বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি
বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতি কলকতায় অবস্থানরত মুসলমান ছাত্রদের গঠিত একটি সাহিত্য সংগঠন। এর প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, মুহম্মদ মোজাম্মেল হক, কাজী ইমদাদুল হক, মাওলানা আকরাম খাঁ, মৌলবি আবদুল করিম, কমরেড মুজফ্ফর আহমদ সহ আরো অনেকে। এই সমিতির পত্রিকা ছিল বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য পত্রিকা। এই সমিতির অফিস ছিল কলকাতার ৩২ নং কলেজ স্ট্রিটে।
পটভূমি
কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির প্রথম সম্পাদক ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এ সমিতি গঠনের পটভূমি সম্পর্কে তিনি বলেন:
ইংরেজি ১৯১০ সালে আমি বি.এ. পাস করি। ঐ সময় কলকাতায় কয়েকটি উৎসাহী যুবকের সঙ্গে আমার যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, মোহাম্মদ এয়াকুব আলী চৌধুরী, মৌলভী আহমদ আলী, মঈনুদ্দীন হুসায়ন প্রভৃতি। সকলের মধ্যে জ্বলন্ত উৎসাহী ছিলেন মৌলভী মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক। আমরা কয়েকজন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভ্য ছিলাম। সেখানে হিন্দু-মুসলমান কোন ভেদ না থাকলেও আমাদের সাহিত্যিক দারিদ্র্যের দরুন আমরা বড় লোকের ঘরে গরীব আত্মীয়ের মতন মন-মরা হয়ে তার সভায় যোগদান করতাম। আমাদের মনে হলো বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে সম্বন্ধ বিচ্ছেদ না করেও আমাদের একটি নিজস্ব সাহিত্য-সমিতি থাকা উচিত।
— বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-পত্রিকা, মাহে নও, ১০ম বর্ষ, ৭ম সংখ্যা, কার্তিক ১৩৬৫, পৃ. ৩৩
ইতিহাস
বাঙালি মুসলমানের নিজস্ব সাহিত্য প্রতিষ্ঠান গঠনের উদ্দেশ্যেই ‘জাতীয় মঙ্গলে'র কবি ভোলার মোজাম্মেল হকের আহবানে ১৯১১ সনের ৪ মে কলকাতার ৯নং অ্যান্টনী বাগানে এই সমিতি গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। করিম বক্স ব্রাদ্রার দপ্তরীখানার মালিক মৌলভী আব্দুর রহমানের বাসভবনে ছিল সেই অ্যান্টনী বাগান। তৎকালীন স্কুলসমূহের পরিদর্শক মৌলভী আব্দুল করিম বি.এ.-এর সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ, মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, সাপ্তাহিক ‘দি মুসলমান'-এর সম্পাদক মৌলভী মুজিবুর রহমান, শেখ আব্দুর রহিম, মুনশী মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দীন আহমদ, শান্তিপুরের কবি মোজাম্মেল হক, ‘কোহিনূর' সম্পাদক মোহাম্মদ রওশন আলী চৌধুরী প্রমুখ তৎকালীন বিশিষ্ট সাহিত্যিক-সাংবাদিকবৃন্দ। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি' গঠিত হয় এবং মৌলভী আব্দুল করিম ও মৌলভী মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে নবগঠিত সমিতির যথাক্রমে প্রথম সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচন করা হয়।[1]
লক্ষ্য-উদ্দেশ্য
প্রতিষ্ঠালগ্নেই সমিতি গঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ঘোষণা করা হয়।[2] সমিতির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল:
১. বঙ্গীয় মুসলমান সমাজে বঙ্গ সাহিত্যের আলোচনা ও তাহার পরিপুষ্টি সাধন।
২. আরবী, ফারসী, উর্দু প্রভৃতি ভাষা হইতে ধর্মশাস্ত্র ও ইতিহাসাদির অনুবাদ প্রচার।
৩. প্রাচীন মুসলমান বঙ্গ সাহিত্যের সংগ্রহ ও সংরক্ষণ।
৪. বঙ্গদেশের বিভিন্ন স্থানের পীর, সাধুপুরুষ ও অন্যান্য মহাজনের জীবনী সংগ্রহ ও প্রকাশ।
৫. বঙ্গীয় মুসলমান সমাজের প্রাচীন বংশাবলীর ও প্রাচীন কীর্তিকলাপের ইতিবৃত্ত ও জাতীয় ইতিহাসের অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহ।
৬. বঙ্গীয় মুসলমান সমাজে সাময়িকপত্রের প্রচার।
৭. সদ্গ্রন্থের প্রচারকল্পে সাহিত্যসেবীদিগকে উৎসাহ প্রদান।
৮. সাহিত্যক্ষেত্রে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপন।
৯. সমিতির সংশ্লিষ্ট একটি পুস্তকাগার স্থাপন ও পাঠাগার সংরক্ষণ।
তথ্যসূত্র
- কলিকাতায় বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি স্থাপনের গোড়ার কথা, মোজাম্মেল হক, নজরুল একাডেমী পত্রিকা, ৩য় বর্ষ- ১ম সংখ্যা, গ্রীষ্ম-বর্ষা-শরৎ, ১৩৮০ পৃ. ৯৮-১০১
- ‘সাহিত্য-সমিতির ইতিহাস',মুহম্মদ হাবীবুল্লাহ্ (বাহার), মাসিক মোহাম্মদী', ১৪শ বর্ষ-৭ম সংখ্যা, বৈশাখ, ১৩৪৮, পৃ. ৪৫৩