মোঃ মোজাম্মেল হক
মো. মোজাম্মেল হক (জন্ম:১৬/১০/১৯৪৬- মৃত্যু: ২৭ ডিসেম্বর, ২০০০ ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [1]
মো. মোজাম্মেলন হক | |
---|---|
মৃত্যু | ২৭ ডিসেম্বর, ২০০০ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ![]() ![]() ![]() |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
মো. মোজ্জাম্মেল হকের জন্ম চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার মায়ানী ইউনিয়নের মায়ানী গ্রামে। তার বাবার নাম মনির আহম্মদ সওদাগর এবং মায়ের নাম সখিনা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম নাজমা আক্তার। তাদের তিন মেয়ে ও এক ছেলে।
কর্মজীবন
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে চাকরি করতেন মো. মোজ্জাম্মেল হোসেন। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল জয়দেবপুরে। তখন তার পদবি ছিল হাবিলদার। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধ যুদ্ধশেষে প্রথমে যুদ্ধ করেন ৩ নম্বর সেক্টরে। পরে এস ফোর্সের অধীনে। বেশ কয়েকটি যুদ্ধে তিনি অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত হরষপুর, জেলা সদর থেকে উত্তরে, হবিগঞ্জ জেলার সীমান্তের কাছে রেলসেতু। আর ঘটনাটি ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষ ভাগে। মুক্তিযোদ্ধারা সফলভাবে এ রেলসেতু ধ্বংস করেছেন। কয়েক দিন পর একদিন খবর এল, পাকিস্তানি সেনারা সেই সেতু মেরামত শুরু করছে। ভারতে মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে সিদ্ধান্ত হলো পাকিস্তানি সেনাদের ওই প্রচেষ্টা যেকোনো মূল্যে নস্যাৎ করতে হবে। তারপর শুরু হলো প্রস্তুতি। এই অপারেশনের জন্য দলে অন্তর্ভুক্ত হলেন মো. মোজাম্মেল হকসহ ৩৫-৩৬ জন। তাদের নেতৃত্বে হেলাল মোরশেদ । তারা রওনা হলেন ভারত থেকে। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে রাতে পৌঁছলেন সেতুর দুই-আড়াই মাইল দূরে। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ভারী অস্ত্র বলতে একটি মেশিনগান ও একটি তিন ইঞ্চি মর্টার। বাকি সব এলএমজি, এসএমজি ও রাইফেল। সকাল হওয়ার পর জঙ্গলের ভেতর দিয়ে রওনা হলেন লক্ষ্যস্থলে। ঘণ্টা খানেকের মধ্যে. পৌঁছে গেলেন গন্তব্যস্থলে। জঙ্গল থেকেই মুক্তিযোদ্ধরা দেখতে পেলেন বিহারি- রেলকর্মীরা সেতু মেরামত করছে। বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার সেখানে পাহারায় নিয়োজিত। তারা সবাই নিশ্চিন্ত মনে এবং কিছুটা শিথিল অবস্থায়। অধিনায়ক নির্দেশ দেওয়ামাত্র মো. মোজাম্মেল হক ও তার সহযোদ্ধাদের অস্ত্র একযোগে গর্জে উঠল। মেশিনগান ও অন্যান্য অস্ত্র থেকে তারা প্রচণ্ড গুলিবর্ষণ করলেন। মুক্তিযোদ্ধারা দিনের বেলায় সেখানে আক্রমণ করবেন পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার ও রেলকর্মীরা কল্পনাও করেনি। হতভম্ব সেনা ও রাজাকারেরা কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই বেশির ভাগ লুটিয়ে পড়ল। রেলকর্মীদেরও একই দশা হলো। রেলসেতু থেকে ভেসে আসতে থাকল আর্তচিৎকার। পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারেরা প্রতিরোধের কোনো সুযোগই পেল না। মুক্তিযোদ্ধাদের অপারেশন শেষ হলো এক তরফাভাবে, কোনো গুলিবিনিময় ছাড়াই। পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারেরা পাল্টা আক্রমণ করার সুযোগই পায়নি। আক্রমণে বেশির ভাগ পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার ও রেলকর্মী নিহত এবং বাকিরা আহত হয়। এই অপারেশনে মো. মোজ্জাম্মেল হক যথেষ্ট দক্ষতা ও সাহসের পরিচয় দেন। অপারেশন শেষে মুক্তিযোদ্ধরা চলে যান নিরাপদ স্থানে।