বড় উঠান জমিদার বাড়ি
বড় উঠান জমিদার বাড়ি বাংলাদেশ এর চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান নামক এলাকায় অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। যা চট্টগ্রামে মিয়া বাড়ি ও স্থানীয়দের কাছে দেয়াঙ পাহাড়ের জমিদার বাড়ি নামে বেশ পরিচিত। [1]
বড় উঠান জমিদার বাড়ি | |
---|---|
বিকল্প নাম | মিয়া বাড়ি মনোহর আলী খানের মিয়া বাড়ি চট্টগ্রামের মিয়া বাড়ি দেয়াঙ পাহাড়ের জমিদার বাড়ি |
সাধারণ তথ্য | |
ধরন | বাসস্থান |
অবস্থান | কর্ণফুলী উপজেলা |
ঠিকানা | বড় উঠান |
শহর | কর্ণফুলী উপজেলা, চট্টগ্রাম জেলা |
দেশ | বাংলাদেশ |
খোলা হয়েছে | ১৬৯৪-৯৬ |
স্বত্বাধিকারী | মনোহর আলী খান |
কারিগরী বিবরণ | |
পদার্থ | ইট, সুরকি ও রড |
তলার সংখ্যা | দ্বিতল |
অন্যান্য তথ্য | |
কহ্ম সংখ্যা | ৬টি |
ইতিহাস
আনুমানিক ১৭০০ শতকের দিকে এই জমিদার বাড়ি গোড়াপত্তন হয়। তবে জমিদার বংশধররা ১৬০৯৪-৯৬ শতকের মধ্যে এই স্থানে বসবাস শুরু করেন। এই বংশের জমিদারী শুরু হয় জমিদার মনোহর আলী খানের মাধ্যমে। তিনি বাংলার নবাব শায়েস্তা খানের কাছ থেকে এই জমিদারী লাভ করেন। তবে এই জমিদার মনোহর আলী খানকে নিয়ে দ্বিমত প্রচলিত রয়েছে। কারো কারো মতে তিনি আগে থেকেই মুসলিম ছিলেন। আবার কারো কারো মতে তিনি জমিদারী লাভের পর হিন্দু ধর্মালম্বী থেকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরীত হন। তার পূর্ব নাম ছিল দেওয়ান রাজা শ্যাম রায়। তার মাধ্যমে এখানে জমিদারী প্রতিষ্ঠার পর একাধারে তার বংশধররা এখানে জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। তারা হলেন, রুস্তম আলী খান, দেওয়ান হোসাইন খান, আলী মর্দন খান, আলীয়ার খান, ফাজিলখান, ইলিয়াছ খান, আমীর খান, করিম খান, আছদ আলী খান, জিন্নত আলী খান, আকরাম আলী খান, আছত আলী খান, আনোয়ার আলী খান এবং ছালামত আলী খান। আনোয়ার আলী খানের বংশধররা হলেন মাহাবুব আলী খান (নিঃসন্তান), শের আলী খান এবং আনোয়ার হোসেন খান। আনোয়ার হোসেন খানের বংশধররা হলেন ছানোয়ার আলী খান, শের আফজল খান এবং সাজ্জদ খান। অপরদিকে ছালামত আলী খানের দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর গর্বে তিন ছেলে। তারা হলেন আলী নেওয়াজ খান, আলী নবাব খান এবং আলী আহম্মদ খান। দ্বিতীয় স্ত্রীর দুই সন্তান হলেন, আলী আকবর খান ও আলী আশরাফ খান। আলী আকবর খানের পুত্ররা হলেন শওকত আলী খাঁ, ওকাইয়ুম খান। আলী আশরাফ খানের পুত্ররা হলেন আলী আমজাদ খান, রেজাউল করিম খান, মোশারফ হোসেন খান এবং আলী আজম খান। এনারা সকলেই বংশ পরামপণায় একের পর এক প্রায় ৩০০ বছর ধরে মোঘলদের শাসনামল থেকে ব্রিটিশদের শাসনামল পর্যন্ত এই জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। তাদের এই ৩০০ বছরের জমিদারী আস্তে আস্তে চট্টগ্রাম ছেড়ে হাতিয়া ও নোয়াখালির বিভিন্ন এলাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাদের অধীনে চট্টগ্রামের অনেক ছোটছোট জমিদাররা কাজ করতো। অর্থাৎ ঐ জমিদাররা এই জমিদারদের আওতায় তালুকি জমিদার ছিল। এই জমিদার বংশধররা তাদের বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজের সুবিধার জন্য কাজি, মহুরি, সিকদার, নাপিত, ধোপা, কামার–কুমারসহ অনেক পেশাজীবী কর্মচারী রাখতেন। এইসকল কর্মচারী সকলেই জমিদার বাড়িতে বসবাস করতেন।
অবকাঠামো
বসবাসের জন্য এখানে দ্বিতল বিশিষ্ট ছয় কক্ষের একটি ভবন তৈরি করা হয়। যার উপর এবং নিচ তলায় তিনটি করে মোট ছয়টি কক্ষ ছিল। এছাড়াও জমিদার বাড়ির প্রবেশপথে একটি কাছারিঘর ছিল। এর পাশে ছিল বিনোদনের জন্য জলসা ঘর। আর ধান রাখার জন্য বিশাল ধানের গোলা। জমিদার বাড়ির পাশেই পারিবারিক মসজিদ ও কবরস্থান রয়েছে।
বর্তমান অবস্থা
ষাটের দশক থেকে জমিদার বংশধররা এখানে বসবাস করা বন্ধ করে দেন। তারপর থেকে এই জমিদার বাড়ির বিভিন্ন স্থাপনাগুলি অযত্ন ও অবহেলার কারণে একের পর এক ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও লতাপাতা ও গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে।