ব্রাসিলিয়া
ব্রাসিলিয়া বা স্থানীয় ব্রাজিলীয় পর্তুগিজ উচ্চারণে ব্রাজিলিয়া (Brasília) দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম রাষ্ট্র ব্রাজিলের মধ্য-পশ্চিম প্রশাসনিক অঞ্চলে একটি বিশেষ কেন্দ্রশাসিত জেলাতে অবস্থিত নগরী ও জাতীয় রাজধানী। শহরটি একটি সাভানা তৃণভুমি অঞ্চলে সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ১০০০ মিটার উচ্চতায়, পারানা নদীর কাছে অবস্থিত। এর জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ ও শুষ্ক প্রকৃতির। ব্রাজিলিয়া আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত শ্বেতবর্ণ ভবনে পূর্ণ একটি শহর। শহরটিকে ১৯৫৭ সালে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয় এবং ১৯৬০ সাল থেকে এটি ব্রাজিলের জাতীয় রাজধানী। জাতীয় রাজধানী হিসেবে জনবহুল রিও ডি জানেইরো (স্থানীয় ভাষায় রিউ দি জানেইরু) শহরকে প্রতিস্থাপন করতে সেখান থেকে ৯৬০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত একটি জনবিরল স্থানে ব্রাসিলিয়া শহরটিকে নির্মাণ করা হয়। মূল ব্রাসিলিয়া শহরে বর্তমানে ৩০ লক্ষেরও বেশি লোকের বাস।[1] বৃহত্তর ব্রাসিলিয়া মহানগর এলাকাতে ৪৩ লক্ষ লোকের বাস। জনসংখ্যার বিচারে এটি ব্রাজিলের ৩য় বৃহত্তম মহানগরী। ব্রাসিলিয়া ব্রাজিলের সবচেয়ে ধনবান শহর। এখানে মাথাপিছু আয় (স্থুল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন) প্রায় ২২ হাজার মার্কিন ডলার, যা শুধু ব্রাজিল নয়, লাতিন আমেরিকার সব নগরীর মধ্যে সর্বোচ্চ। ব্রাসিলিয়ার জনগণ ব্রাজিলীয় পর্তুগিজ ভাষায় কথা বলে। এটি বিশ্বের পর্তুগিজভাষী রাজধানী শহরগুলির মধ্যে বৃহত্তম।
ব্রাসিলিয়া (ব্রাজিলিয়া) Brasília | |||
---|---|---|---|
কেন্দ্রশাসিত রাজধানী | |||
Região Administrativa de Brasília (রেজিয়াঁউ আদমিনিস্ত্রাতিভা দি ব্রাজিলিয়া) ব্রাসিলিয়া প্রশাসনিক অঞ্চল | |||
![]() উপর থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে: Monumental Axis seen from the TV Tower; Metropolitan Cathedral at night; facade of the Alvorada Palace; Juscelino Kubitschek bridge in Paranoá Lake; buildings of the South Banking Sector and the National Congress building with the national mast in the Three Powers Plaza at the background. | |||
| |||
নীতিবাক্য: "Venturis ventis"(Latin) "To the coming winds" | |||
![]() Location in the Federal District | |||
লুয়া ত্রুটি মডিউল:অবস্থান_মানচিত্ এর 479 নং লাইনে: নির্দিষ্ট অবস্থান মানচিত্রের সংজ্ঞা খুঁজে পাওয়া যায়নি। "মডিউল:অবস্থান মানচিত্র/উপাত্ত/South America" বা "টেমপ্লেট:অবস্থান মানচিত্র South America" দুটির একটিও বিদ্যমান নয়।Location in Brazil | |||
স্থানাঙ্ক: ১৫°৪৭′৩৮″ দক্ষিণ ৪৭°৫২′৫৮″ পশ্চিম | |||
Country | ![]() | ||
প্রশাসনিক অঞ্চল | মধ্য-পশ্চিম | ||
রাজ্য / জেলা | ![]() | ||
Founded | April 21, 1960 | ||
আয়তন | |||
• কেন্দ্রশাসিত রাজধানী | ৫৮০২ কিমি২ (২২৪০.১৬৪ বর্গমাইল) | ||
উচ্চতা | ১১৭২ মিটার (৩৮৪৫ ফুট) | ||
জনসংখ্যা (2017) | |||
• জনঘনত্ব | ৪৮০.৮২৭/কিমি২ (১২৪৫.৩৪/বর্গমাইল) | ||
• পৌর এলাকা | ৩০,৩৯,৪৪৪[1][note 1] | ||
• মহানগর | ৪২,৯১,৫৭৭[2] | ||
population of the Federal District | |||
বিশেষণ | Brasiliense | ||
GDP | |||
• Year | 2015 estimate | ||
• Total | $65.338 billion (8th) | ||
• Per capita | $21,779 (1st) | ||
HDI | |||
• Year | 2014 | ||
• Category | 0.839 very high (1st) | ||
সময় অঞ্চল | BRT (ইউটিসি−03:00) | ||
Postal code | 70000-000 | ||
এলাকা কোড | +55 61 | ||
ওয়েবসাইট | www (পর্তুগিজ) | ||
প্রাতিষ্ঠানিক নাম | Brasilia | ||
ধরন | Cultural | ||
মানক | i, iv | ||
অন্তর্ভুক্তির তারিখ | 1987 (11th session) | ||
রেফারেন্স নং | 445 | ||
Region | Latin America and the Caribbean |
ব্রাসিলিয়ার অর্থনীতি ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। শহরের বেশির ভাগ শ্রমিক ও চাকুরিজীবী সরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। শ্রমিকদের একটি বড় অংশ শহরের নির্মাণ খাতে নিয়োজিত। মূল ব্রাসিলিয়া শহরের বাইরে দ্রুত বর্ধনশীল বেশ কিছু উপশহর বা লোকালয় গড়ে উঠেছে, যেগুলিতে সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও এখানকার বাণিজ্যিক জীবন অনেক বেশী প্রাণবন্ত। ব্রাসিলিয়া মহাসড়ক ব্যবস্থার মাধ্যমে বহুদূরে অবস্থিত অনেক বড় শহর যেমন বেলেঁ, বেলু ওরিজোঁতি এবং সালভাদরের সাথে সংযুক্ত। এছাড়া এটি রেলপথে ব্রাজিলের দুই বৃহত্তম নগরী সাঁউ পাউলো ও রিউ দি জানেইরু-র সাথে সংযুক্ত। শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আছে, যা ব্রাজিলের ৩য় ব্যস্ততম বিমানবন্দর। ব্রাসিলিয়া শহরের অভ্যন্তরের ভারী শিল্পকারখানা স্থাপন করার অনুমতি নেই, কেবল হালকা শিল্প। শহরে ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রাসিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় নাট্যশালা, মহানগর মহাগির্জা বা ক্যাথেড্রাল, উদ্ভিদ উদ্যান, চিড়িয়াখানা ও একটি ক্রীড়াক্ষেত্র বা স্টেডিয়াম আছে।
ব্রাজিলের নেতারা ১৭৮৯ সালেই ব্রাজিলের রাজধানীকে রিউ দি জানেইরু থেকে সরিয়ে দেশের অভ্যন্তরভাগে স্থাপনের প্রস্তাব করেছিলেন। ১৮৯১ সালের ব্রাজিলের সংবিধানে ধারণাটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু ১৯৫৬ সালে জুসেলিনু কুবিচেক ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি হবার আগ পর্যন্ত এই ধারণাটি তেমন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। কুবিচেক বলেন যে রিউ দি জানেইরু অত্যন্ত জনবহুল, একে আক্রমণ করা খুব সহজ এবং এটি ব্রাজিলের অন্যান্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন। এছাড়া তিনি বলেন যে ব্রাজিলের জনবসতিবিরল অভ্যন্তরভাগে বসতি স্থাপনকে উৎসাহ প্রদান করা উচিত। একারণে কুবিচেক জোরের সাথে ব্রাজিলের অভ্যন্তরভাগে একটি নতুন রাজধানী শহর নির্মাণ করার ব্যাপারে মত দেন।
পরিকল্পনাবিদেরা ব্রাজিলের অভ্যন্তরভাগের বিভিন্ন অঞ্চলের ভূসংস্থান ও প্রাকৃতিক সম্পদ পর্যালোচনা করার পরে গোইয়াস প্রদেশের একটি এলাকাকে পছন্দ করে, কেননা এটি বেশ কিছু নদীর কাছে অবস্থিত (যেমন তোকানতিঁস, পারানা ও সাঁউ ফ্রাঁসিশকু নদীগুলি) এবং এখানে থেকে দেশের বাকী অংশে সহজে যাতায়াত করা সম্ভব। গোইয়াস প্রদেশ থেকে এলাকাটিকে বিচ্ছিন্ন করে কেন্দ্রশাসিত জেলার মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৯৫৬ সালে ব্রাজিলীয় স্থপতি ও পৌর পরিকল্পনাবিদ লুসিও কুশতা সামগ্রিক নগরীর পরিকল্পনা নির্মাণের একটি প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করেন। অন্যদিকে একই বছরে রাষ্ট্রপতি কুবিচেক বিখ্যাত ব্রাজিলীয় স্থপতি অস্কার নিমায়ারকে শহরের সরকারী ভবনগুলির নকশা নির্মাণের দায়িত্ব দেন। ১৯৫৭ সালে নতুন শহরের নির্মাণকাজ আরম্ভ হয়। ১৯৬০ সালের ২১শে এপ্রিল ব্রাসিলিয়াকে ব্রাজিলের নতুন রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যালয়গুলি শীঘ্রই রিউ দি জানেইরু পরিত্যাগ করে ব্রাসিলিয়াতে স্থানান্তরিত হতে শুরু করে। শুরুর দিকে শহরটি ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতার কারণে এবং বহু সরকারী কর্মচারীর তুচ্ছতাচ্ছিল্যমূলক মনোভাবের কারণে ঝামেলার শিকার হয়েছিল। কিন্তু দেশের অপেক্ষাকৃত দরিদ্র অঞ্চলগুলি থেকে মানুষ অভিবাসন করে ব্রাসিলিয়াতে আসা শুরু করলে শহরের কলেবর দ্রুত বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে শহরটি ব্রাজিলের অভ্যন্তরভাগ উন্নয়নের একটি আদর্শ প্রতিমা হিসেবে লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। তবে অনেকের মতে শহরটি মনুষ্য উষ্ণতাবিহীন, প্রাণহীন, যান্ত্রিক এবং এর ভেতরে যাতায়াত ও পরিবহন সহজ নয়। শহরকে ঘিরে রাখা মূলত শ্রমিক ও অভিবাসী জনগণ নিয়ে গঠিত অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা উপশহরগুলিই বরং অনেক জীবন্ত।
ব্রাসিলিয়া শহরটির সুশোভন, আধুনিক ভবনগুলি সারা বিশ্বের মধ্যে আধুনিকবাদী নগর পরিকল্পনার (১৯৪০-এর দশকে ফরাসি স্থপতি ও নগরপরিকল্পনাবিদ ল্য কর্বুজিয়ে যার গোড়াপত্তন করেন) একটি মাইলফলক উদাহরণ। ১৯৮৭ সালে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা বা ইউনেস্কো পরিকল্পিত রাজধানী নগরী হিসেবে সংস্কৃতি ও স্থাপত্যের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশেষ তাৎপর্যের অধিকারী হবার জন্য ব্রাসিলিয়াকে একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে মনোনীত করে। এই মনোনয়নের ফলে শহরের ভবন ও স্মারকস্তম্ভগুলির সংরক্ষণ নিশ্চিত হয়।
ব্রাসিলিয়া শহরটিকে ডানা মেলা উড়ন্ত ঘুঘু পাখির আকৃতিতে বিন্যস্ত করা হয়েছে, যা শান্তির প্রতীক। শহরের বাণিজ্যিক এলাকাগুলি, আবাসিক বাসভবনগুলি এবং ১২৪টি বৈদেশিক দূতাবাস এই প্রতীকী ঘুঘু পাখির ডানাতে অবস্থান করছে। অন্যদিকে ঘুঘু পাখির দেহতে জাতীয় কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যালয় ভবনগুলি অবস্থিত। সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলি, যেমন নির্বাহী ক্ষমতার প্রতিনিধি রাষ্ট্রপতির কার্যালয় (Palácio do Planalto), আইন বিভাগের প্রতিনিধি জাতীয় আইনসভার উভয় কক্ষ বা সংসদ ভবন (Congreso Nacional) এবং বিচার বিভাগের প্রতিনিধি সর্বোচ্চ আদালত (Supremo Tribunal Federal), এগুলি সবই "তিন শক্তির চত্ত্বর" (Praça dos Três Poderes) নামের এলাকাটিতে অবস্থিত; এলাকাটি আবার শহরের নকশার প্রতীকী ঘুঘু পাখির ঠোঁটের জায়গাটিতে, শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। শ্বেতবর্ণের মর্মর পাথরে নির্মিত রাষ্ট্রপতির বাসভবন বা প্রাসাদটিকে "প্রত্যুষের প্রাসাদ" নামে নামে ডাকা হয়; এটি শহরের পূর্বে অবস্থিত লাগু দু পারানোয়া হ্রদের পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত, যে হ্রদটি ব্রাসিলিয়া শহরকে তিন দিক থেকে (পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ) ঘিরে রেখেছে। পারানা নদীর উপর একটি বাঁধ স্থাপন করে কৃত্রিম এই হ্রদটিকে তৈরি করা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন রকমের জলক্রীড়ার সুবিধা আছে। ৪২০ হেক্টর আয়তনবিশিষ্ট সারা কুবিচেক পৌর উদ্যানে সাইকেল চালনার অনেক পথ আছে। শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপনাগুলির মধ্যে অন্যতম হল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভবনটি, যেটিকে দেখে মনে হয় যে এটি পরিপার্শ্বস্থ জলোদ্যানের উপরে ভাসমান। আরও আছে ভবিষ্যৎমুখী নকশায় নির্মিত মহানগর ক্যাথেড্রাল বা মহাগির্জা, যেটিকে কংক্রিটের তৈরি বাঁকানো-হেলানো অনেকগুলি স্তম্ভের উপরে বসানো রঙিন কাচ দিয়ে এমনভাবে সজ্জিত করা হয়েছে, যাতে এটিকে দেখতে যিশুখ্রিস্টের কাঁটার মুকুটের মত মনে হয়। ক্যাথেড্রালের পাশেই আছে ব্রাজিলের জাতীয় জাদুঘর (Museu Nacional), যেখানে শিল্পকলার সাময়িক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। ব্রাসিলিয়া টেলিভিশন সম্প্রচার কেন্দ্রের বুরূজ বা টাওয়ারের শীর্ষের পর্যবেক্ষণ মঞ্চ থেকে শহরের একটি পরিদৃশ্য অবলোকন করা সম্ভব।
ব্রাসিলিয়াতে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ফিফা ফুটবল বিশ্বশিরোপা প্রতিযোগিতার বেশ কিছু ম্যাচ, ২০১৬ সালের রিও দি জানেইরু গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক প্রতিযোগিতার কিছু ফুটবল ম্যাচ আয়োজন করা হয়।
পাদটীকা
- The administrative region of Brasília recorded a population of 214,529 in a 2012 survey; IBGE demographic publications do not make this distinction and considers the entire population of the Federal District.
তথ্যসূত্র
- "Estimativa Populacional 2013" (PDF)। Pesquisa Demográfica por Amostra de Domicílios 2011 (পর্তুগিজ ভাষায়)। Codeplan। নভেম্বর ৯, ২০১২। সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৫ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ৬, ২০১৫।
- IBGE: Brasília ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৭ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে IBGE. Retrieved on February 21, 2016. (পর্তুগিজ).
বহিঃসংযোগ
উইকিমিডিয়া কমন্সে ব্রাসিলিয়া সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন
ওপেনস্ট্রিটম্যাপে ব্রাসিলিয়া সম্পর্কিত ভৌগলিক উপাত্ত