মূল্য সংযোজন কর
মূল্য সংযোজন কর (ইংরেজি: Value Added Tax, বা VAT), সংক্ষেপে মূসক, বিংশ শতাব্দীতে উদ্ভাবিত একটি আধুনিক কর যা যেকোনো ব্যবসায়ের মাধ্যমে সৃষ্ট মূল্য সংযোজনের ওপর আরোপ করা হয়ে থাকে। দেশীয় পণ্য উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রয়, বিদেশী পণ্য আমদানী ও রপ্তানী, দেশাভ্যন্তরে সেবা বা পরিষেবার উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রয় ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে মূল্য রপ্তানী কর আরোপযোগ্য। এই কর উৎপাদন থেকে খুচরা বিক্রয় পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে আরোপ ও আদায় করা হলেও এর দায়ভার চূড়ান্তভাবে কেবল পণ্য বা সেবার ভোক্তাকে বহন করতে হয়। মূসক আরোপের মাধ্যমে আবগারী শুল্ক, বিক্রয় কর ইত্যাদির প্রয়োজনীয়তা দূর হয়েছে।
মূল্য সংযোজন কর বিধিমালা
আদর্শ মূসক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য
ক) করযোগ্য পণ্য সরবরাহ ও সেবা প্রদানের প্রত্যেক পর্যায়ে অর্জিত মূল্য সংযোজনের (Added Value) উপর কর আরোপ ও আদায় করা হয় বিধায় মূসক একটি হিসাব ভিওিক এবং করের পৌনঃপুনিকতা মুক্ত ব্যবস্হা।
খ) এ কর ব্যবস্থা প্রধানত এক হার বিশিষ্ট (single rated)।
গ) করযোগ্য পণ্য বা সেবা সরবরাহের প্রতিটি স্তরে প্রকৃত মূল্য সংযোজনের উপর কর আদায় নিশ্চিতকল্পে এ কর ব্যবস্হায় ভিওিমূল্য হিসবে ইনভয়েস ভিওিক বিনিময় মূল্য Transaction price তথা বাজারমূল্যকে ব্যবহার করা হয়।
ঘ) এতে ট্যারিফ মূল্য বা সংকুচিত ভিত্তিমূল্যের কোন স্বীকৃতি নেই।
ঙ) এ করের ভার বা বোঝা চূড়ান্তভাবে চূড়ান্ত ভোক্তা বহন করে বিধায় একে ভোক্তাকর ব্যবস্থা বলা হয়।
চ) এ কর ব্যবস্থায় ছোট ব্যবসায়ীদের করের আওতামুক্ত রাখা হয় অথবা টার্নওভার কর নামে অতি সামান্য কর হারের অধীন করা হয়।
বিভিন্ন দেশে মূল্য সংযোজন কর
বাংলাদেশ
বাংলাদেশে ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মূল্য সংযোজন কর ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। প্রথমে অল্প কিছু পণ্যের স্থানীয় উৎপাদন ওপর মূসক আরোপ করা হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে অধিকাংশ পণ্য এবং বেশ কিছু সেবা-পরিষেবা, আমদানী, পাইকারী ও খুচরা বিক্রয় প্রভৃতি মূল্য সংযোজন করের আওতায় আনা হয়েছে। কালক্রমে মূসক সরকারের কর রাজস্ব, এর অন্যকম প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মূল্য সংযোজন করের হার নির্ধারণ এবং এর আদায় ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নের দায়িত্বে নিযুক্ত।