ফেরারি কি সওয়ারি
ফেরারি কি সওয়ারি (হিন্দি: फरारि कि सवारि) হল ২০১২ সালের রাজেশ মাপুশকর পরিচালিত হিন্দি নাটকীয়-কমেডি চলচ্চিত্র। এটি লিখেছেন নেরাজ ভোরা এবং প্রযোজনা করেছেন বিধু বিনোদ চোপড়া। এতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন শরমন যোশী। চলচ্চিত্রটি ২০১২ সালের ১৫ জুন মুক্তি পায়।[1]
ফেরারি কি সওয়ারি | |
---|---|
![]() চলচ্চিত্রের বাণিজ্যিক পোস্টার | |
পরিচালক | রাজেশ মাপুশকর |
প্রযোজক | বিধু বিনোদ চোপড়া |
রচয়িতা | রাজেশ মাপুশকর বিধু বিনোদ চোপড়া নেরাজ ভোরা |
শ্রেষ্ঠাংশে | শরমন যোশী বোমান ইরানী ঋত্বিক শাহোর |
সুরকার | প্রীতম চক্রবর্তী |
চিত্রগ্রাহক | সুধীর পাল্সানে |
সম্পাদক | দীপা ভাটিয়া রাজকুমার হিরানি |
পরিবেশক | বিনোদ চোপড়া প্রোডাক্সান |
মুক্তি | ১৫ই জুন, ২০১২ |
দৈর্ঘ্য | ১৪০ মিনিট |
দেশ | ভারত |
নির্মাণব্যয় | ₹১০ কোটি (US$১.৩৯ মিলিয়ন) |
আয় | ₹১২.২৫ কোটি (US$১.৭ মিলিয়ন)(প্রথম তিন দিনে) |
কাহিনী সংক্ষেপ
গরমের ছুটির শেষ হয়ে যাওয়ার মুহূর্তে আমাদের শহরে এল কায়ো। ছোট্ট একটা ছেলে যে মুম্বইতে থাকে আর খুব ভাল ক্রিকেট খেলে। তার বাবা রুস্তম আরটিও বিভাগের একজন হেড ক্লার্ক। তার দাদু ডেব্বু সারাদিন টিভি দেখে। কার্টুন… সিরিয়াল… খবর। একমাত্র ক্রিকেট বাদে সব কিছু। তাই নিয়ে কায়োর সঙ্গে যে মাঝে মাঝেই ঝগড়া হয় না, তেমনটা নয়। কিন্তু কায়ো তো খুব শান্ত আর ভাল ছেলে, তাই দাদুর ওপরে চোটপাট করতে পারে না। কায়োর মা নেই। মায়ের গন্ধ তাই কায়ো বাবার কাছেই খুঁজে পায়। বাবাই তার জীবনের সব কিছু। হ্যাঁ, তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা-রাগ-অভিমান-ঝগড়া সব কিছু তার বাবাকে ঘিরেই। বাবাকে নিয়ে কায়ো খুব- খুব হ্যাপি। কারণ তার বাবা যে কোনওদিন মিথ্যে কথা বলে না। কারওর সঙ্গে ঝগড়া করে না। কোনও অসৎ কাজ করে না। তাদের সেই পুরোনো স্কুটারে করে স্কুলে যাওয়ার পথে বাবা যদি ট্রাফিক রুল ব্রেক করে তা হলে নিজে এসেই ফাইন দিয়ে যায়। ট্রাফিক আঙ্কল, রাস্তার লোক, থানার দারোগা, কর্পোরেশনের কর্মচারী সবাই তাই বাবার বন্ধু। বাবার খুব কাছের মানুষ।
কায়ো ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্ন দেখে। কায়ো সচিনের কথা ভাবে। কায়ো একদিন অনেক বড় মাঠে ক্রিকেট খেলবে এই আশা নিয়ে তার কোচরাও দিন গোনেন; মনে মনে একটা আশা পোষণ করেন। কিন্তু ক্রিকেট খেলার ঝক্কি তো কম নয়। তার ব্যাট, জুতো, বল… খেলার অন্যান্য সামগ্রীর যে অনেক অনেক দাম। তবুও কায়োর বাবা নিজের ভাঁড়ের পয়সা জমিয়ে, সংসারের টুকিটাকি খরচ কমিয়ে কায়োর জন্যে কত কী কেনেন! কায়ো কিন্তু একটুও বায়না করে না। কায়ো কিচ্ছু চায় না বাবার কাছে। কায়ো জানে তার বাবার সাধ আর সাধ্যর মধ্যে যে আকাশ-পাতাল তফাত। আর ঠিক এখানেই ফেরারি কি সাফারি আমার কাছে মনে হয় আধুনিক রূপকথা। চারপাশে কেউ খারাপ নয় কায়োর কাছে। এই ছবিতে তথাকথিত কেউ ভিলেন নেই। দুষ্টু লোকরা তাদের দুষ্টুমি করে বটে, তবে নিজেরাই তারা সাজা পায়।
গল্পের মোড় ঘোরে যখন কায়ো লর্ডসে একটা ওয়ার্কশপে যোগদানের সুযোগ পায়। কিন্তু তার জন্যে খরচ প্রায় দেড় লাখ টাকা। কোচরা জানেন কায়োর বাবা এই টাকা কোনওদিন জোগাড় করতে পারবে না এই অল্প সময়ের মধ্যে। কিন্তু সেটা কী করে মানবে কায়োর বাবা? সে তার পি এফ থেকে ধার করার চেষ্টা করে। নিজের গাড়ি বেচে দিতে চায়। কোথা থেকে শোনে ধার করার জন্যে নাকি মোবাইল ফোন লাগে, সে কেনে। বিভিন্ন ব্যাঙ্কের দরজা ধাক্কায় “আমাকে দেড় লাখ টাকা ধার দেবেন প্লিজ! এই যে আমার ছেলে কায়ো… সে খুব ভাল ক্রিকেট খেলে… এই তো দেখুন না তার শিল্ড, কাপ, মেডেল, সার্টিফিকেট।” কেউ শোনে না তার কথা। কেউ ফিরেও তাকায় না। একজন একলা বাবা, একটা একলা শহরের মধ্যে সত্যি সত্যি একলা হয়ে যায় তার ছেলের ইচ্ছাপূরণের স্বপ্ন নিয়ে।
দাদু মানতে পারে না তার ছেলের ক্রিকেট নিয়ে এই বাড়াবাড়ির আদিখ্যেতা। একদিন রাতে প্রচণ্ড বকেন ছেলেকে। আর কায়ো রাগতে থাকে। সব সময় খিটখিট করা দাদুকে কিছু বলতে গেলে, বাবার দিকে তাকিয়ে কায়ো কিছু বলতে পারে না। কিন্তু কোথাও ছোট্ট হৃদয়ে… ছোট্ট মনে সে লুকিয়ে রাখে অভিমানের চাপানউতোর। বাবা সেটা বুঝতে পারে। বাবা রাতে ঘুম পাড়ানোর ছলে বলে সেই অলীক গল্প। একটা ছেলে যে কায়োর মতোই খুব ভাল ক্রিকেট খেলত। যে স্বপ্ন দেখত ভারতের হয়ে খেলছে সে! সারাদিন সে কায়োর মতোই ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্ন দেখত। তার পর একদিন যখন তার সত্যি ভারতের হয়ে খেলার সুযোগ এল তখন তার খুব কাছের বন্ধু বদমায়েশি করে তাকে আর খেলতে দিল না। সব স্বপ্ন মরে গেল তার। তার পর থেকে সে ক্রিকেট খেলা দেখে না। ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করে না। সে কষ্টে থাকে। দুঃখে। কে জানো সেই ছেলেটা? বাবা কেঁদে ফেলে গল্প বলতে বলতে। কায়ো জানতে পারে তার দাদুর আসল পরিচয়। নিমেষে চোখের সামনে বদলে যায় ছবিটা। দাদুকে এক রূপকথার হিরো বলে মনে হয় কায়োর।
কেউ একজন অফার দেয় বাবাকে, এক আন্ডার ওয়ার্ল্ডের দাদার ছেলের বিয়েতে ফেরারি গাড়ি চাই ‘বারাতি’র জন্য। বর যাবে। আর সেই গাড়ি যদি সে ভাড়া এনে দিতে পারে তা হলে বাবা হাতে পাবে দেড় লাখ টাকা! কায়ো তা হলে লর্ডস যেতে পারবে। কিন্তু শহরে একজনের কাছেই সে গাড়িটা আছে। সচিন তেন্ডুলকর। কে আনতে যাবে তার কাছে গাড়ি? আর কেনই বা সচিন দেবেন?
যে বাবা খুব সৎ পথে হাঁটত, যে বাবা কোনওদিন মিথ্যে বলেনি, যে বাবা কায়োর কাছে এক আদর্শ পুরুষ… স্বপ্নের রূপকার সেই বাবা কী ভাবে আনতে পারে ফেরারি? আর কায়োই বা কী করে? আদৌ কি সে যেতে পারে লর্ডস? এইসব নিয়েই ঘুরতে থাকে গল্প… এই নিয়েই ফেরারি কি সওয়ারির এক অনবদ্য পথ চলা।
তথ্যসূত্র
- "Ferrari Ki Sawaari Story, Preview & Synopsis"। ১৮ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১২।