নন্টে ফন্টে

নন্টে ফন্টে বাঙলা ভাষায় লিখিত জনপ্রিয় একটি চিত্রায়িত কৌতুক কাহিনীমালা বা কমিকস। একটি বিখ্যাত ভারতীয় বাঙ্গালী চিত্রশিল্পী নারায়ণ দেবনাথের কর্তৃক উদ্ভাবিত ও অঙ্কিত। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় মাসিক পত্রিকা 'কিশোর ভারতী'তে(১৯৬৯)। পরবর্তীতে দেব সাহিত্য কুটির থেকে বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে রঙিন সংষ্করণও প্রকাশিত হচ্ছে। এই কমিক থেকে পরে একটি এনিমেটেড ভিডিও সিরিজও নির্মিত হয়েছে।

বিবরণ

নন্টে ও ফন্টে সমবয়সী সহপাঠী দুই বন্ধু, তারা পশ্চিম বাংলার কোনো অজানা মফস্বল শহরের একটি বোর্ডিং স্কুলে থেকে লেখাপড়া করে। তাদের এই বোর্ডিং স্কুলের জীবনের ছোটখাটো বিভিন্ন মজার মজার ঘটনা নিয়েই এই কমিক। তাদের সাথে একই বোর্ডিংয়ে থাকে কেল্টু নামের পাজী ধরনের একটু বেশি বয়সের এক দুষ্টু ছাত্র, "কেল্টুদা" নামে যাকে বোর্ডিংয়ের বাকি ছাত্ররা সম্বোধন করে থাকে। অধিকাংশ গল্পের বিষয়বস্তু কেল্টুর সাথে নন্টে-ফন্টের রেষারেষি, যার পরিসমাপ্তি ঘটে কেল্টুর উচিত সাজার মাধ্যমে।

চরিত্রাবলী

কমিকের প্রধান চরিত্ররা সকলেই স্কুল হোস্টেলের বাসিন্দা। নন্টে ফন্টেসহ আরও কিছু ছাত্র এবং বোর্ডিংয়ের সুপারিন্টেনডেন্ট স্যার হলেন প্রধান চরিত্র। এছাড়াও রয়েছে হোস্টেলের বাবুর্চি ও অন্যান্য কাজের লোকজন। মাঝেমধ্যে স্কুলের হেডমাস্টার মহাশয়কেও দেখা যায়। গল্পের প্রায় সব চরিত্রের, বিশেষ করে ছাত্রদের রয়েছে হাস্যরস উদ্রেককারী অদ্ভুত সব ডাকনাম।

  • নন্টে:নন্টের বয়স ষোলো বছর নন্টে দেখতে প্রায় ফন্টের মতন তবে চেহারা কিছুটা ছিপছিপে। গল্পে তাকে অধিকাংশ সময় কমলা জামা পরে থাকতে দেখা যায়। তার চুল তুলনামূলক ভাবে বড় এবং পেছনে টিকি আছে । দুজনের চিন্তা ভাবনাও প্রায় একই রকম।নন্টে ও ফন্টে একে অপরের সবচেয়ে ভালো বন্ধু।
  • ফন্টে: পোষাক ও চালচলনে নন্টে ফন্টে অনেকটা এক রকম হলেও মাথার পিছনের টিকি না থাকায় ফন্টেকে আলাদা করা যায়। সাদা-কালো সংষ্করণে দুজনেরই পরনে সবসময় সাদা শার্ট এবং কালো হাফ-প্যান্ট থাকতো, তবে রঙিন সংষ্করণে দেখা যায় নীল শার্ট পরে থাকতে দেখা যায় ।
  • কেল্টু: হোস্টেলের মনিটর কেল্টু নন্টে-ফন্টের থেকে বয়সে বড়, এক ক্লাসে ছয়বার ফেল করা। আর সব ছাত্ররা তাই তাকে "কেল্টুদা" সম্বোধন করে। কেল্টু দেখতে লম্বা, শীর্ণকায় এবং কোঁকড়াচুলো। কমিকে আর-সব ছাত্রদেরকে হাফ-প্যান্ট পরনে দেখা গেলেও কেল্টুকে দেখা যায় ফুল-প্যান্টে, সম্ভবত তার অধিক বয়সের ইঙ্গিত। নন্টে-ফন্টেকে ও অন্যান্য কম বয়সীজন ছাত্রদেরকে দিয়ে সব কাজ করিয়ে নেয়ার জন্য কেল্টু বিভিন্ন রকম ফন্দি-ফিকির করে, ভয়-ভীতিও প্রদর্শন একেবারে বিরল নয়। মূলত সে খাবার হাতিয়ে নেওয়ার ফন্দি করে। তবে তার আঁটা ফন্দিতে প্রায়শই সে নিজে জব্দ হয়। কেল্টু সুপারিন্টেনডেন্ট স্যারকে খুশি রাখতে চায়, তবে অধিকাংশ গল্পেরই সমাপ্তি ঘটে এর উল্টো ঘটনা দিয়ে। প্রত্যেক পর্বে শুরুতে অবশ্য সে বরাবরই স্যারের স্নেহভাজন থাকে।
  • সুপারিন্টেনডেন্ট স্যার: হোস্টেল ও তার ছাত্রদের দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন টাক মাথা ও বিশাল বপুর অধিকারী ভোজনরসিক সুপারিন্টেনডেন্ট স্যার। ছাত্রদের কড়া শাসনে রাখতে পছন্দ করেন আর শাস্তি হিসেবে বেত মারাটাই তাঁর প্রিয়। অনেক গল্পেই দেখা যায় রাতে ঘুমানোর আগে তিনি নিয়মিত এক বাটি দুধ খান। অধিকাংশ গল্পেই তাকে নিয়ে বিভিন্ন রকম তামাশা করা হয় এবং প্রায়ই তিনি প্রচন্ড জোরে আছাড় খান। কয়েকটি জায়গায় তাঁর নাম উল্লিখিত হয়েছে "মিঃ পাতিরাম হাতি"।
  • অন্যান্য/অপ্রধান চরিত্র: উল্লেখযোগ্য অপ্রধান চরিত্রের মধ্যে রয়েছে হোস্টেলের রান্নাবান্নার দায়িত্বে নিয়োজিত বাবুর্চী বা ঠাকুর। একে বিভিন্ন গল্পে উড়িয়া, বিহারী বা ঢাকাই টানে কথা বলতে দেখা গেছে। হোস্টেলের অন্যান্য ছাত্রদের মধ্যে নেপচাঁদ, ল্যাংচা, বোঁচা এরকম কয়েকটি নাম ঘুরেফিরে আসতে দেখা গেছে। গল্পের খাতিরেই কখনো দুয়েকটি পোষা বা জংলী জীবজন্তুর আবির্ভাব ঘটলেও কোনটিই নিয়মিত নয়।

তথ্যসূত্র

    Bahubali

    বহিঃসংযোগ

    আরো দেখুন

    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.