প্রাইমেট
প্রাইমেট বর্গের কোন প্রাণীই মানুষদের প্রত্যক্ষ পূর্বসূরী নয়। কিন্তু বর্তমানে জীবন্ত অন্যান্য প্রাইমেট ও মানুষেরা এক সাধারণ বিবর্তনের ইতিহাসের অংশীদার। মানুষ ব্যতীত অন্যান্য প্রাইমেটদের আচরণ ও শারীরিক গঠন গবেষণা করে প্রাইমেটদের বিবর্তন সম্পর্কে তত্ত্ব দাঁড় করানো সম্ভব। মানুষের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য গবেষণা করে আমরা বোঝার চেষ্টা করতে পারি কীভাবে ও কেন প্রাইমেটদের একটি ধারা বিবর্তিত হয়ে মানুষের আবির্ভাব হল আর অন্য একটি ধারা বিবর্তিত হয়ে শিম্পাঞ্জি ও গরিলার আবির্ভাব ঘটল।
Primates[1] সময়গত পরিসীমা: Late Paleocene–recent | |
---|---|
![]() | |
Olive Baboon, Papio anubis | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণী |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | স্তন্যপায়ী |
অধঃশ্রেণী: | Eutheria |
মহাবর্গ: | Euarchontoglires |
বর্গ: | Primates Linnaeus, 1758 |
Families | |
| |
![]() | |
Range of the non-human primates (green) |
প্রাইমেটদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি এরকম --- পায়ের নিচের অংশে ও হাতের সামনের অংশে দুইটি হাড়ের উপস্থিতি, কাঁধ ও বক্ষ সংযোগকারী অস্থি বা কলারবোন, কোন কিছু আঁকড়ে ধরার জন্য হাতের বিশেষ গঠন, ঘনছকীয় বা স্টিরিওস্কোপিক দৃষ্টি, তুলনামূলকভাবে বড় মস্তিষ্ক, একবারে সাধারণত মাত্র একটি করে সন্তান উৎপাদন, অপত্যের পরিপক্কতাপ্রাপ্তির দীর্ঘ সময় এবং সামাজিক জীবন ও শিখনের উপর উচ্চমাত্রার নির্ভরশীলতা।
প্রাইমেট বর্গটি দুইটি উপবর্গে বিভক্ত—প্রোসিমিয়ান ও অ্যানথ্রোপয়েড। অ্যানথ্রোপয়েডদের তুলনায় প্রোসিমিয়ানেরা তথ্যের জন্য ঘ্রাণের উপর বেশি নির্ভরশীল। প্রোসিমিয়ানরা কান নাড়াতে পারে, এদের গোঁফ ও বড় নাক থাকে এবং এদের মুখের অঙ্গভঙ্গিতে তেমন কোন পরিবর্তন হয় না। অ্যানথ্রোপয়েডরা আবার টারজিয়ার, নতুন বিশ্ব বানর, পুরাতন বিশ্ব বানর এবং হোমিনয়েড (পঞ্জিড বা এপ, এবং হোমিনিড বা মানুষ) --- এই ভাগগুলিতে বিভক্ত। অ্যানথ্রোপয়েডদের মাথার খুলি গোলাকৃতি, এদের কান আকারে ছোট ও নড়নক্ষম নয়, এবং এদের মুখ ছোট ও চ্যাপ্টা, চোঙাকৃতি নয়। এরা হাতের কাজে অত্যন্ত কুশলী।
পঞ্জিড বা এপ জাতীয় অ্যানথ্রোপয়েডগুলি আবার ক্ষুদ্রাকার এপ (গিবন ও সিয়ামাং) এবং বৃহদাকার এপ (ওরাংউটান, গরিলা এবং শিম্পাঞ্জি) --- এই দুই শ্রেণীতে বিভক্ত।
গরিলা ও শিম্পাঞ্জিদের রক্তের রসায়ন ও মানুষের রক্তের রসায়নের অনেক মিল রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য অনেক শারীরিক ও আচরণিক দিক থেকেও এরা মানুষের মতন। বন্য শিম্পাঞ্জিরা প্রাকৃতিক বস্তুকে বিশেষ প্রয়োজনে হাতিয়ারে রূপান্তরিত করতে পারে। গরিলা ও শিম্পাঞ্জিরা প্রতীকী ভাষা শেখার ব্যাপারেও উঁচুমানের চিন্তাশক্তির প্রমাণ দিয়েছে।
প্রাইমেটদের বিভিন্ন শারীরিক ও আচরণগত বৈচিত্র্য পরিবেশের বিচিত্রতা, কাজকর্মের ভিন্নতা এবং পুষ্টির ভিন্নতা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। নিশাচর প্রাইমেটরা আকারে ছোট হয় এবং একা কিংবা খুব ছোট দলে বাস করে। দিবাচর প্রাইমেটদের মধ্যে বৃক্ষারোহী প্রাইমেটগুলি ভূমিচারী প্রাইমেটদের চেয়ে আকারে ছোট হয় এবং অপেক্ষাকৃত ছোট দলে বাস করে। ফলাহারী প্রাইমেটদের মগজ তুলনামূলকভাবে বড় হয়।
মানুষেরা অন্যান্য প্রাইমেটদের থেকে বিভিন্ন দিক থেকে আলাদা। মানুষেরা সম্পূর্ণ দ্বিপদী; এরা হাতের সাহায্য না নিয়েই দুই পায়ে চলাচল করতে পারে। মানুষের মগজ সমস্ত প্রাইমেটের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও জটিল, বিশেষত সেরিব্রাল কর্টেক্স এলাকায়। অন্য প্রাইমেটদের স্ত্রী জীবদের সাথে মনুষ্য স্ত্রীলোকদের পার্থক্য হল এরা বছরের যেকোন সময়ে যৌন প্রজননে অংশ নিতে পারে। মানুষের শিশুরা তুলনামূলকভাবে বেশিদিন নির্ভরশীল থাকে। অন্যান্য প্রাইমেটদের তুলনায় মানুষের আচরণের উপর সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রভাব অনেক বেশি। মুখের ভাষা এবং এক হাতিয়ার ব্যবহার করে অন্য আরও হাতিয়ার বানানোর বৈশিষ্ট্য মানুষের একান্তই নিজস্ব। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের মধ্যে খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য বিতরণ প্রক্রিয়াতে শ্রমবিভাজন পরিলক্ষিত হয়।
প্রাইমেটদের শ্রেণীবিন্যাস
|
তথ্যসূত্র
- Groves, C. (২০০৫)। Wilson, D. E., & Reeder, D. M., সম্পাদক। Mammal Species of the World (3rd সংস্করণ)। Johns Hopkins University Press। পৃষ্ঠা 111–184। আইএসবিএন ০-৮০১-৮৮২২১-৪।