দিমিত্রি মেন্দেলিয়েভ

দিমিত্রি ইভানোভিচ মেন্দেলিয়েভ (রুশ: Дми́трий Ива́нович Менделе́ев ) একজন রুশ রসায়নবিদ ও উদ্ভাবক। তিনি মৌলিক পদার্থসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম বিশ্লেষণ করে মৌল সমূহের পর্যায়ভিত্তিক ধর্ম আবিষ্কার করেন এবং তা কাজে লাগিয়ে সর্বপ্রথম সার্থক পর্যায় সারণী তৈরি করেন। তার সময়ে যে মৌলসমূহ আবিষ্কার হয়নি তিনি সেগুলিরও ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম সম্পর্কে সফল ভবিষ্যতবাণী করে যান।

দিমিত্রি মেন্দেলিয়েভ
মেন্দেলিয়েভ, ১৮৯৭ সালে
জন্মদিমিত্রি ইভানোভিচ মেন্দেলিয়েভ
(১৮৩৪-০২-০৮)৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৩৪
ভার্খিনি আরেমজিয়েনি, রাশিয়ান সম্রাজ্য
মৃত্যু২ ফেব্রুয়ারি ১৯০৭(1907-02-02) (বয়স ৭২)
সেন্ট পিটার্সবার্গ, রাশিয়ান সম্রাজ্য
জাতীয়তারাশিয়ান
কর্মক্ষেত্ররসায়ন, পদার্থ বিদ্যা
প্রাক্তন ছাত্রসেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়
উল্লেখযোগ্য ছাত্রবৃন্দDmitri Petrovich Konovalov, Valery Gemilian, Alexander Baykov
পরিচিতির কারণপর্যায় সারণী
স্বাক্ষর

ছেলে বেলা ও পড়াশুনা

মেন্দেলিয়েভের জন্ম সাইবেরিয়ার তবলস্কের ভার্খিনি আরেমজিয়েনি গ্রামে। তার বাবা ইভান পাভলোভিচ মেন্দেলিয়েভ এবং মা মারিয়া দিমিত্রিয়েভনা মেন্দেলিয়েভা। মেন্দেলিয়েভের দাদা পাভেল ম্যাক্সিমোভিচ রাশিয়ান অর্থোডোক্স চার্চের একজন ধর্ম যাজক ছিলেন। ইভানোভিচ তার ভাল নামটি পান ধর্মতাত্বিক শিক্ষা গ্রহণের সময়। তিনি একজন অর্থোডক্স খ্রিস্টান ছিলেন যা তার পছন্দ ছিলনা। পরবর্তিতে তিনি ধর্ম ত্যাগ করেন এবং যৌক্তিক একেশ্বর বাদে বিশ্বাসী হোন।[1]

মেন্দেলিয়েভের সম্ভবত ১৪ বা ১৭ জন ভাই-বোন ছিল যার মধ্যে উনি ছিলেন সবচাইতে ছোট। তার বাবা ছিলেন চারুকলা, দর্শন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন। তার বাবা মাঝ বয়সেই অন্ধ হয়ে যান এবং তার চাকুরী হারান। তার মায়ের কাধে সংসারের হাল ধরার দায়িত্ব বর্তায়। তিনি গ্লাস ফ্যাক্টরিতে চাকুরী নেন। মেন্দেলিয়েভের তের বছর বয়সে তিনি তার পিতাকে হারান, যিনি দুর্ভাগ্যক্রমে মেন্দেলিয়েভের মায়ের কারখানাতে আগুনে পুড়ে মারা যান। মেন্দেলিয়েভ তবলস্কের জিমনেশিয়াম স্কুলে ভর্তি হন।

১৮৪৯ সনে মেন্দেলিয়েোভের মা তাকে সাইবেরিয়া থেকে মস্কো নিয়ে যান উচ্চ শিক্ষার জন্যে। মস্কো বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ছাত্র হিসেবে গ্রহণ করেনি। তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, যেখানে তিনি পেডালজিক্যাল ইন্সটিটিউটে শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিষয়ে পড়াশোনা করেন। তার পুরো পরিবার তার সাথে সেন্ট পিটার্সবার্গে চলে আসে। গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার পরে তার যক্ষ্মা হয় এবং যার ফলে তিনি ক্রিমিন পেনিনসুলায় চলে যান, জায়গাটা ছিল কৃষ্ণ সাগরের দক্ষিণে। সেখানে থাকাকালীন সময়ে তিনি একটি বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে কিছুকাল শিক্ষকতা করেন। ১৮৫৭ সনে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে সেন্ট পিটার্সবার্গে ফিরে আসেন।

পরবর্তি জীবন

১৮৫৯ থেকে ১৮৬১ সন পর্যন্ত মেন্দেলিয়েভ তরলের কৈশিকতাবর্ণালীমাপক যন্ত্র নিয়ে গবেষনা করেন। তখন তিনি হিডেলবার্গে ছিলেন। পরবর্তিতে ১৮৬১ সালে তিনি তার প্রথম বই প্রকাশ করেন যা ছিল বর্ণালীমাপক যন্ত্র সম্বন্ধে। ১৮৬২ সনের এপ্রিলে তিনি ফেউজভা নিকিতিশনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ১৮৬৪ ও ১৮৬৫ সালে যথাক্রমে সেন্ট পিটার্সবার্গ টেকনোলজিক্যাল ইন্সটিটিউট ও সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হন। ১৯৬৫ সনে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন তার গবেষনার বিষয় ছিল পানি ও অ্যালকোহলের মধ্যে সংযোগ। তিনি ১৮৬৭ সনে বিশেষ একাডেমিক ক্ষমতা 'Tenure' পান। ১৮৭১ সালের মধ্যে তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গকে স্বীকৃত ও স্বনামধন্য রাসায়নিক গবেষনার অন্যতম কেন্দ্রে রূপান্তর করেন। লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি তাকে সম্মানসূচক কোপলি মেডেল প্রদান করে।

১৮৭৬ সনের দিকে আনা ইভানোভা পপোভার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন এবং ১৮৮১ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কথিত আছে যে, আনাকে তিনি আত্মহত্যার হুমকি দেন যদি প্রত্যাখ্যাত হন। তিনি ১৮৮২ সালে নিকিতিশনাকে ডিভোর্স দেন এবং পপোভাকে বিয়ে করেন[2]। যদিও মেন্দেলিয়েভ বিচ্ছেদের পরে বিয়ে করেন দ্বিবিবাহকারী। অর্থোডক্স চার্চের নিয়ম ছিল পুনঃবিবাহের মধ্যবর্তি সময় কমপক্ষে সাত হওয়া। তার ডিভোর্স এবং পরিপার্শ্বিক বিতর্ক তাকে রাশিয়ান সায়েন্স একাডেমীর মেম্বার হওয়ার অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় যদিও তার কাজ কর্ম ইউরোপে যথেষ্ট সাড়া ফেলে দিয়ে ছিল। তিনি ১৮৯০ সালের ১৭ আগস্ট বহু বিতর্ক ও বাদানুবাদের মুখে তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গের শিক্ষকতার পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

১৮৯৩ সালে 'ব্যুরো অব ওয়েটস এন্ড মেজারমেন্টস' এর ডিরেক্টর হন। এই পদে থাকাকালীন সময়েই তিনি ভদকার উতপাদন কেমন হবে তার একটা নির্দেশনা প্রদান করেন।

মেন্দেলিয়েভ পেট্রোলিয়ামের সংযুতি অন্বেষণ করেন এবং রাশিয়ার প্রথম তেল শোধনাগার নির্মানে বড় অবদান রাখেন। তাকে প্রথম পেট্রলিয়ামকে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়[3]

তথ্যসূত্র

  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৮ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪
  2. http://gazeta.ua/index.php?id=157545&lang=ru
  3. http://books.google.com/books?id=BO9ocnho9P4C&lpg=PA546&pg=PA546#v=onepage&q&f=false
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.