প্যারীসুন্দরী দেবী

প্যারীসুন্দরী দেবী অবিভক্ত নদিয়া জেলানীল বিদ্রোহের নেত্রী। ইনি কুখ্যাত নীলকর কেনীর বিরুদ্ধে বৃহৎ কৃষক সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন।

প্যারীসুন্দরী দেবী
জন্ম?
মৃত্যু১৮৬০
আন্দোলননীল বিদ্রোহ

প্রথম জীবন

প্যারীসুন্দরী দেবী (মতান্তরে দাসী) ছিলেন নি:স্বন্তান বিধবা। তার বিবাহ হয় কৃষ্ণনাথ সিংহের সাথে। অল্প বয়েসেই বিধবা হন। তার পিতা রামানন্দ সিংহ ছিলেন কুমারখালি ইংরেজ রেশম কুঠির নায়েব। পরে মুর্শিদাবাদ নবাবের কাছে কাজ করার সময় মীরপুর এলাকায় জমিদারীর পত্তন করেন। কুষ্টিয়া জেলার মীরপুর থানার সদরপুরে ছিল তাদের আদি বসতি। তার কনিষ্ঠা কন্যা প্যারীসুন্দরী পিতার জমিদারির অর্ধাংশ লাভ করেন। ছোটবেলা থেকে মেধাবী ও পিতার বিষয়সম্পত্তি দেখাশোনায় পটু ছিলেন।

নীলকরের অত্যাচার

টমাস আইভান কেনী নামক নীলকর সাহেবের ক্রমাগত অত্যাচারে প্যারীসুন্দরীর প্রজারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। কুষ্ঠিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কেনীর দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পায়। সে জোরপূর্বক নীল চাষ করাতে থাকলে প্রজারা প্যারীসুন্দরীর কাছে প্রতিকারের আর্জি জানায়। কিন্তু প্যারীসুন্দরীর লাঠিয়ালদের পরাজিত করে কেনী তার ভাড়লকুঠি লুঠ করে ও অত্যাচারের মাত্রা বৃদ্ধি করে। মীর মশাররফ হোসেন তার 'উদাসীন পথিকের মনের কথা' বইতে কেনীর অত্যাচারের কাহিনী তুলে ধরেছেন[1]

বিদ্রোহে নেতৃত্ব

কেনীকে সমুচিত জবাব দিতে এই সাহসী নারী অগনিত চাষী মজুর, হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে একজোট করেন। তার ভরসায় বিপুল জনতা কেনীর শালঘর মধুয়ার কুঠি আক্রমন করে এবং কেনী পালিয়ে বেঁচে যায়। কেনী প্যারীসুন্দরীর বিরুদ্ধে মামলা করলে তিনি সগর্বে বলেন "আমার লাঠিয়াল কুঠি লুঠ করেছে জেনে আমার সুখবোধ হচ্ছে, বাঙালীর মেয়ে সাহেবের কুঠি লুঠ করেছি এর চেয়ে বেশি সুখের আর কি আছে" এই ঘটনায় অপমানিত কেনী ঘোষণা করেন প্যারীসুন্দরীকে জ্যান্ত ধরে আনলে একহাজার টাকা পুরষ্কার দেবে ও এই মহিলাকে সে কুঠিতে মেম সাজিয়ে রাখবে। এতে বিন্দুমাত্র না দমে সাহসী প্যারীসুন্দরী পাল্টা ঘোষণা করেন কেনীর মাথা যে এনে তার সামনে রাখবে, তাকে তিনি দেবেন একহাজার টাকার তোড়া। কৃষক জনতা ও প্যারীসুন্দরীর লাঠিয়াল আবার কেনীর কুঠি আক্রমন করে ধুলিস্বাত করে। কেনী পালিয়ে বাঁচলেও দারোগা মহম্মদ বক্স খুন হয় প্রজাদের হাতে।

মামলা

এবার প্যারীসুন্দরীর বিরুদ্ধে সরকারি মামলা শুরু হয়। বিচারের প্রহসনান্তে ইংরেজ সরকার তার সমুদয় সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে। প্যারীসুন্দরী এর বিরুদ্ধে এপিল করেন ও বহু টাকা ব্যয় করে জমিদারী ফেরত পান যদিও ঋনভারে জর্জরিতা হয়ে তাকে জমিদারীর বিরাট অংশ পত্তনীবন্দোবস্ত করে দিতে হয়। পরে তার দত্তক পুত্র তারিনীচরন সিংহকে দান করে দেন। এই নির্ভীক নারী ক্ষমতাবান নীলকর সাহেবের বিরুদ্ধে যে বিরাট অসম যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন তা ভারতের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে। ড. আবুল আহসান চৌধুরী লিখেছেন 'প্যারীসুন্দরী প্রজাদরদী, স্বদেশপ্রান ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় লালিত এক অসামান্য জননেত্রী'।[2]

তথ্যসূত্র

  1. কুমুদনাথ মল্লিক, বিলু কবীর সম্পাদিত (১৯৯৮)। নদীয়া কাহিনী। ঢাকা: বইপত্র। পৃষ্ঠা ৩৭৮, ৩৭৯।
  2. "নীলকরবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী"। দৈনিক সংগ্রাম। ৩০ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৫.০১.২০১৭ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.