পলিমারকরণ বিক্রিয়া

পলিমার রসায়নে একই পদার্থের অসংখ্য অণু বা একাধিক পদার্থের অসংখ্য অণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে বৃহৎ অণু গঠন করার প্রক্রিয়াকে পলিমারকরণ বিক্রিয়া (ইংরেজি: polymerization) বলে।[1] পলিমারকরন বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী বিক্রিয়ককে মনোমার এবং উৎপন্ন বৃহৎ অণুকে পলিমার বলে।[1]

পলিস্টিরিন পলিমারকরনের প্রক্রিয়া

ভূমিকা

বিক্রিয়ক এর কার্যকরী মূলক এবং স্টেরিক প্রভাবের উপর নির্ভর করে পলিমারকরণ বিক্রিয়া বিভিন্ন বিক্রিয়া কৌশল এর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।[2] সাধারণ পলিমারকরণ বিক্রিয়া তে অ্যালকিন সমূহ মুক্ত মূলক বিক্রিয়া কৌশল অর্থাৎ ফ্রী-রেডিক্যাল মেকানিজম অনুসারে পলিমার গঠন করে; অপরদিকে যেসব বিক্রিয়া তে কার্বনিল মূলক এর প্রতিস্থাপন এর প্রয়োজন হয়, তারা অধিকতর জটিল সংশ্লেষণ এর মাধ্যমে পলিমার গঠন করে।[2] অ্যালকেন সমূহ শুধুমাত্র শক্তিশালী অ্যাসিড এর উপস্থিতি তে পলিমার গঠন করে।[3]

যেহেতু অ্যালকিন সমূহ সাধারণ পলিমারকরণ বিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়, তারা ফ্রী-রেডিক্যাল মেকানিজম অনুসারে অনেক প্রয়োজনীয় যৌগ যেমন পলিইথিলিন এবং পলিভাইনাল ক্লোরাইড (পিভিসি) তৈরি করে, যা বাণিজ্যিক পণ্য যেমন পাইপিং, ইনসুলেসন, প্যাকেজিং ইত্যাদি উৎপাদন প্রক্রিয়া তে প্রয়োজনীয়তার কারনে প্রতি বছর অধিক পরিমাণে প্রস্তুত করা হয়।[2] সাধারণত, যে সব পলিমারে একই মনোমার ইউনিট পরপর যুক্ত হয়ে দীর্ঘ শিকল অথবা কাঠামো গঠন করে তাদের ''হোমোপলিমার'' বলা হয় যেমন পিভিসি, অপরদিকে যখন একাধিক মনোমার যুক্ত হয়ে পলিমার গঠন করে তখন তাদের ''কো-পলিমার'' বলা হয়।[4]

অন্যান্য মনোমার ইউনিট, যেমন ফরমালডিহাইড হাইড্রেটস অথবা সরল অ্যালডিহাইড, অল্প তাপমাত্রায় পলিমারাইজ হয়ে ট্রাইমার গঠন করে যা ৩টি মনোমার ইউনিট দ্বারা গঠিত, যা অধিকতর বিক্রিয়ার মাধ্যমে টেট্রামার অথবা চার মনোমার ইউনিট যৌগ গঠন করে। অধিকতর যৌগ সমূহ কে অলিগোমার বলা হয়ে থাকে।[2] সাধারণত ফরমালডিহাইড খুবই সক্রিয় ইলেক্ট্রোফাইল যা হেমিঅ্যাসিটাল ইন্টারমিডিইয়েটের নিউক্লিওফিলিক সংযোজন সমর্থন করে, যেটা সাধারণত স্বল্প-স্থায়ী এবং অস্থিতিশীল 'মধ্য-পর্যায়' যৌগ যা উপস্থিত অন্যান্য যৌগের সাথে বিক্রিয়া করে স্থায়ী পলিমারিক যৌগ গঠন করে।

প্রকারভেদ

পলিমারকরণ বিক্রিয়া সাধারণত দুই প্রকার হয়ে থাকে।

যুত বা সংযোজন পলিমারকরণ বিক্রিয়া

একই বিক্রিয়কের অসংখ্য অণু যখন যুক্ত হয়ে পলিমার তৈরী করে তখন তাকে যুত বা সংযোজন বিক্রিয়া (Addition polymerization) বলে।[5] যুত পলিমারকরণ বিক্রিয়ায় সাধারণত দ্বিবন্ধন বিশিষ্ট কোন অ্যালকিন অণু মনোমার হিসেবে বিক্রিয়া করে। এই বিক্রিয়ার সময় কোন প্রকার ক্ষুদ্র অণুর অপসারণ হয় না।

ইথিলিন থেকে পলিথিলিন তৈরীর যুত পলিমারকরন বিক্রিয়া

ঘনীভবন পলিমারকরণ বিক্রিয়া

যখন একাধিক যৌগের অসংখ্য অণু পরস্পরের সাথে বিক্রিয়া করে পলিমার তৈরী করে তখন তাকে ঘনীভবন পলিমারকরন বিক্রিয়া বলে। ঘনীভবন বিক্রিয়ায় সাধারনত অ্যালকোহল, অ্যালডিহাইড, অ্যামিন এবং জৈব অ্যাসিডের অণু মনোমার হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই বিক্রিয়ার সময় জলH2O) এবং কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) অণুর অপসারন হয়ে থাকে। নাইলন পলিমার ঘনীভবন পলিমারকরন বিক্রিয়ার দ্বারা তৈরী করা হয়। এছাড়াও একাধিক প্রাকৃতিক পলিমার (স্টার্চ, সেলুলোজ ইত্যাদি) ঘনীভবন পলিমারকরন পক্রিয়ার দ্বারা সৃষ্টি হয়ে থাকে।

নাইলন তৈরীর ঘনীভবন পলিমারকরন বিক্রিয়া

ফটোপলিমারকরণ

অধিকাংশ ফটোপলিমারকরণ বিক্রিয়া সাধারণত সংযোজন বিক্রিয়া বা চেইন-গ্রোথ পলিমারকরণ বিক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয় যেখানে দৃশ্যমান বা অতিবেগুনী আলো শোষণের মাধ্যমে বিক্রিয়ার সূচনা হয়। বিক্রিয়ক মনোমার সরাসরি আলো শোষণ করতে পারে, অথবা কোন ফটোসেনসিটাইজার প্রথমে আলো শোষণ করে এবং পরে সে শক্তি মনোমারে স্থানান্তর করে। একই মনোমারের তাপীয় পলিমারকরণের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সূচনা স্তর ভিন্ন হয়, বিস্তারণ স্তর, সমাপ্তি এবং চেইন স্থানান্তর স্তর অপরিবর্তিত থাকে।[6] স্টেপ-গ্রোথ বা ঘনীভবন ফটোপলিমারকরণ বিক্রিয়ায় শোষিত আলো ২টি কো-মনোমারের মধ্যে ঘনীভবন বিক্রিয়াকে প্রভাবিত করে যা আলোর অনুপস্থিতিতে বিক্রিয়া করে না। বিস্তারণ বা প্রোপাগেশন চক্র শুরু হয় না কারণ প্রতি স্তর বৃদ্ধিতে আলোর প্রয়োজন হয়।[7]

ফটোগ্রাফিক অথবা প্রিন্টিং প্রক্রিয়ায় ফটোপলিমারকরণ ব্যাবহার করা যায় কারণ শুধুমাত্র আলোক সংস্পর্শে আসা অঞ্চলেই পলিমারকরণ হয়। বিক্রিয়া শেষে অবশিষ্ট মনোমার সমূহকে আলোক সংস্পর্শে না আসা অঞ্চল থেকে অপসারণ করা হলে পলিমারিক ছবি পাওয়া যায়।[6] থ্রিডি প্রিন্টিং প্রক্রিয়ায় ফটোপলিমারকরণ ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।

তথ্যসূত্র

  1. রসায়ন দ্বিতীয় পত্র-সঞ্জিত কুমার গুহ
  2. Clayden, J., Greeves, N. and Warren, S. (২০০০)। Organic Chemistry। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 1450–1466। আইএসবিএন 0198503466।
  3. Roberts, Durward T., JR. and Lawrence E. Calihan (১৯৭৩)। "Polymerization (Polycondensation) of Alkenes over Fluosulfonic Acid and Antimony Pentafluoride"। Journal of Macromolecular Science: Part A- Chemistry7
  4. Cowie, J.M.G. (১৯৯১)। Polymers: Chemistry and Physics of Modern Materials। Chapman and Hall। পৃষ্ঠা 4। আইএসবিএন 0849398134।
  5. "My Academy :: Digital Book"www.myacademybd.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৮-০৬
  6. Jenkins, AD (২০০৪-০৯-০১)। "Contemporary polymer chemistry(3rd edition). HR Allcock, FW Lampe and JE Mark. Pearson Education, Inc(Pearson/Prentice Hall), Upper Saddle River, NJ, USA, 2003. ISBN 0-13-065056-0 pp xviii+ 814"Polymer International (ইংরেজি ভাষায়)। 53 (9): 1395–1395। doi:10.1002/pi.1494আইএসএসএন 1097-0126
  7. Soto, Marc; Sebastián, Rosa María; Marquet, Jordi (২০১৪-০৫-২৩)। "Photochemical Activation of Extremely Weak Nucleophiles: Highly Fluorinated Urethanes and Polyurethanes from Polyfluoro Alcohols"The Journal of Organic Chemistry (ইংরেজি ভাষায়)। 79 (11): 5019–5027। doi:10.1021/jo5005789
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.