভাসদের বিরোধিতার মুখে তিনি এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে বাধ্য হন।
ধর্মনীতি
মুহাম্মদ বিন তুগলকের ধর্মনীতি অনেক উদারপন্থি ছিল। তার রাজত্বে হিন্দু, মুসলিম এবং অন্যান্য ধর্মের লোকেরা নির্বিঘ্নে বসবার করতেন। হিন্দু এবং অন্যান্য ধর্মের প্রসারে তিনি যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতা করতেন।
তুগলকি কান্ড
বাংলায় "তুগলকি কান্ড" নামে যে বাগধারাটি রয়েছে তার উৎপত্তি মূলত মুহাম্মদ বিন তুগলকের আজব কান্ড কারখানা থেকেই। তিনি অধিকাংশ সময়ই লঘু পাপে গুরু দন্ড দিতেন এবং এর থেকে ধনী, গরীব, মুক্ত কিংবা কৃতদাস কেউই রেহাই পেতেন না। এছাড়াও তার আচরন ছিল রহস্যময়। কথিত আছে একবার কিছু প্রজা তার নামে বিদ্রুপপূর্ন আজেবাজে কথা লিখে খামে ভরে শহরে প্রচার করেছিল এবং তার দরবার হলের দিকে ছুড়ে মেরেছিল। এতে করে তিনি ক্ষিপ্ত হন এবং সিদ্ধান্ত নেন দিল্লি থেকে সব প্রজাদের বের করে দিবেন। শহরে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা দেওয়া হল আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রজাদেরকে শহর খালি করে দিতে হবে। এর ফলে বেশিরভাগ মানুষ ভয়ে শহর ছেড়ে চলে গেলেও অনেকে আত্নগোপন করে থাকল। সময়সীমা পার হলে তিনি শহর তল্লাশি করার হুকুম দেন এবং যাদের পাওয়া যায় তাদের হয় হত্যা করা হয় নাহয় টেনে হিঁচড়ে পার্শবর্তী শহর দৌলতাবাদে রেখে আসা হয়। পুরো শহর ফাঁকা হয়ে যাওয়ার পর একদিন তিনি তার প্রাসাদের ছাদে উঠে যখন দেখলেন যে শহরের কোথাও আগুন জ্বলছে না তখন তিনি বলে ওঠেন "এখন আমার মন শান্ত হয়েছে, রাগ কমেছে"[3]
গ্যালারি
- মুহাম্মদ বিন তুগলকের সময়কার একটি রৌপ্য মূদ্রা
তথ্যসূত্র
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৭ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মে ২০১৩।
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৪ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মে ২০১৩।
- পৃষ্ঠা ১৫৮, "ট্রাভেলস অব ইবন বতুতা" এইচ আর এ গিব, ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ ইফতেখার আমিন। আইএসবিএন ৯৮৪-৭৭৬-২৮৭-২
পূর্বসূরী গিয়াস উদ দিন তুগলক |
দিল্লির সুলতান ১৩২৫–১৩৫১ |
উত্তরসূরী ফিরোজ শাহ তুগলক |
নতুন রাজবংশ | তুগলক রাজবংশ ১৩২০–১৩৮৮ |