বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট

বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সংক্ষেপেঃ বিওআরআই) বাংলাদেশের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান যা সমুদ্র বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সহায়তা ও পরামর্শ প্রদানের নিয়োজিত।[1][2] এই প্রতিষ্ঠানটি কক্সবাজারের রামুর জঙ্গল গোয়ালিয়া পালং-এ অবস্থিত এবং বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত।[3] ২০১৫ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করা হয় সমুদ্র সম্পর্কিত বিষয়ে গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মকান্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টিসহ জাতীয় পর্যায়ে সমুদ্রবিজ্ঞানের ইতিবাচক উন্নয়ন ও প্রয়োগের লক্ষ্যকে সামনে রেখে।[1]

বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট
প্রতিষ্ঠিত২০১৫
কেন্দ্রবিন্দুসমুদ্রবিজ্ঞান
মহাপরিচালকসুভাষ চন্দ্র সাহা
স্বত্বাধিকারীবিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
অবস্থান
জঙ্গল গোয়ালিয়া পালং, রামু
, ,
ওয়েবসাইটhttp://www.bori.gov.bd/

ইতিহাস

১৯৭৩ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করলেও বিভিন্ন কারণে তা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ১৯৯৬ সালে তত্‌কালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘জাতীয় সমুদ্র বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠার জন্যে একটি রিভিউ কমিটি গঠন করেন ও এর প্রেক্ষিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় জুন, ২০০০ থেকে জুলাই, ২০০৫ মেয়াদে ‘‘জাতীয় সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপন (১ম পর্যায়)’’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহন করা হয়।[2] ২০০৯ সনে একনেক সভায় ৪ একর জমির উপর ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব উপস্থাপিত হলে তা পরিবর্তন করে ৪০ একরে করা হয় এবং ২০১০ সালের মধ্যে কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার জঙ্গল গোয়ালিয়া পালং মৌজায় ৪০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ সমাপ্ত হয় এবং এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের ৫ মার্চ জাতীয় সংসদএ “বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৫” পাশ হয়।[1]

অবস্থান

কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন রেজু খালের পাশে জঙ্গল গোয়ালিয়া পালং মৌজায় ৪০.৬২ একর জায়গায় জুড়ে ১০২.৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৫টি গবেষণাগার, ১টি ওশানোগ্রাফিক ডাটা সেন্টার, অডিও ভিজুয়্যাল সুবিধাসম্পন্ন সেমিনার কক্ষ, প্রশিক্ষণের জন্য শ্রেণী কক্ষ, মেডিক্যাল সেন্টার, ভিজিটিং সায়েন্টিস্ট ডরমেটরী, কোয়ার্টার ইত্যাদি নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত।[2]

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসাবে বলা হয়েছে[1][4] -

  1. সমুদ্র সম্পদের ব্যবহারের মাধ্যমে খনিজ, কৃষি, মৎস, পরিবেশ, ও শিল্প ক্ষেত্রের উন্নয়ন এবং পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনাসহ মানবকল্যাণে এর সুফল প্রয়োগ;
  2. সমুদ্র বিষয়ক শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষন এবং সমুদ্র সম্পদের অনুসন্ধান ও ব্যবহার সম্পর্কিত জ্ঞানের উন্নীত করণ এবং সমুদ্র পরিবেশের রক্ষার কার্যক্রম গ্রহণ;
  3. সমুদ্র সম্পর্কিত সমস্যাদি চিহ্নিত করণ এবং সমাধানের ব্যবস্থা করা;
  4. বাংলাদেশের সামুদ্রিক অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত সমস্ত সম্পদের উদ্ভাবন সংক্রান্ত গবেষণা করা;
  5. সমুদ্রের সমস্ত জীবসম্পদের অনুসন্ধান এবং স্থায়ী অর্থনৈতিক কল্যানের উদ্দেশ্যে এসব সম্পদের টেকসই উৎপাদন ত্বরান্বিত করা;
  6. অফসোর আইসল্যান্ড, উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র তলদেশের খনিজ পদার্থ, প্লেসার ডিপোজিট, কয়লা, তৈল ও গ্যাস সহ অন্যান্য খনিজ সম্পদের উপস্থিতি চিহ্নিত করণ এবং গবেষণা পরিচালনা করা;
  7. হাইড্রোগ্রাফি, সেডিমেনটেশন, জ্যোতির্বিদ্যা, আবহাওয়াবিদ্যা, নৌচালন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কিত জ্ঞানচর্চা এবং বাণিজ্যিকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কাজ করা;
  8. সমুদ্র এবং সামুদ্রিক পরিবেশ সম্পর্কিত ব্যবসা-বানিজ্যে সরকারী এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে বিনিয়োগের উৎসাহ যোগানো এবং পরামর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেবা প্রদান করা;
  9. সমুদ্র আইন সহ দেশের সমুদ্র সম্বন্ধীয় বিভিন্ন কৌশল ও নীতিমালা ও পরিকল্পনা গ্রহনের প্রস্তাব তৈরিসহ, এ সংক্রান্ত বিষয়ে সহায়তা প্রদান করা;
  10. বিভিন্ন পরিবেশগত ইস্যু (উপকূল, গভীর সমুদ্রের সার্কুলেশন, ব-দ্বীপ গঠন, পানি প্রবাহ ইত্যাদি) এবং পরিবেশগত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ুর ইস্যু সমূহ সনাক্ত করা;
  11. দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সমুদ্র গবেষক, প্রকৌশলী, প্রযুক্তিবিদ এবং সমুদ্র সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞদের সাথে সহযোগিতা এবং সমুদ্রবিদ্যা গবেষণায় সামঞ্জস্যতা আনয়নের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উন্নতি সাধন; এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সহিত সমুদ্রবিদ্যা বিষয়ে যোগসূত্র স্থাপনপূর্বক সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ;
  12. সমুদ্রবিদ্যা বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি;
  13. জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সমুদ্র বিষয়ে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ;
  14. সমুদ্রবিদ্যা বিষয়ে গবেষণারত বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহিত গবেষণা কর্মকান্ডে সহযোগিতা প্রদান ও সমন্বয় সাধন;
  15. নতুন গবেষকদের পেটেন্ট স্বত্ব প্রাপ্তিতে সহায়তা প্রদান;
  16. উপরিউক্ত কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ।

কার্যক্রম

বিওআরআই’র কার্যক্রমের অন্তর্ভূক্ত বিষয়গুলো হলো - ভৌত সমুদ্রবিদ্যা, ভূতাত্ত্বিক সমুদ্রবিদ্যা, রাসায়নিক সমুদ্রবিদ্যা, জৈব সমুদ্রবিদ্যা, জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্র বিষয়ক গবেষণা; সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করা; সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা; বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহে জীবপ্রযুক্তি বিষয়ে পরিচালিত গবেষণা সমূহের সমন্বয়, সহায়তা এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান; ওশানোগ্রাফিক ডাটা সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গবেষণালব্ধ তথ্য ও ফলাফল সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণ এবং তৈল দূষণ ঝুঁকি নিরূপণ।[4] প্রথমাবস্থায় বিকল্প খাদ্য সম্পর্কিত গবেষনা করা হচ্ছে এখানে।[5]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৫"। আইন ও সংসদ বিভাগ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ৫ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  2. "সংক্ষিপ্ত পরিচিতি"। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২০ জুলাই ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  3. "সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৪৭ পদে নিয়োগ"একুশে টেলিভিশন। ১৯ অক্টোবর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  4. "মিশন ও ভিশন"। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২০ জুলাই ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৯
  5. "খাদ্য চাহিদা পূরণ করবে 'সি-উইড'"বাংলাদেশ প্রতিদিন। ১১ জানুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.