মতিলাল রায়

মতিলাল রায় (৫ জানুয়ারি ১৮৮৩ - ১০ এপ্রিল ১৯৫৯) একজন বাঙালি বিপ্লবী। জন্ম বোড়াইচন্ডীতলা, চন্দননগর, হুগলী। পিতা বিহারীলাল সিংহ রায়। তিনি উত্তরপ্রদেশের চৌহান বংশীয় ছেত্রী রাজপুত ছিলেন।

মতিলাল রায়
মতিলাল রায়
জন্ম৫ জানুয়ারি ১৮৮৩
বোড়াইচন্ডীতলা, চন্দননগর, হুগলী, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু১০ এপ্রিল ১৯৫৯
আন্দোলনভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন

প্রারম্ভিক জীবন

মতিলাল ফ্রী চার্চ ইনস্টিটিউশনে শিক্ষালাভ করেন। জজ হেল্ডারসনের অফিসে কাজ করতেন। একমাত্র শিশুকন্যার মৃত্যুতে সস্ত্রীক বৈষ্ণবধর্মমতে দীক্ষা নিয়েছিলেন এবং ১৯০২ সালে সতপন্থাবলম্বী সম্প্রদায় গঠন করে দরিদ্র নারায়ন সেবায় নিয়োজিত হন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে যোগ দেন। পরের বছরই সস্ত্রীক ব্রহ্মচর্যে দীক্ষিত হন[1]

বিপ্লবী আন্দোলনে

মতিলাল রায়ের বাড়ি ছিল অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের আশ্রয়স্থল ও তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম পরামর্শদাতা। বিপ্লবী শহীদ কানাইলাল দত্ত থেকে শুরু করে রাসবিহারী বসু, শ্রীশচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ তার কাছে নিয়মিত আসতেন। ফরাসী অধিকৃত চন্দননগরে ব্রিটিশ পুলিশের বাধা নিষেধ ছিল। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বহু বিপ্লবী মতিলালের গৃহে আশ্রয় নিতেন। ঋষি অরবিন্দ ঘোষ ১৯১০ সালে তার কাছে আত্মগোপন করে ছিলেন। এসময় তাকে ভক্তি, কর্ম, মহাযোগে দীক্ষিত করেন মতিলাল। বিশ্বাসঘাতক নরেন গোঁসাইকে হত্যার জন্যে আগ্নেয়াস্ত্র জোগাড় করে কানাইলালকে পাঠান মতিলাল। বারীন্দ্রকুমার ঘোষের দল ভেঙ্গে গেলেও শ্রীশ ঘোষ, অমর চট্টোপাধ্যায় ও বাবুরাম পরাকরের সাহায্যে বিপ্লবী সংগঠনের কাজ এগিয়ে নিয়ে যান তিনি[2][3]

প্রবর্তক সংঘ

মতিলাল রায় ১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন প্রবর্তক সংঘ যার মুখপত্র ছিল 'প্রবর্তন' পত্রিকা। প্রবর্তক সংঘ হয়ে উঠেছিল সারা ভারতের বিপ্লবীদের আশ্রয়স্থল। বাংলা তথা ভারতের সশস্ত্র বিপ্লবীরা কোনো না কোনো সময় এখানে গোপনে এসেছেন। মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের সময় অনেকে প্রবর্তক বিদ্যাপীঠে যোগ দেন। ১৯২৫ সালে মতিলাল সংঘ গুরু পদে বৃত হন। ১৯২৯ সালে তার পত্নী রাধারানী দেবীর মৃত্যু হলে নিজেকে সক্রিয় আন্দোলনের পথ থেকে সরিয়ে সমাজসেবায় মন দেন[1]। জাতীয়তাবাদী ঐতিহ্য ও চেতনা সম্বলিত প্রবর্তক সংঘের শাখা অধুনা বাংলাদেশের চট্টগ্রামেও বর্তমান[2][4]

মতিলাল রায়ের বাড়ি ও প্রবর্তক সঙ্ঘ
মতিলাল রায়ের মূর্তি

সমাজসেবা

সংঘ ও জাতিকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে প্রবর্তক ট্রাস্ট গঠন। এই ট্রাস্টের পরিচালনায় গ্রন্থাগার, পাঠশালা, বেসিক স্কুল, ছাত্র ছাত্রী আবাস, বৃদ্ধাশ্রম, মহিলা সদন, প্রকাশনা সংস্থা, সমবায়, ছাপাখানা-সংক্রান্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জুট মিল ইত্যাদি স্থাপিত হয়। সংঘের মুখপত্র প্রবর্তক পত্রিকা সম্পাদনা করতেন অপর এক প্রবীন বিপ্লবী মণীন্দ্রনাথ নায়েক

প্রবর্তক সংঘ গ্রন্থাগার

মৃত্যু

বিপ্লবী ও সমাজসেবক মতিলাল রায় ১০ এপ্রিল, ১৯৫৯ সালে মারা যান।

তথ্যসূত্র

  1. প্রথম খন্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত (২০০২)। বাঙালি সংসদ চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৩৯০, ৩৯১। আইএসবিএন 81-85626-65-0।
  2. ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী (মহারাজ) (১৯৮১)। জেলে ত্রিশ বছর ও পাক ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম। কলকাতা: মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ স্মৃতি রক্ষা কমিটি। পৃষ্ঠা ৩২৭, ৩২৮।
  3. নারায়ন সান্যাল (১৯৭৯)। আমি রাসবিহারীকে দেখেছি। কলকাতা: করুনা প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৬৯।
  4. বিশ্বজিত চৌধুরী (৯.১২.২০১০)। "নগর দর্পন"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৩১.১২.২০১৬ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.