বীজগাণিতিক সংখ্যাতত্ত্ব

বীজগাণিতিক সংখ্যাতত্ত্ব হলো সংখ্যাতত্ত্বের একটি শাখা, যেখানে বিমূর্ত বীজগণিতের কলাকৌশল ব্যবহার করে পূর্ণ সংখ্যা, মূলদ সংখ্যা এবং উহাদের সামান্যীকরণ অধ্যয়ন করা হয়৷ সংখ্যাতত্ত্ব সম্বন্ধীয় সমস্যাগুলি বীজগাণিতিক উদ্দেশ্যের ধর্মাবলী, যেমন বীজগাণিতিক সংখ্যার পাল্লা, পূর্ণ সংখ্যার চক্র, সমীম পাল্লা, বীজগাণিতিক অপেক্ষকের পাল্লা প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে অভিব্যক্ত হয়৷ কোনো বলয় অনন্য গুণকনির্ণয় মেনে চলে কিনা, আদর্শ পূর্ণতার মানের ধর্মাবলী, ফিল্ড তত্ত্ব ও গ্রুপ তত্ত্বর মাঝে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা প্রভৃৃতি ধর্মগুলি সংখ্যাতত্ত্বের প্রাথমিক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলির সমাধান করে৷ এটি ডায়োফ্যান্টাইন সমীকরণের মতো অনির্দিষ্ট বহুপদী সমীকরণের সমাধানের অস্তিত্ব প্রমাণ করে৷

আধুনিক বীজগণিতের সংখ্যাতত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে রচিত ডিসকুইজিসনস অ্যারিথমেটিক বইটির প্রথম সংস্করণের শিরোনাম পাতার চিত্র

বীজগাণিতিক সংখ্যাতত্ত্বের ইতিহাস

দাওফান্তাস বা ডায়োফ্যান্টাস

বীজগাণিতিক সংখ্যা তত্ত্বের শুরুর দিক খুঁজতে গেলে আমরা সর্বপ্রথম ডায়োফ্যান্টাইন সমীকরণ খুঁজে পাই৷ [1] খ্রিস্টীয় তৃৃতীয় শতকে এই সমীকরণের স্রষ্টা আলেকজান্দ্রিয়া শহরের খ্যাতনামা গণিতবিদ দাওফান্তাস এই ধরনের সমীকরণগুলি পর্যালোচনা করেন এবং তা সমাধানের কিছু সহজ পদ্ধতি বের করেন৷ একটি আদর্শ ডায়োফ্যান্টাইন সমীকরণে এমন দুটি পূর্ণ সংখ্যা X এলং Y বের করতে হয় যাদের যোগফল হলো একটি প্রদত্ত অঙ্কসংখ্যা A এবং তাদের পৃৃথক পৃৃৃথক বর্গের যোগফল অপর প্রদত্ত অঙ্কসংখ্যা B এর সমান৷

এই ডায়োফ্যান্টাইন সমীকরণটি আবিষ্কারের হাজার বছর পর অবধি এটি ব্যবহার ও প্রয়োগ হতে থাকে৷ উদাহরণ স্বরূপ, ডায়োফ্যান্টাইনের দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধানটি প্রসঙ্গে প্রদত্ত x2 + y2 = z2 সমীকরণটি ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ব্যবিলনের গণিতজ্ঞদের দ্বারা সমাধানকৃত পিথাগোরাস উপপাদ্যের পিথাগোরাসের ত্রৈধ বিশ্লেষণের মাধ্যমে করা হতো৷[2] 26x + 65y = 13 সমীকরণটির মতো রৈখিক ডায়োফ্যান্টাইন সমীকরণের সমাধান খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে আবিষ্কৃৃত ইউক্লিডীয় এলগরিদমের মাধ্যমে করা হতো৷[3]

দাওফান্তাসের মুখ্য কাজগুলির মধ্যে অন্যতম হলো অ্যরিথমেটিকা, বর্তমানে এটির মূলকার্যের খণ্ডাংশই খুঁজে পাওয়া যায়৷

ফের্মা

ফের্মার শেষ উপপাদ্য হলো গণিতজ্ঞ পিয়ের দ্য ফের্মার দ্বারা ১৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে "অ্যরিথমেটিকা" বইয়ের পাতার শেষপ্রান্তে করা বিখ্যাত একটি অনুমানকার্য৷ তিন দাবী করেন যে তিনি এমন কিছু প্রমাণ করেছিলেন যা বইয়ের প্রান্তে আঁটবার জন্য খুব বড়ো আকারের ছিলো৷ ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের আগে পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৫৮ বছর ধরে শতশত গণিতজ্ঞ বহুবার চেষ্টা করেও কোনো সাফল্যসূচক প্রমাণ প্রকাশ করতে অক্ষম হন৷ এই অমীমাংশিত সমস্যার ব্যবহার ঊনবিংশ শতকে বীজগণিতের সংখ্যাতত্ত্ব বিষয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমভাবে সাফল্য এনে দিয়েছিলো৷ বিংশ শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার মডিউলারিটি উপপাদ্য বিশ্লেষণ করতেও ফের্মার উপপাদ্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করে৷

গাউস

বীজগাণিতিক সংখ্যাতত্ত্বে অন্যতম প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বটি হলো, লাতিন ভাষায় জার্মান গণিতবিদ ও পদার্থবিজ্ঞানী কার্ল ফ্রিড‌রিশ গাউসের লেখা "ডিসকুইজিসনস অ্যারিথমেটিকা"৷[4] তত্ত্বটি তিনি ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ২১ বছর বয়সে লিখলেও তা ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে তার ২৪ বছর রয়সে প্রথম প্রকাশিত হয়৷ বইটিতে বিজ্ঞানী গাউস ফরাসি গণিতবিদ ফের্মা, সুইজারল্যান্ডীয় গণিতবিদ লেওনার্ড অয়লার, জোসেফ লুইস লাগরাঞ্জ, আন্দ্রেঁ মারি লজেন্ডার প্রমুখের সংখ্যা তত্ত্বের অবদান সমূহ একত্র করে নিজের কিছু গূরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তাতে যোগ করেন৷ তার এই একত্রিত সম্পাদনা প্রকাশনার পূর্বে সংখ্যাতত্ত্ব কিছু বিক্ষিপ্ত উপপাদ্য এবং অনুমানের ওপর নির্ভর ছিলো৷ গাউস তার কর্মগর পূর্বসূরীদের সমস্ত কাজ একত্রিত করে তার নতুন কাজে রূপ দেন, সেগুলিকে ছন্দবদ্ধ করে পর্যায়ক্রমে সাজান, তত্ত্বের শূণ্যস্থান পূরণ করেন, অমীমাংসিত সিদ্ধান্তগুলির পুণর্বিবেচনা করেন এবং বিষয়টিকে একাধিক পদ্ধতিতে প্রমাণ করার সফল চেষ্টা করেন৷

"ডিসকুইজিশন" বইটি ঊনবিংশ শতাব্দীতে গণিতের সংখ্যাতত্ত্ব বিষয়ক ভবিষ্যত গবেষণায় যথেষ্ট অবদান রেখেছিলো৷ ইউরোপীয় গণিতজ্ঞ আর্নস্ট কুমের, পিটার গুস্তাভ ল্যাজন ডিরিক্লে এবং রিচার্ড ডেডেকিন্ড প্রমুখের কাজে গাউসের প্রভাব প্রকৃৃষ্ট৷ গাঅসের এই তত্ত্বে দেওয়া বিভিন্ন পাদটীকা পরবর্তীকালে তার নিজের গবেষণায়ও কাজে লাগে, যার মধ্যে বেশকিছু অপ্রকাশিত রয়েছে৷ সমসাময়িককালে তার কিছু রহস্যজনক অপ্রকাশিত কার্যকলাপ বর্তমানে আমরা এল অপেক্ষক এবং জটিল বিবর্ধন নামে চিনি৷

ডিরিক্লে

১৮৩৮ থেকে ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দ এই দুবছরের গবেষণায় ফ্রান্সের গণিতজ্ঞ স্যার পিটার গুস্তাভ ল্যাজন ডিরিক্লে প্রথম দ্বিঘাত সমীকরণের শ্রেণী সংখ্যার সূত্রটি বিশ্লেষণ করে, যা পরে তার ছাত্র লিওপোল্ড ক্রনেকার দ্বারা পুণর্মূল্যায়ন করা হয়৷ জ্যাকোবি তার এর সূত্রটিকে সূক্ষ্ম বিচারশক্তির চরম পর্যায় (টাচিং দ্য আটমোস্ট অব হিউম্যান আকিউমেন) বলে উল্লেখ করেন, যা সংখ্যাতত্ত্বের ক্ষেত্রগুলিকে আরো প্রসারিত করতে সাহায্য করছে৷[5] তার বলয় তত্ত্বের দ্বিঘাত ক্ষেত্রের একক দল বিশিষ্ট অঙ্কসংখ্যা গবেষণার ওপর ভিত্তি করে তিনি ডিরিক্লের একক উপপাদ্যটি প্রমাণ করেন, যা বীজগাণতিক সংখ্যাতত্ত্বের ইতিহাসে একটি অপরিহার্য প্রমাণ৷[6]

তিনি ডিওফ্রেন্টাইন সন্নিকর্ষ সংক্রান্ত উপপাদ্যটি প্রমাণ করতে গিয়ে মৌলিকভাবে গণনা করার জন্য পিজিয়নহোল নীতিটি ব্যবহার করেন৷ পরে তিনি এই প্রামাণ্য উপপাদ্যটিকে ডিরিক্লের সন্নিকর্ষ উপপাদ্য নামকরণ করেন৷ তিনি ফের্মার শেষ উপপাদ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন৷ এই বিষয়ে তিনি n = ৫ এবং n = ১৪ এর মতো প্রমাণগুলি চর্তুর্ঘাতী অন্যোন্যতা প্রমাণে কাজে লাগান৷[5] ভাজক সঙ্কলন অপেক্ষক বা ডিরিক্লের ভাজক সমস্যাগুলি এখনো অবধি সংখ্যাতত্ত্বের অমীমাংসিত গণিতের সমস্যার অন্যতম৷

ডেডেকিন্ড

ফ্রান্সের গণিতজ্ঞ স্যার পিটার গুস্তাভ ল্যাজন ডিরিক্লেয়ের কাজের অধ্যয়ন পরবর্তীকালে বীজগাণিতিক সংখ্যাতত্ত্বের প্রতি বিজ্ঞানী রিচার্ড ডেডকিন্ডের আকর্ষন বৃদ্ধি করে মুলধারণার সঞ্চার ঘটায়৷ তিনি ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ডিরিক্লেয়ের সংখ্যাতত্ত্ব বিষয়ক বক্তৃৃতার ওপর "ভোর্লেসুঙ্গেন উবার জাহ্লেনথিওরি" অর্থাৎ সংখ্যাতত্ত্বের বিষয়ে বক্তৃৃতা নামে একটি বই প্রকাশ করেন৷ বইটিতে লেখা ছিলো যে;

"Although the book is assuredly based on Dirichlet's lectures, and although Dedekind himself referred to the book throughout his life as Dirichlet's, the book itself was entirely written by Dedekind, for the most part after Dirichlet's death." (Edwards 1983)

অনুবাদ- যদিও পুস্তকটি পুরোপুরিভাবে ডিরিক্লেয়ের বক্তৃৃতার ওপর নির্ভর করে লেখা, তবুও ডেডেকিন্ড নিজে চিরজীবন তার লেখা ডিরিক্লেয়ের বক্তৃৃতা বিষয়ক বইটিরই উল্লেখ করেন৷ বইটির অধিকাংশই ডেডেকিন্ড ডিরিক্লেয়ের মৃত্যুর পর লেখেন৷ (এডওয়ার্ডস ১৯৮৩)

ভোর্লেসুঙ্গেন উবার জাহ্লেনথিওরি বইটির ১৮৭৯ এবং ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের সংস্করণে আদর্শের ধারণার প্রথমদিকের পাঠগুলি এবং বলয়তত্ত্বের মৌলিক উপাদানগুলি যুক্ত করা হয়৷ বলয় তত্ত্ব রা রিং থিওরিতে "রিং" শব্দটির ব্যবহার ডেডেকিন্ড তার কাজে ব্যবহার না করলেও বিজ্ঞানী ডেভিড হিলবার্ট এর প্রচলন করেন৷ ডেডেকিন্ড একাধিক সংখ্যাযুক্ত সেটের সাবসেটগুলিকে আদর্শ হিসাবে দেখান, যা ছিলো মূলত বীজগাণিতিক পূর্ণ সংখ্যা৷ এটি বহুপদী সমীকরণগুলিকে পূর্ণ সংখ্যার সহগগুলি সহ মান্যতা দেয়৷ বিজ্ঞানী ডেডেকিন্ডের পর গণিতবিদ হিলবার্ট এবং এমি নোয়েদার এই ধারণাটিকে নতুন আকার দেন৷ হিলবার্টের দ্বারা উন্নত এই ধারণাটিকে নিজের মতো সরলীকরণ করে আর্নস্ট এডওয়ার্ড কুমের আদর্শ সংখ্যার ধারণা পান৷ এছাড়া তিনি ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দের এর সাহায্যে ফের্মার শেষ উপপাদ্যটি প্রমাণ করতেও সক্ষম হন৷

হিলবার্ট

ডেভিড হিলবার্ট ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে তার লেখা "জাহ্লবেরিশ" (আক্ষরিক অর্থ সংখ্যার প্রতিবেদন) নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন যেখানে বীজগণিতের সংখ্যাতত্ত্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলি একত্রিত করা ছিলো৷ এছাড়া তিনি ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে আবিষ্কৃৃত সংখ্যাতত্ত্বের একটি গূরুত্বপূর্ণ তথ্য ওয়ারিঙের সমস্যার সমাধান করেন৷ সসীমতার উপপাদ্য ব্যবহার করে তিনি এই সিদ্ধান্তে আসেন যে কোনো গণিতের সমস্যার ক্ষেত্রে কোনো না কোনো সমাধান থাকবেই, শুধু সঠিক সমাধান পাওয়ার নির্ভুল পদ্ধতিটি জানা প্রয়োজন৷[7] এই বিষয়ে ছোটোখাটো লেখা বা তথ্য প্রকাশ করলেও তার ছাত্রদের তৎপরতায় তিনি অপেক্ষকের হিলবার্ড মডিউলেশন আকারটি আবিষ্কার করলে গণিতের একটি নতুন অধ্যায় খুলে যায়৷

তিনি শ্রেণী ক্ষেত্র উপপাদ্যের বিষয় একাধিক অনুমান প্রকাশ করেন৷ ধারণাটি দেশ প্রভাবশালী হলে তিনি তার এই অনুমানটিকে হিলবার্ট শ্রেণী ক্ষেত্র নাম দেন এবং ঐ বিষয়ে হিলবার্ট চিহ্নের প্রবর্তন করেন৷ তবে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী তেইজি তকগি তার কাজের ফলাফল প্রমাণিত করেন৷[8]

আর্টিন

এমিল আর্টিন ১৯২৪, ১৯২৭ এবং ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ধারাবাহিক তত্ত্বপত্র প্রকাশ করে তার অন্যোন্যতার সূত্রটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ এই সুত্রটি সংখ্যাতত্ত্বের একটি মৌলিক উপপাদ্য, যা বিশ্বজনীন শ্রেণী ক্ষেত্র মতবাদের একটি বিশেষ স্থান দখল করেছে৷[9] "অন্যোন্যতার সূত্র" হলো একটি বৃহদ্ক্ষেত্র যা সংখ্যাতত্ত্বের চতুর্ঘাতী অন্যোন্যতার সূত্রের একটি সাধারণ আকার৷ এটি ফার্ডিনান্ড আইজেনস্টাইন ও কুমেরের অন্যোন্যতা সূত্রসহ হিলবার্টের গুণানুপাত ও হিলবার্ট চিহ্নের (নর্ম চিহ্ন) সহায়ক৷ আর্টিনের সুত্রের ফলাফল হিলবার্টের নবম সমস্যার আংশিক সমাধান করতে সক্ষম৷

আধুনিক মতবাদ

১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ জাপানী গণিতজ্ঞ গোরো শিমুরা, ইয়ুতাকা তানিয়ামা গণিতের দুই আন্তঃসম্বন্ধ্যহীন বিষয় তথা উপবৃৃত্তাকার বক্র এবং মডিউলার আকারের মধ্যে একটি সংযোগ থাকার আভাস পান৷ ফলস্বরূপ তারা মন্তব্য করেন যে প্রতিটি উপবৃত্তাকার বক্রই এক একটি মডিউলার উপবৃত্তাকার বক্র যা মডিউলার আকারের সাথে সম্পর্কযুক্ত৷ ঐ সময়ে এই লব্ধপ্রাপ্ত মডিউলারিটি উপপাদ্যটি "তানিয়ামা-শিমুরার অনুমান" নামে পরিচিতি পায়৷

প্রাথমিকভাবে তাদের এই অনুমান বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়নি৷ কিন্তু অপর এক সংখ্যাতত্ত্ববিদ আন্দ্রে ওয়েইল এর পক্ষে একাধিক তথ্যপ্রমাণ দিতে সক্ষম হলে মতবাদটি আলোচ্য বিষয় হিসাবে উঠে আসে, ফলস্বরূপ অপ্রমাণিত মতবাদটি তথ্যনির্ভর হওয়ার পর তার সম্মানে "তানিয়ামা-শিমুরা-ওয়েইল মতবাদ" নামে পরিচিতি পায়৷[10] এটি ল্যাংল্যান্ডের কর্মসূচীর অন্তর্ভুক্ত হয়, যা বিভিন্ন গণিতজ্ঞের অনুমানকে প্রমাণিত বা বাতিল করার একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচী৷

অ্যান্ড্রু ওয়াইলস ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে অর্ধস্থিতিশীল উপবৃৃৃত্তাকার বক্রের জন্য মডিউলারিটি উপপাদ্যের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করেন৷ আবার তিনি রিবেটের উপপাদ্যের মাধ্যমে ফের্মার শেষ উপপাদ্যের প্রমাণ করেন৷ তার পূর্বে প্রায় সমস্ত গণিতবিদই মডিউলারিটি উপপাদ্য এবং ফের্মার শেষ উপপাদ্যের খাতায়-কলমে প্রমাণ করাকে প্রায় অসম্ভব বলে ধারণা করেছিলেন শুধু তাই না তারা বিষয়দুটিতে বিন্দুমাত্র কলম প্রয়োগ করে সামান্য উন্নতিসাধন করতেও সঙ্কোচবোধ করতেন৷ ওয়াইলস ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে মতবাদদুটির প্রথম সফল প্রমাণ করেন, যদিও তাতে সামান্য ত্রুটি ছিলো৷[11] গণিতজ্ঞ ওয়াইলস পরে রিচার্ড টেইলর (গণিতজ্ঞ)|রিচার্ড টেইলরের সহযোগীতায় নির্ভুল প্রমাণটি প্রকাশ করলে শেষ পর্যন্ত তা ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের সপ্টেম্বর মাসে গৃৃহীত হয় এবং ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বসম্মুখে প্রকাশিত হয়৷ এর প্রমাণটি অনেকাংশে বীজগাণিতিক জ্যামিতি, সংখ্যাতত্ত্বের সাহায্যে এবং গণিতের একাধিক অন্যান্য শাখাগুলির প্রয়োজনীয় সুত্রের একত্রীকরণে সম্ভব হয়েছিলো৷ আধুনিক বীজগণিতের একাধিক পদ্ধতি যেমন বিষয়শ্রেণী, স্কিম, ইওয়াসাওয়া মতবাদসহ অন্যান্য বিংশ শতাব্দীতে আবিষ্কৃত একাধিক তত্ত্বের ব্যবহার ফের্মার সময়ে না থাকায় উপপাদ্যের প্রমাণ দুরূহ ছিলো৷

মৌলিক ধারণাসমূহ

ব্যর্থতা এবং অনন্য গুণকনির্ণয়

পূর্ণ সংখ্যার বলয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম হলো, এটি পাটীগণিতে মৌলিক উপপাদ্যকে সমর্থন করে, যা বলে যে, প্রতিটি ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যারই এক বা একাধিক মৌলিক সংখ্যার গুণিতক রয়েছে এবং এই গুণিতকগুলির ক্রম ঐ আলাদা আলাদা পূর্ণ সংখ্যার ক্ষেত্রে অনন্য হয়৷ এই বিবৃতি O পূর্ণ সংখ্যার বলয় ক্রমের K বীজগাণিতিক ক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য হয় না৷

O ক্রমের একটি মৌলিক উপাদান p হলো এমন একটি সংখ্যা, যদি pকে দিয়ে একটি সংখ্যা abকে ভাগ করা হয় তবে ঐ ভাগের ভাগফল হিসাবে a অথবা b অথবা যেকোনো একটির সাধারণ গুণনীয়ক পাওয়া যাবে৷ এই ধর্মটি পূর্ণ সংখ্যার আদ্যত্ব ধর্মের সাথে বিশেষ সম্পর্কযুক্ত কারণ যেকোনো ধনাত্মক সংখ্যার গুণনীয়ক হিসাবে যদি বা ঐজাতীয় কোনো মৌলিক সংখ্যাকে ধরলে তবে যেকোনো ধনাত্মক সংখ্যার ক্ষেত্রে এই নিয়মটি প্রযোজ্য হবে৷ যদিও এটি অন্যান্য মৌলিক সংখ্যার ক্ষেত্রে ততটা কার্যকরী নয়৷ উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় ঋণাত্মক সংখ্যা হওয়ার কারণে কখনোই মৌলিক সংখ্যা নয়, কিন্তু অবশ্যই এটি একটি মৌলিক উপাদান৷ যদি মৌলিক সংখ্যাগুলির ভগ্নাংশকরণ বা একাধিক গুণফলে ভাগ করাকে মান্যতা দেওয়া হয় তবে, পূর্ণ সংখ্যাগুলির ক্ষেত্রেও একাধিক ভিন্ন ধরনের ফল পাওয়া যাবে, যেমন

সাধারণভাবে বলা যায়, যদি uকে একটি একক রাশি হিসাবে ধরা হয় বা Oর একটি গুণক অন্যোন্যক হিসাবে প্রকাশ হয় এবং p যদি মৌলিক সংখ্যার সেট হয় তবে up গুণফলটিও অবশ্যই একটি মৌলিক সংখ্যা হিসাবে গণ্য হবে৷ এক্ষেত্রে p এবং up এর অঙ্কসংখ্যাগুলিকে পরষ্পরের সহযোগী সেট বলে ধরা হবে৷ পূর্ণ সংখ্যাগুলির মধ্যে p এবং p ও সহযোগী সেট কিন্তু শর্তানুসারে সেটগুলির মধ্যে যে কোনো একটি সেটকে পুরোপুরি ধনাত্মক হতে হবে৷ পূর্ণ সংখ্যাগুলির ধনাত্মক হওয়ার সাথে সাথে সহযোগী সেটগুলির মধ্যে থাকা সহযোগী সংখ্যাগুলি একটি অনন্য উপাদান তৈরী করে৷ যখন K সেটটি মূলদ সংখ্যাকে নির্দেশ করে না করলে সেটে ধনাত্মকতার কোনো প্রশ্নই তৈরী হয় না৷ উদাহরণস্বরূপ গাউসীয় পূর্ণ সংখ্যা Z[i]-তে ১ + ২i এবং ২ + i অঙ্কসমষ্টি পরষ্পরের সহযোগী কারণ পূর্ববর্তী অঙ্কসংখ্যার সাথে i এর গুণফলের ফলস্বরূপ দ্বিতীয় সংখ্যাটি পাওয়া যায় কিন্তু দুটির মধ্যে উভয়ই শর্তসম্মত হওয়ার কারণে কোনটি কার সহযোগী অঙ্ক তা নির্ণয় করা সম্ভব নয়৷ সমীকরণের দ্বারা প্রকাশ করে পাওয়া যায়

এই সমীকরণসূত্রটি প্রমাণ করে যে, Z[i]-এর গুণকগুলি ফ্যাক্টরের ঘাত নির্ভর এবং এর ওপর ভিত্তি করেই অনন্য৷ একারণেই অনন্য গুণকের শর্তক্ষেত্রই একমাত্র অনন্য গুণক নির্দেশ করে, অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলি সবসময় মেলে না৷ অনন্য গুণকের সেটে গুণকসমন্বিত মৌলিক সংখ্যাগুলি কেবলমাত্র তাদের মান ও ঘাতের ওপর ভিত্তি করে অনন্য হয়৷

তথ্যসূত্র

  1. Stark, pp. 145–146.
  2. Aczel, pp. 14–15.
  3. Stark, pp. 44–47.
  4. Disquisitiones Arithmeticae at Yalepress.yale.edu
  5. Elstrodt, Jürgen (২০০৭)। "The Life and Work of Gustav Lejeune Dirichlet (1805–1859)" (PDF)Clay Mathematics Proceedings। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১২-২৫
  6. Kanemitsu, Shigeru; Chaohua Jia (২০০২)। Number theoretic methods: future trends। Springer। পৃষ্ঠা 271–274। আইএসবিএন 978-1-4020-1080-4।
  7. Reid, Constance, 1996. Hilbert, Springer, আইএসবিএন ০-৩৮৭-৯৪৬৭৪-৮.
  8. This work established Takagi as Japan's first mathematician of international stature.
  9. Helmut Hasse, History of Class Field Theory, in Algebraic Number Theory, edited by Cassels and Frölich, Academic Press, 1967, pp. 266279
  10. Fermat's Last Theorem, Simon Singh, 1997, আইএসবিএন ১-৮৫৭০২-৫২১-০>
  11. Kolata, Gina (২৪ জুন ১৯৯৩)। "At Last, Shout of 'Eureka!' In Age-Old Math Mystery"The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৩
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.