বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান
বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞান জীববিজ্ঞানেরই একটি উপশাখা যেখানে প্রজাতির উৎপত্তি ও ক্রমবিবর্তন নিয়ে গবেষণা করা হয়। যিনি বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞান নিয়ে কাজ করেন, তাকে বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞানী বলে। দার্শনিক কিম স্টেরেলনি বলেন, “১৮৫৮ সালের পর থেকে বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞানের অগ্রগতি বিজ্ঞানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বৌদ্ধিক অর্জন”।[1]
বর্ণনা
বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞান একটি আন্তঃশাস্ত্রীয় ক্ষেত্র, কারণ গবেষণাগার ভিত্তিক এবং মাঠ পর্যায়ের বিজ্ঞানীরাও এই ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত। যেসব বিশেষজ্ঞ স্তন্যপায়ী, পাখি অথবা উভচরদের কেইস স্টাডি হিসেবে ব্যবহার করে জৈববিবর্তন সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর খোজেন, তারাও এই বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও যেসব জীবাশ্মবিদ ও ভূতত্ত্ববিদ জীবাশ্মের মাধ্যমে বিবর্তনের গতি সম্পর্কে গবেষণা করেন, যেসব তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী বংশগতিবিদ্যা (Population genetics) এবং বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানে কাজ করছেন, তাদেরকেও বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞানী বলা হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীরা ড্রসোফিলা মাছি ব্যবহার করে বার্ধক্যের বিবর্তন নিয়ে গবেষণা করছেন, তাছাড়া পরীক্ষামূলক বিবর্তনও জীববিজ্ঞানের একটি খুব সক্রিয় উপশাখা। বিবর্তনের আধুনিক সংশ্লেষণী তত্ত্বে ডেভেলপমেন্টাল জীববিজ্ঞানকে বাদ দেওয়া হলেও ’৯০ এর দশকে এটি আবার বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞানে পুনঃপ্রবেশ করে।
বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞানের গবেষণার ফলাফল মানুষের সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিবর্তন ও বিবর্তনীয় আচরণ সম্পর্কিত গবেষণার রসদ জুগিয়ে থাকে। বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞানের কাঠামো ও কর্মপদ্ধতি এখন কম্পিউটার বিজ্ঞান, ন্যানোটেকনোলজি থেকে শুরু করে আরও অনেক শাস্ত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিবর্তনীয় পথ্যশাস্ত্রেও এই বিজ্ঞানের অবদান রয়েছে।[2][3]
কৃত্রিম প্রাণ জৈবতথ্য বিজ্ঞানের একটি উপশাখা যা গবেষণাগারে বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞানের বর্ণীত জৈববিবর্তনের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর চেষ্টা করছে। এটি সাধারণত গণিত ও কম্পিউটার নকশার সাহায্যে করা হয়ে থাকে।
ইতিহাস
’৩০ ও ’৪০ এর দশকে বিবর্তন তত্ত্বের আধুনিক সংশ্লেষণের মাধ্যমে শিক্ষায়তনে বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞান আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা পায়।[4] তবে ’৭০ ও ’৮০ এর দশকের আগে খুব কম বিশ্ববিদ্যালয়ই আলাদাভাবে তাদের কোন অনুষদকে “বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞান” নামকরণ করেছিল। আণবিক ও কোষ জীববিজ্ঞানের দ্রুত অগ্রগতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের জীববিজ্ঞান অনুষদকে ভাগ করে আণবিক ও কোষজীববিজ্ঞান এবং পরিবেশবিজ্ঞান ও বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞান(এই অনুষদটি মূলত প্রাণীবিদ্যা, জীবাশ্মবিদ্যা প্রভৃতি অনুষদগুলোকে একীভূত করে গঠিত হয়েছিল) অনুষদে বিভক্ত করেছিল।
সাম্প্রতিককালে অণুজীববিজ্ঞানকে বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞানের ভেতরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অণুজীববিজ্ঞানে প্রজাতি ধারণার অভাব এবং প্রাণীদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তথ্যের স্বল্পতা থাকায় আগে একে বিবেচনা করা হত না। কিন্তু এখন বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞানীরা অণুজীবের শরীরবিদ্যা, তাদের অপেক্ষাকৃত সরল জিনোম এবং তাদের দ্রুতগতির প্রজননকে কাজে লাগিয়ে বিবর্তন সম্পর্কিত প্রশ্নগুলোর উত্তর বের করছেন। একই কারণে ভাইরাসের বিবর্তন, বিশেষ করে ব্যাকটেরিওফাজের বিবর্তন সম্পর্কিত রহস্যগুলোও উন্মোচিত হচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞানী
- উল্লেখযোগ্য গবেষক
- রিচার্ড ডি. আলেকজান্ডার
- উইলিয়াম এইচ. কেইড
- শন বি.ক্যারল
- ব্রায়ান চার্লসউয়োর্থ
- ডেবোরা চার্লসউয়োর্থ
- ব্রায়ান ক্লার্ক
- জেরি কোয়েন
- জেমস ক্রো
- চার্লস ডারউইন
- রিচার্ড ডকিন্স
- জ্যারেড ডায়মন্ড
- থিওডসিয়াস ডবঝান্সকি
- নিল এলড্রেজ
- রোনাল্ড ফিশার
- এডমান্ড ব্রিসকো ফোর্ড
- স্টিভেন জে গুল্ড
- রোজমেরি গ্র্যান্ট
- আর্নস্ট হেকেল
- জে.বি.এস. হ্যালডেন
- ডব্লিউ.ডি. “বিল” হ্যামিলটন
- জুলিয়ান হাক্সলি
- ড্যানিয়েল জ্যানযেন
- মুটু কিমুরা
- এলেক্সি কনড্রাশভ
- জঁ-বাতিস্ত লামার্ক
- রিচার্ড লেভিন্স
- রিচার্ড লিউয়োন্টিন
- গুস্টাভ মালেকট
- লিন মারগুলিস
- পিয়ের লুই মপারতুই
- আর্নস্ট মায়ার
- ইভান ভ্লাদিমিরোভিচ মিখুরিন
- হারম্যান যোসেফ মুলার
- জর্জ এবং এলিজাবেথ পেকহ্যাম
- এডওয়ার্ড লর্যানাস রাইস
- বারবারা এ. স্খাল
- জন মেইনার্ড স্মিথ
- জর্জ গেইলর্ড সিম্পসন
- মার্ক জি. থমাস
- রবার্ট ট্রিভার্স
- লেই ভ্যান হ্যালেন
- আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস
- অগাস্ট ভাইজম্যান
- জর্জ সি. উইলিয়ামস
- এলান উইলসন
- এডওয়ার্ড অজবর্ন উইলসন
- কার্ল ভোজ
- সেওয়াল রাইট
- এমিল জাকারকান্ডল
- যেসব বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞানী বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের জন্য জনপ্রিয়
- রিচার্ড ডকিন্স
- স্টিভেন জে গুল্ড
- আর্নস্ট হেকেল
- স্টিভ জোন্স
- কেনেথ আর. মিলার
- বিবর্তনবিদ্যা জনপ্রিয়করণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ব্যাক্তিবর্গ যাঁদের গবেষণা বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত নয়
- রবার্ট আর্ড্রি
- পিটার এটকিন্স
- ড্যানিয়েল ডেনেট
- গ্রেগ গ্রাফিন
- Christopher Hitchens
- স্টিভেন পিংকার
- ম্যাট রিডলি
- মাইকেল রিউজ
- কার্ল সেগান
গ্রন্থপঞ্জি
পাঠ্যপুস্তক
- Douglas J. Futuyma, Evolutionary Biology (3rd Edition), Sinauer Associates (1998) আইএসবিএন ০-৮৭৮৯৩-১৮৯-৯
- Douglas J. Futuyma, Evolution, Sinauer Associates (2005) আইএসবিএন ০-৮৭৮৯৩-১৮৭-২
- Mark Ridley, Evolution (3rd edition), Blackwell (2003) আইএসবিএন ১-৪০৫১-০৩৪৫-০
- Scott R. Freeman and Jon C. Herron, Evolutionary Analysis, Prentice Hall (2003) আইএসবিএন ০-১৩-১০১৮৫৯-০
- Michael R. Rose and Laurence D. Mueller, Evolution and Ecology of the Organism, Prentice Hall (2005) আইএসবিএন ০-১৩-০১০৪০৪-৩
- Monroe W. Strickberger, Evolution (3rd Edition), Jones & Bartlett Publishers (2000) আইএসবিএন ০-৭৬৩৭-১০৬৬-০
উল্লেখযোগ্য এককগ্রন্থ ও অন্যান্য
- জঁ-বাতিস্ত লামার্ক (১৮০৯) Philosophie Zoologique
- চার্লস ডারউইন (১৮৫৯) The Origin of Species
- চার্লস ডারউইন (১৮৭১) The Descent of Man and Selection in Relation to Sex
- রোনাল্ড ফিশার (১৯৩০) The Genetical Theory of Natural Selection
- জে বি এস হ্যালডেন (1932) The Causes of Evolution
- আর্নস্ট মায়ার (১৯৪১) Systematics and the Origin of Species
- Conrad Hal Waddington (১৯৫৭) The Strategy of the Genes
- Susumu Ohno (১৯৭০) Evolution by gene duplication
- রিচার্ড ডকিন্স (১৯৭৬) The Selfish Gene
- রিচার্ড ডকিন্স (২০০৪) The Ancestor's Tale
- মুটু কিমুরা (১৯৮৩) The Neutral Theory of Molecular Evolution
- স্টিফেন জে গুল্ড (২০০২) The Structure of Evolutionary Theory
তথ্যসূত্র
- Sterelny, K. (২০০৯)। "Philosophy of Evolutionary Thought"। Michael Ruse & Joseph Travis। Evolution: The First Four Billion Years। Cambridge, Massachusetts: The Belknap Press of Harvard University Press। পৃষ্ঠা 313। আইএসবিএন 978-0-674-03175-3।
- Nesse, R.M., & Williams, G.C. (১৯৯৬)। Evolution and Healing: The New Science of Darwinian Medicine। London: Phoenix। আইএসবিএন 1-85799-506-6।
- Antolin, M.F. (২০০৯)। "Evolutionary Biology of Disease and Darwinian Medicine"। Michael Ruse & Joseph Travis। Evolution: The First Four Billion Years। Cambridge, Massachusetts: The Belknap Press of Harvard University Press। পৃষ্ঠা 281–298। আইএসবিএন 978-0-674-03175-3।
- Sterelny (2009) p.314