মাইক্রোকন্ট্রোলার
ইংরেজী শব্দ 'Micro' অর্থ ছোট এবং 'Controller' অর্থ নিয়ন্ত্রণকারী। মাইক্রোকন্ট্রোলার কোনো প্রক্রিয়া বা ডিভাইসকে নিয়ন্ত্রণকারী ছোট আকারের একটি কম্পিউটার। এটি VLSI (Very Large Scale Integration) প্রযুক্তিতে একক চিপে (Single Chip) জটিল সিকুয়েন্সিয়াল লজিক সার্কিটে তৈরি ছোট, প্রোগ্রামযোগ্য (Programmable) ও সর্বজনীন কম্পিউটার। এটি মূলত একটি আইসি (IC, Integrated Circuit), যাতে ডেস্কটপ কম্পিউটারের প্রায় সকল অংশই বিদ্যমান। মাইক্রোকন্ট্রোলারের অভ্যন্তরে ন্যূনতম নিম্নলিখিত উপাদানসমূহ থাকে।
- একটি কম্পিউটার প্রসেসর, যা প্রোগ্রাম সম্পাদন করে;
- একটি ছোট র্যাম(RAM), যা প্রোগ্রাম চলাকালীন চলকের উপাত্ত সংরক্ষণ করে;
- একটি ছোট রম(ROM), যা প্রোগ্রাম সংরক্ষণ করে;
- ইনপুট/আউটপুট ডিভাইস পোর্ট, যা বাহ্যিক সংযোগের সাথে মাইক্রোকন্ট্রোলারের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করে।

মাইক্রোকন্ট্রোলার (Microcontroller)


প্রযুক্তির উন্নতির কারণে মাইক্রো-ইলেকট্রনিক প্রযুক্তিতে ডিভাইসে সার্কিট সংযোগের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আধুনিক মাইক্রোকন্ট্রোলারে একটি পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটারের প্রায় সব অংশই, যেমন এডিসি(ADC), ডিএসি(DAC), টাইমার, মনিটর প্রোগ্রাম, ইন্টারাপ্ট কন্ট্রোল, সিরিয়াল ইনপুট/আউটপুট ইত্যাদি সংযোজিত থাকে। যদিও মাইক্রোকন্ট্রোলার একটি প্রোগ্রামযোগ্য ডিজিটাল প্রসেসর, তবুও কিছু কিছু অ্যানালগ ইনপুট/আউটপুট সংযোজন একে অ্যানালগ ও ডিজিটাল প্রকৃতির মিশ্রপ্রণালীতে রূপান্তর করে। এটির অধিকাংশ পিনকে ব্যবহারকারী কর্তৃক প্রোগ্রামযোগ্য করা যায়। এটির অনেক বিট নিয়ন্ত্রণকারী নির্দেশনা আছে, যা ব্যবহারকারীর কাছে সহজে বোধগম্য। এছাড়াও এটি বুলিয়ান ফাংশনও সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটিকে এক বা একাধিকবার প্রোগ্রাম করা যায়। কোনো কোনো মাইক্রোকন্ট্রোলারকে একটি বিশেষ প্রয়োগের জন্য শুধুমাত্র একবার প্রোগ্রাম করা হয়। আবার কোনো কোনোটিকে একাধিক বার প্রোগ্রাম করা হয়, যাতে বিভিন্ন কাজে বার বার ব্যবহার করা যায়। মাইক্রোকন্ট্রোলারে প্রোগ্রাম রম বা ইপিরম এ স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করে রাখা হয় এবং এই কাজের জন্য একটি মাইক্রোকম্পিটার প্রোগ্রাম লিখন বা পরীক্ষণের জন্য হোস্ট সিস্টেম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। একটি সিরিয়াল লিংকের মাধ্যমে হোস্ট সিস্টেম থেকে প্রোগ্রাম সিস্টেমে (মাইক্রোকন্ট্রোলার সার্কিটে) স্থানান্তর করা হয়। একটি মাইক্রো কম্পিটারের অভ্যন্তরে নূন্যতম প্রসেসর, মেমরি, I/O পোর্ট সন্নিহিত থাকে।
মাইক্রোকন্ট্রোলারের প্রকারভেদ
মেমরি গঠন, প্রসেসিং ওয়ার্ডের আকার, মেমরি ডিভাইস এবং নির্দেশনা সেটের উপর ভিত্তি করে মাইক্রোকন্ট্রোলারকে নিম্নলিখিত ভাগে বিভক্ত করা যায়ঃ প্রসেসিং ওয়ার্ডের আকারের উপর ভিত্তি করে---
- ৪-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার,
- ৮-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার,
- ১৬-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার,
- ৩২-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার ।
মেমরি ডিভাইসের উপর ভিত্তি করে---
- সংযোজিত মেমরি মাইক্রোকন্ট্রোলার,
- বাহ্যিক মেমরি মাইক্রোকন্ট্রোলার ।
নির্দেশনা সেটের উপর ভিত্তি করে---
- কমপ্লেক্স নির্দেশনা সেট কম্পিউটার,
- রিডাকড নির্দেশনা সেট কম্পিউটার ।
মেমরি গঠনের উপর ভিত্তি করে---
- ভন-নিউম্যান আর্কিটেকচার মাইক্রোকন্ট্রোলার,
- হার্ভার্ড আর্কিটেকচার মাইক্রোকন্ট্রোলার ।
মাইক্রোকন্ট্রোলাররের প্রয়োগক্ষেত্র
কোনো ডিভাইসের অভ্যন্তরে মাইক্রোকন্ট্রোলারের উপস্থিতি ডিভাইসকে স্মার্ট করে। নিচেয় মাইক্রোকন্ট্রোলারের প্রয়োগক্ষেত্র সমূহ উল্লেখ করা হলোঃ
- সুপার মার্কেট--- ক্যাশ রেজিস্টার, ওজন মাপার যন্ত্র ইত্যাদি।
পরিমাণ এবং খরচ
২০০২ সালে বিশ্বে বিক্রিত সিপিইউ এর মধ্যে প্রায় ৫৫% ছিল ৮-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার এবং মাইক্রোপ্রসেসর। [2]
তথ্যসূত্র
- প্রকৌশলী মৃদুল কান্তি দেবনাথ । মাইক্রোকন্ট্রোলার অ্যান্ড ইমবেডেড সিস্টেমস । হক পাবলিকেশন্স (৩৮ বাংলাবাজার (২য় তলা), ঢাকা-১১০০)। দ্বিতীয় সংস্করণ ঃ ১৫ জানুয়ারি ২০১৫ । পৃষ্ঠা ঃ ১৮-৩৫ ।
- Turley, Jim (২০০২)। "The Two Percent Solution"। Embedded (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৭-১১।