জারুল

জারুল (ইংরেজি: Giant Crape-myrtle, Queen's Crape-myrtle, Banabá Plant, Pride of India[1]; বৈজ্ঞানিক নাম: Lagerstroemia speciosa) বাংলাদেশের নিম্নভূমির একান্ত অন্তরঙ্গ তরুদের অন্যতম। লেজারস্ট্রমিয়া গণের এই উদ্ভিদ দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রজাতি। এটি মধমাকৃতির পত্রমোচী বৃক্ষ। ম্লানধূসর মসৃণ কাণ্ডবিশিষ্ট জারুল ২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এর পত্র বৃহৎ, ৬-৮ ইঞ্চি দীর্ঘ, আয়তাকৃতির মসৃণ ও দেখতে গাঢ় সবুজ। এর পাতার পিঠের রঙ ঈষৎ ম্লান। এর পত্রবিন্যাস বিপ্রতীপ। মঞ্জরী অনিয়ত, শাখায়িত, বহুপৌষ্পিক ও প্রান্তিক। জারুলের ফুলের বেগুনি বর্ণ যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি শোভন-সুন্দর তার পাঁপড়ির নমনীয় কোমলতা। ছয়টি মুক্ত পাঁপড়িতে গঠিত এর ফুল। যদিও এর রং বেগুনি, তবুও অনেক সময় এর রং সাদার কাছাকাছি এসে পৌঁছায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম লেজারস্ট্রমিয়া স্পেসিওজা। নামটির প্রথমাংশ এসেছে সুইডেনের অন্যতম তরু অনুরাগী লেজারস্ট্রমের নাম থেকে। স্পেসিওজা ল্যাটিন শব্দ, অর্থ সুন্দর। জারুলের আদি নিবাস চীন, মালয় ও বাংলা-ভারতের জলাভূমি অঞ্চল।

জারুল
জারুল ফুল ও পাতা
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Plantae
বিভাগ: Magnoliophyta
শ্রেণী: Magnoliopsida
বর্গ: Myrtales
পরিবার: Lythraceae
গণ: Lagerstroemia
প্রজাতি: L. speciosa
দ্বিপদী নাম
Lagerstroemia speciosa
(এল.) পার্স.
জারুলের কাণ্ড

বর্ণনা

জারুল ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব বৃক্ষবাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও চীন, মালয়েশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে জারুলের সন্ধান মেলে[2]। নিম্নাঞ্চলের জলাভূমিতে এটি ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে, তবে শুকনো এলাকাতেও এদের মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় না। মাঝারি আকৃতির এই বৃক্ষটি শাখা-প্রশাখাময়। এর লম্বাটে পাতাগুলো পত্রদণ্ডের বিপরীতে সাজানো থাকে। এই পাতাঝরা বৃক্ষ শীতকালে পত্রশূণ্য অবস্থায় থাকে। বসন্তে নতুন গাঢ় সবুজ পাতা গজায়। গ্রীষ্মে ফোটে অসম্ভব সুন্দর বেগুনি রঙের থোকা থোকা ফুল। জারুল ফুলগুলো থাকে শাখার ডগায়, পাতার ওপরের স্তরে। প্রতিটি ফুলের থাকে ছ'টি করে পাঁপড়ি, মাঝখানে পুংকেশরের সাথে যুক্ত হলুদ পরাগকোষ। গ্রীষ্মের শুরুতেই এর ফুল ফোটে এবং শরত পর্যন্ত তা দেখা যায়।[3] জারুল কাঠ লালচে রঙের, অত্যন্ত শক্ত ও মূল্যবান। ঘরের কড়ি-বরগা, লাঙল, আসবাবপত্র ইত্যাদি বহুবিধ কাজে জারুল কাঠ সুব্যবহৃত। জারুলের ভেষজ গুণও রয়েছে - জ্বর, অনিদ্রা, কাশি ও অজীর্ণতায় জারুল উপকারী। জারুলের Lagerstroemia indica নামে ছোট একটি প্রজাতি রয়েছে, যা বৃহত্তর সিলেটকিশোরগঞ্জে প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়।

সাহিত্য-সংস্কৃতি

জীবনানন্দ দাশের কবিতায় জারুলের সরব উপস্থিতি লক্ষণীয়। তিনি লিখেছেন:

এই পৃথিবীর এক স্থান আছে - সবচেয়ে সুন্দর করুণ
সেখানে সবুজ ডাঙ্গা ভরে আছে মধুকুপী ঘাসে অবিরল,
সেখানে গাছের নাম: কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল।

কবি আহসান হাবীব এর স্বদেশ কবিতায়

এই ছবিটি চেনা।

মনের মধ্যে যখন খুশি

এই ছবিটি আঁকি

এক পাশে তার জারুল গাছে

দুটি হলুদ পাখি,

গ্যালারি

বেগুনি জারুলকে বর্ষা-জারুল ও বলে।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.