দেওয়ানগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
দেওয়ানগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলাতে অবস্থিত একটি স্বনামধন্য ও প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৯১৯ সালে দেওয়ানগঞ্জ কো-অপারেটিভ স্কুল নামে এর যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি সরকারীকরন হয়[1]।
দেওয়ানগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় | |
---|---|
অবস্থান | |
21.168638 দেওয়ানগঞ্জ, ২০৩০ বাংলাদেশ | |
স্থানাঙ্ক | ২৫.১৬৮৮৭১° উত্তর ৮৯.৭৬৫৯৫৩° পূর্ব |
তথ্য | |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৯১৯ |
ক্যাম্পাসের আকার | ৪.২৯ একর (১৭,৪০০ মি২) |
ক্যাম্পাসের ধরন | শহুরে |
বোর্ড | মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ময়মনসিংহ |
ইতিহাস
ব্রিটিশ আমলে এই অঞ্চলের প্রাদেশিক রেজিস্ট্রার মি ডনোফন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে তৎকালীন কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটি চালু করার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়, যে কারনে এর নাম হয় দেওয়ানগঞ্জ কো-অপারেটিভ স্কুল। এসময় বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ছমির উদ্দিন তালুকদার স্কুলের জন্য ১২ বিঘা জমি দান করেন[2]। ১৯৮৬ সালে এটি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করে। ১৯৫২ সালের মহান মার্তৃভাষা আন্দোলনে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ছিল গৌরবউজ্জ্বল ভূমিকা। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকবাহিনী এই স্কুল দখল করে ব্যপক দমন, নিপীড়নের উদ্দ্যেশ্যে টর্চার সেল তৈরি করে[3]।
অবকাঠামো
দেওয়ানগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই বিদ্যালয়। সুবিশাল খেলার মাঠের এক প্রান্তে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত মূল ভবন যা এখন পরিত্যক্ত প্রায়। এর পাশেই একটি দ্বিতল ভবন সহ আরো কিছু অবকাঠামোতে চলছে পাঠদান সহ অন্যান্য কার্যক্রম। মাঠের এক পাশে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, এর পাশেই স্কাউট ভবন। অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সালে এই বিদ্যালয়কে বিশেষ বাজেটের অন্তর্ভুক্ত করে[4]।
শিক্ষা কার্যক্রম
গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, কম্পিউটার ল্যাব ও ল্যাবরেটরি সহ আধুনিক মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের ব্যবস্থা আছে এখানে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই বিতর্ক, সঙ্গীত, নৃত্য সহ বিভিন্ন সহপাঠ কার্যক্রমে পারদর্শী এবং বিভিন্ন জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে থাকে।
শিক্ষা-সহায়ক কার্যক্রম
- বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা
- সাংস্কৃতিক শিক্ষা
- বাংলাদেশ স্কাউটস
বিশেষ ঘটনা সমূহ
১৯৭১ সালের মার্চ মাসেই মুক্তি সংগ্রামের প্রস্তুতি হিসেবে এই বিদ্যালয়ের মাঠে মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চালু করা হয়। দেওয়ানগঞ্জ থানা থেকে অস্ত্র সরবরাহ করে সাহায্য করা হতো। এয়ার ফোর্সের রুহুল আমিন বাদশা এবং আনসার বাহিনীর কমান্ডার এসএম আব্দুল খালেক মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষন দিতেন। ১৯৭১ এর ২৬শে এপ্রিল পাকবাহিনী অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে, ভারি গোলা-বারুদ সহ দেওয়ানগঞ্জ আক্রমণ করে। এসময় তারা এই স্কুল দখল করে ব্যপক ক্ষতি সাধন করে এবং এখানে একটি "টর্চার সেল" তৈরি করে। পরবর্তিতে বিজয়ের প্রাক্কালে মুক্তিযোদ্ধারা এই স্থান আবার দখলে নেয়।
১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেওয়ানগঞ্জের বন্যা কবলিত মানুষকে দেখার জন্য আসেন। সেসময়ে তিনি এই স্কুলের খেলার মাঠে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন এবং সমবেত জনতার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন[5]) ।
উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- ভাষা সৈনিক বদিউর রহমান তালুকদার[6]
- ভাষা সৈনিক খোন্দকার আব্দুল মালেক শহীদুল্লাহ[7])
- হারুন হাবীব (গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের প্রখ্যাত আলোকচিত্রি, সাংবাদিক এবং বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ত সাহিত্যিক। তার লেখা গল্প সপ্তম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত আছে)
- প্রফেসর মুহম্মদ মোকাররম হোসায়েন (বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, খ্যাতিমান কবি এবং ডেমোক্রেসি ওয়াচের পরামর্শক[8])
আরো দেখুন
তথ্যসূত্র
- "দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা-বাংলা পিডিয়া"। ৫ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৯।
- বাংলা একাডেমী লোকজ ও সাংস্কৃতিক গ্রন্থমালা-জামালপুর, পৃষ্ঠা- ৫০
- "দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা-উইকিপিডিয়া"।
- "জামালপুরের ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণে প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ- নিউজ বাঙালিকন্ঠ"।
- "বঙ্গবন্ধু তোমাকে দেখেছিলাম - দৈনিক শেরপুরের আলো(তালাত মাহমুদ)"। line feed character in
|শিরোনাম=
at position 27 (সাহায্য) - "ভাষা সংগ্রামী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা: বদিউর রহমান তালুকদার- দৈনিক পূর্ব-পশ্চিম"।
- "এখনও স্বপ্ন দেখেন- দৈনিক জনকন্ঠ"।
- "প্রিয় শিক্ষক অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহম্মদ মোকাররম হোসায়েন- দৈনিক কালেরকন্ঠ"।