ট্রাইটন (উপগ্রহ)
ট্রাইটন নেপচুন গ্রহের সর্বৃহৎ উপগ্রহ। ইংরেজ জোতির্বিদ উইলিয়াম ল্যাসেল ১৮৪৬ সালের ১০ই অক্টোবর এই উপগ্রহ আবিষ্কার করেন। এটিই একমাত্র বৃহৎ উপগ্রহ যে নিজের গ্রহের সাথে বিপরীত দিক মুখ করে ঘোরে (Retrograde Motion)। এই উপগ্রহ সৌরজগতের সপ্তম বৃহত্তম উপগ্রহ এবং এর ব্যাস প্রায় ২,৭০০ কি.মি.। এর নিজের গ্রহের সাথে বিপরীত দিক মুখ করে ঘোরা ও গঠন প্লুটোর মত বলে প্রথমে একে কুইপার বেল্ট থেকে ধারণকৃত বলে মনে করা হত। এর বায়ুমন্ডলে মূলত বরফের ন্যায় নাইট্রোজেন অবস্থিত। এর সাথে বরফের মিশ্রণও রয়েছে। এছাড়াও এখানে বরফের পাতলা আস্তরণ এবং কিছু পাথর ও ধাতুও রয়েছে। এর প্রকৃত ভরের দুই-তৃতীয়াংশ ভর এর কেন্দ্রে রয়েছে। এর ঘনত্ব প্রতি ঘনসেন্টিমিটারে ২.০৬১ গ্রাম এবং এর গঠনে ১৫-৩৫% বরফ রয়েছে। ট্রাইটন সৌরজগতের সেই চাঁদগুলোর মধ্যে অন্যতম যা এখনও ভূতাত্ত্বিকভাবে সচল। প্রকৃতপক্ষে এর এখনও যৌবন চলছে বলা যায়। এর পৃষ্ঠের দাগ নাইট্রোজেনের বলে ধারণা করা হয়। ট্রাইটনের একটি সংকুচিত বায়ুমন্ডল রয়েছে যা পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠের বায়ুমন্ডলের ১/৭০,০০০ ভাগ।
![]() ভয়েজার ২ photomosaic of Triton's sub-Neptunian hemisphere. The bright, slightly pinkish, south polar cap at bottom is composed of nitrogen and methane ice and is streaked by dust deposits left by nitrogen gas geysers. The mostly darker region above it includes Triton's "cantaloupe terrain" and cryovolcanic and tectonic features. Near the lower right limb are several dark maculae ("strange spots"). | |
আবিষ্কার | |
---|---|
আবিষ্কারক | উইলিয়াম ল্যাসেল |
আবিষ্কারের তারিখ | অক্টোবর ১০, ১৮৪৬ |
বিবরণ | |
উচ্চারণ | /ˈtraɪtən/ TRY-tən |
বিকল্প নামসমূহ | নেপচুন ১ |
বিশেষণ | ট্রাইটনিয়ান |
কক্ষপথের বৈশিষ্ট্য | |
অর্ধ-মুখ্য অক্ষ | 354 759 km |
উৎকেন্দ্রিকতা | 0.000 016[1] |
কক্ষীয় পর্যায়কাল | −5.876854 d (retrograde)[1] |
নতি | 129.812° (to the ecliptic) 156.885° (to Neptune's equator)[2][3] 129.608° (to Neptune's orbit) |
যার উপগ্রহ | নেপচুন |
ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ | |
গড় ব্যাসার্ধ | 1353.4 ± 0.9 km[4] (0.2122 Earths) |
পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল | 23 018 000 km2[lower-alpha 1] |
আয়তন | 10 384 000 000 km3[lower-alpha 2] |
ভর | 2.14×১০২২ kg (0.003 59 Earths)[lower-alpha 3] |
গড় ঘনত্ব | 2.061 g/cm3[4] |
বিষুবীয় পৃষ্ঠের অভিকর্ষ | 0.779 m/s2[lower-alpha 4] |
মুক্তি বেগ | 1.455 km/s[lower-alpha 5] |
ঘূর্ণনকাল | synchronous |
নাক্ষত্রিক ঘূর্ণনকাল | 5 d, 21 h, 2 min, 53s[5] |
অক্ষীয় ঢাল | ০ |
প্রতিফলন অনুপাত | ০.৭৬[4] |
তাপমাত্রা | 38 K[5] |
আপাত মান | ১৩.৪৭[6] |
পরম মান (H) | −1.2[7] |
বায়ুমণ্ডল | |
পৃষ্ঠের চাপ | 1.4–1.9 Pa[5] (1/70 000 the surface pressure on Earth)[8] |
গঠন | nitrogen; methane traces.[9] |
আবিষ্কার ও নামকরণ

অক্টোবর ১০, ১৮৪৬ সালে ব্রিটিশ জোতির্বিদ উইলিয়াম ল্যাসেল এই উপগ্রহ আবিষ্কার করেন। মাত্র ১৭ দিন আগে জার্মান জোতির্বিদ জোহান গটফ্রাইড গ্যালে এবং হেনরিচ লুইস ডি অ্যারেস্ট এই উপগ্রহ আবিষ্কার করেন। ফরাসী জোতির্বিদ ও গণিতবিদ আরবাইন লে ভেরিয়ার-এর শুরুকরা কাজ তারা শেষ করেন।
শোনা যায়, ১৮২০ সালের দিকে ল্যাসেল তার টেলিস্কোপকে আরো উন্নত করার জন্য সেখানে আয়না বসাচ্ছিলেন। নেপচুনের আবিষ্কারের সংবাদ শুনে জন হার্শেল ল্যাসেলকে চিঠি লেখেন এই পরামর্শ দিয়ে যে তিনি যেন বিভিন্ন উপগ্রহের খোঁজ করেন। এ কথা শুনে ল্যাসেল তাই করেন এবং এরই মাত্র আটদিনের মাথায় তিনি ট্রাইটন উপগ্রহ আবিষ্কার করেন।
ট্রাইটন উপগ্রহের নামকরণ করা হয় গ্রীসের পৌরাণিক চরিত্র পসেইডন-এর ছেলে গ্রীসের সমুদ্রদেবতা ট্রাইটন (Τρίτων)-এর নামানুসারে। ১৮৮০ সালে এই নামের পরামর্শ দেন ক্যামিলে ফ্ল্যামিরন-তার Astronomie Populaire গ্রন্থে। তবে এই নামকরণ করা হয় দ্বিতীয় উপগ্রহ নিরেইড-এর নামকরণের পর, ১৯৪৯ সালে। এর আগে এই উপগ্রহকে নেপচুনের উপগ্রহ নামানুসারে। ল্যাসেল তার নিজের উপগ্রহের নামকরণ করেননি। তবে কিছু বছর পর তিনি তার আবিষ্কৃত উপগ্রহের নামের পরামর্শ দেন। এরই মধ্যে তিনি শনির অষ্টম উপগ্রহ হাইপেরিয়ন, ইউরেনাস-এর ৩য় ও ৪র্থ উপগ্রহ (যথাক্রমে এরিয়েল ও আম্ব্রিয়েল) আবিষ্কার করেন। ইউরেনাসের উপগ্রহের নামকরণ করেন জন হার্শেল, ১৮৫১ সালে।
কক্ষপথ ও আবর্তন
ট্রাইটন তার সমগোত্রীয় অন্যান্য উপগ্রহের মধ্যে অনন্য এ কারণে, যে এই উপগ্রহ নিজের গ্রহের সাথে বিপরীত দিক মুখ করে ঘোরে। শনি ও বৃহস্পতির এবং ইউরেনাসের কিছু অনিয়মিত উপগ্রহ এই কাজ করলেও তারা খুবই ছোট (ট্রাইটনের সাপেক্ষে)। এদের মধ্যে বৃহত্তম উপগ্রহ ফিয়োবের ব্যাস, ট্রাইটনের ৮% ও এর ভর ট্রাইটনের ০.০৩%।
ট্রাইটনের কক্ষপথ নেপচুন-এর ঘূর্ণনের সাথে ৩০° এবং নেপচুনের কক্ষপথ ট্রাইটনের ঘূর্ণনের সাথে ১৫৭° কোণ উৎপন্ন করে। ট্রাইটন নেপচুনের কক্ষপথ ৬৭৮ বছরে (৪.১ নেপচুন বছর) একবার অতিক্রম করে, এর কক্ষপথকে নেপচুনের কক্ষপথের সাথে ১২৭° থেকে ১৭৩° কোণে আনতকরে। বর্তমানে ট্রাইটনের কক্ষপথ নেপচুনের কক্ষপথের সাথে সর্বোচ্চ সমতলীয় দূরত্বে রয়েছে, ১৩০° কোণে আনত হয়ে।
ট্রাইটন নেপচুনের সাথে আপেক্ষিক ঘূর্ণনে (Synchronous rotation আবদ্ধ। এই উপগ্রহ এর একদিক সর্বদা নেপচুনের একদিকের সাথে মুখ করে রাখে। বর্তমানে ট্রাইটনের ঘূর্ণন অক্ষ নেপচুনের কক্ষপথের সাথে প্রায় ৪০° কোণে যুক্ত। যেহেতু নেপচুন সূর্য-এর চারপাশে পরিভ্রমণ করে, একপর্যায়ে ট্রাইটনের মেরুঅঞ্চল সূর্যের দিকে ঘোরে। ফলে এর একদিকে ঋতু পরিবর্তন হয় এবং অন্যদিক তখন সূর্যের দিকে এগিয়ে আসে। এই আবিষ্কার অতি সম্প্রতি হয়েছে।
ট্রাইটনের পরিভ্রমণ প্রায় সম্পূর্ণ বৃত্তাকার এবং এর কেন্দ্রীয় উৎকেন্দ্রীকতা প্রায় শূণ্য। নেপচুনের মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও এরজন্য দায়ী। ধারণা করা হয় এর কারণে প্রায় ৩.৬ বিলিয়ন বছর পরে ট্রাইটন নেপচুনের রচে লিমিট (Roche limit)-এ পৌছবে, যার ফলে হয় এটি নেপচুনের বায়ুমন্ডলের সাথে সংঘর্ষ সৃষ্টি করবে, নাহয় ধ্বংস হয়ে নেপচুনের বলয় তৈরী করবে।
পর্যবেক্ষণ ও আবিষ্কার
ট্রাইটনের সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান বিজ্ঞানী্দের খুব বেশি হয়নি, যদ্দিন না ভয়েজার ২ নেপচুনের পাশ দিয়ে যায়, বিংশ শতাব্দির শেষভাগে। এর পর্যবেক্ষণ ১৯৩০ সালের আগে সম্ভব হয়নি এবং ভয়েজার ২-এর যাওয়ার আগে বিজ্ঞানীদের এর সম্পর্কে খুবই ভাসাভাসা জ্ঞান ছিল।
ভয়েজার ২ যাওয়ার আগে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল ট্রাইটনে তরল নাইট্রোজেন থাকতে পারে, এবং নাইট্রোজেন/মিথেন-এর ঘনত্ব পৃথিবীর ৩০% হতে পারে। মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে সেই বিখ্যাত অনুমান, যা পরে সত্যি হয়, তার মত ঘটনা এবার ঘটে না। এই প্রকল্প সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হয়।
ট্রাইটনের ব্যাস মাপার প্রথম চেষ্টা করেন জেরার্ড কুইপার, ১৯৫৪ সালে। তার করা পরীক্ষায় ফলাফল আসে ৩৮০০ কি.মি.। অন্যান্য বিজ্ঞানীদের চেষ্টায় এর পরিমাপ আসে ২৫০০-৬০০০ কি.মি.। ধারণা করা হয় এই উপগ্রহের পরিমাপ আমাদের পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের সমান বা পৃথিবীর অর্ধেক হবে। কিন্তু ভয়েজার ২ ২৫শে আগস্ট, ১৯৮৯ সালে আরো সূক্ষ্ণ পরিমাপ দেয় (২৭০৬ কি.মি.)।
নেপচুনের প্রতি নতুন যাত্রার সিদ্ধান্ত ও প্রকল্প হাতে নেয়া হয় ২০১০ সালে, নাসার মা্ধ্যমে। বিজ্ঞানীদের মতে ট্রাইটন অভিযানের একটা অন্যতম লক্ষ্য। তবে বর্তমান পর্যন্ত তেমন উল্লেখযোগ্য কোন অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি শনি বা ট্রাইটনের উদ্দেশ্যে।
আরো দেখুন
- List of geological features on Triton
- Neptune's moons in fiction
- Triton's sky
তথ্যসূত্র
- David R. Williams (২৩ নভেম্বর ২০০৬)। "Neptunian Satellite Fact Sheet"। NASA। ২০০৮-০২-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-১৮।
- Jacobson, R. A. — AJ (2009 April 3)। "Planetary Satellite Mean Orbital Parameters"। JPL satellite ephemeris। JPL (Solar System Dynamics)। ২০১১-১০-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2011-10-26। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) -
দৃষ্টি আকর্ষণ: এই টেমপ্লেটি ({{cite doi}}) অবচিত। doi দ্বারা চিহ্নিত প্রকাশনা উদ্ধৃত করার জন্য: 10.1088/0004-6256/137/5/4322 , এর পরিবর্তে দয়া করে
|doi= 10.1088/0004-6256/137/5/4322
সহ {{সাময়িকী উদ্ধৃতি}} ব্যবহার করুন। - "Planetary Satellite Physical Parameters"। JPL (Solar System Dynamics)। ২০১১-১০-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-২৬।
- McKinnon, William B.; Kirk, Randolph L. (২০০৭)। "Triton"। Lucy Ann Adams McFadden, Lucy-Ann Adams, Paul Robert Weissman, Torrence V. Johnson। Encyclopedia of the Solar System (2nd সংস্করণ)। Amsterdam; Boston: Academic Press। পৃষ্ঠা 483–502। আইএসবিএন 978-0-12-088589-3।
বিশেষ দ্রষ্টব্য
- Surface area derived from the radius r: 4*pi*r2.
- Volume v derived from the radius r: 4/3*pi*r3.
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে ট্রাইটন (উপগ্রহ) সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
- Triton Profile at NASA's Solar System Exploration site
- Triton page at The Nine Planets
- Triton page (including labelled Triton map) at Views of the Solar System
- Movie of Triton's rotation from the National Oceanic and Atmospheric Administration site
- Triton images from Planetary Photojournal
- Triton Nomenclature from the USGS Planetary Nomenclature web site
টেমপ্লেট:Moons of Neptune টেমপ্লেট:Neptune টেমপ্লেট:Solar System moons (compact)