জাফরান
জাফরান (উচ্চারিত /ˈsæfrən/ বা /ˈsæfrɒn/ ) [1] জাফরান (গাছ) ফুল থেকে সংগ্রীহৃত এক প্রকারের মশলা যা সাধারণভাবে "জাফরান ক্রোকাস" নামে পরিচিত। জাফরন ফুলের প্রাণবন্ত গাঢ় লাল রঙের এবং শৈলীর গর্ভমুণ্ড ,যাকে জাফরন আঁশ বলা হয়, সংগ্রহ এবং শুকানোর মাধ্যমে জাফরন মশলা তৈরি করা হয় যা প্রধানত খাবারের স্বাদ এবং রঙের জন্য ব্যবহার করা।দীর্ঘদিন ধরে ওজন এর দিকে দিয়ে জাফরন হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মসলা। [2] [3] [4] যদিও জাফরনের উৎপত্তিতস্থল সম্পর্কে কিছু দ্বিমত আছে ,[5] তারপরেও এটা ধারনা করা হয় যে, জাফরন ইরান থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। [6] তারপরেও, গ্রীস [5] এবং মেসোপটেমিয়া [6] অঞ্চলকে জাফরনের উৎপত্তির সম্ভাব্য অঞ্চল হিসাবে ধারনা করা হয়। সি স্যাটিভাস সম্ভবত ক্রোকাস কার্টরাইটনাস এর একটি ট্রিপলয়েড ফর্ম। [7][8] জাফরন ক্রোকাস ধীরে ধীরে ইউরেশিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পরেছিল এবং পরে উত্তর আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা ও ওশেনিয়া অংশে ছড়িয়ে পরেছিল।


জাফরান এর স্বাদ এবং খড় এর মত সুবাস হচ্ছে উৎপত্তি হচ্ছে রাসায়নিক জৈব যৌগ পিক্রক্রোছিন এবং সাফ্রানল থেকে । [9] [10] আবার জাফরনে ক্যারোটিনয়েড রঙ্গক এবং ক্রসিন রয়েছে, যা খাবার এবং কাপড়ে সোনালি-হলুদ রঙ এর সৃষ্টি করে। ৭ম শতাব্দীতে অ্যাসিরিয়ান রাজা আশুরবানিপাল দ্বারা সঙ্কলন করা উদ্ভিদসংক্রান্ত গ্রন্থে জাফরনের ইতিহাসের নথীভুক্তি পাওয়া যায়, [11] এবং চার হাজার বছর এর বেশী ধরে এর ব্যাবসা ও ব্যবহার চালু রয়েছে । বর্তমানে বৈশ্বিক উৎপাদনের প্রায় ৯০% অংশ ইরান হচ্ছে। [12]
ব্যুৎপত্তি
জাফরনের ইংরেজি শব্দ "saffron" উৎপত্তি ঘিরে সুনির্দিষ্টতার অভাব রয়েছে। ধারনা করা হয় যে এটি ১২ শতকের প্রাচীন ফরাসি শব্দ সাফরান থেকে উৎপত্তি হতে পারে, যা ল্যাটিন শব্দ safranum থেকে উৎপত্তি হয়েছে যা আবার আরবী শব্দ জাফরান থেকে এসেছে [13] যা আবার ফার্সি শব্দ জার্পারান থেকে এসেছে যার অর্থ "সুবর্ণ পাপড়ি দিয়ে ফুল"। [14]
প্রজাতি সমূহ
বিবরণ

চাষকৃত জাফরন ক্রোকাস, ক্রোকাস সাটিভাস, হচ্ছে শরৎকালীয়- বহুবর্ষজীবী সপুষ্পক উদ্ভিদ যা বন্য পরিবেশে জন্মায় না। এটি সম্ভবত পূর্বাঞ্চলীয় ভূমধ্যসাগরীয় শরৎকালীয় সপুষ্পক উদ্ভিদ ক্রোকাস কার্টওয়াইটিয়ানাস থেকে উৎপত্তি হয়েছে, [15] যা "বন্য জাফরন" নামেও পরিচিত [16] এবং যা ক্রিট বা মধ্য এশিয়ায় অঞ্চলসমুহ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। [17] সি থোমাসি এবং সি পলসসি প্রজাতিসমুহ হচ্ছে জাফরন এর অন্যান্য সম্ভাব্য উৎস। [15] [18] জিনগত একই ধরনের হুবুহু নকল হিসাবে, [17] এটি ধীরে ধীরে ইউরেশিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পরে।

এটি একটি নির্বীজ বহুক্রোমোজোম বিশিষ্ট প্রজাতি, যার অর্থ হচ্ছে প্রতিটি প্রজাতির জীন তিনটি সমস্থানিক সেট এর ক্রোমোজোম দ্বারা গঠিত; সি সাটিভাস এর প্রতি সেটে ৮ টি ক্রোমোসোমাল বহন করে, সর্বমোট যাতে ২৪ টি ক্রোমোজোম পাওয়া যায়। [16] নির্বীজ হবার কারনে সি সাটিভাস কার্যকর বীজ উৎপাদন করতে ব্যর্থ; পরাগায়নের জন্য মানব সহয়তার প্রয়োজন; অর্থাৎ ভূগর্ভস্থ, কন্দ এর মত দেখতে জাফরন গাছের কাই-সংরক্ষণকারী অঙ্গ অর্থাৎ এর কান্ডগুচ্ছ সমূহকে অবশ্যই খুঁড়ে তুলে ভাগ করতে হয় এবং পুনঃরায় মাটিতে রোপন করতে হয়। একটি কান্ড মাত্র এক মৌসুম বেঁচে থাকে, যার ফলে পরবর্তী মৌসুমে চাষ করার জন্য একে উদ্ভিদভিত্তিক বিভাগের মাধ্যমে দশটি "কান্ড" উৎপাদন করতে হয় [19] এই সংক্ষিপ্ত কান্ডগুলি সাধারনত ছোট, বাদামী রঙের হয় যার ব্যাস ৫ সেমি (২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হতে থাকে, এটি সমতল হয়ে থাকে, এবং সমান্তরাল আঁশ দ্বারা ঘনসন্নিবেশিত হয়; এই আঁশসমুহকে "কান্ড ঝিল্লী" বলা হয়। কান্ডগুলিতে আবার , পাতলা এবং জাল এর মতো খাড়া আঁশ থাকে, যা উদ্ভিদ এর ঘাড় উপরে ৫ সেমি (২ ইঞ্চি) পর্যন্ত বাড়তে থাকে। [16]

জাফরান গাছের ৫-১১ দিন বয়সী সাদা এবং অ-সালোকসংশ্লেষী অঙ্কুর গুলো দেখতে কচি পাতার মতো হয়ে থাকে। এই ঝিল্লি-মত কাঠামোগুলি ৫ থেকে ১১ দিন বয়সী নতুন পাতাগুলিকে ঢেকে রাখে এবং রক্ষা করে যা ধীরে ধীরে বেড়ে উঠে এবং বেঁকে যায়। পরবর্তীতে পাতাগুলো পাতলা, সোজা ধার বিশিষ্ট সবুজ রঙের হয়ে থাকে, যা্র ব্যাস ১–৩ মিমি (০.০৪–০.১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়ে থাকে, ,এবং যা গাছের ফুল ফোটার পর খোলে বা ছড়িয়ে পরে("হাইটস্টারথাস") অথবা ফুল ফোটার সাথে সাথে তারা ছড়ায় ("সিনানথোস")। কিছু লোক ধারনা করে যে, সি. স্যাটিভাস প্রজাতীর গাছের অঙ্কুর তার চাষমৌসুমের আগে চাশাবাদ শুরু করলে তার পাতাসমূহ ফুল ফোটার আগেই ছড়িয়ে পরে। এই গাছের ফুল বহনকারী কাঠামো বা কান্ডে ব্র্যাক্টোলেস বা বিশেষ ধরনের পাতা গজায় যা ফুলের বোঁটা থেকে অঙ্কুরিত হয়া যা পত্রবৃন্ত হিসাবে পরিচিত হয়। [16] বসন্তে মুকুল এর পত্রবিন্যাসের পর, উদ্ভিদ তার আসল পাতা গজায়, যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ সেমি (১৬ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়ে থাকে। শুধুমাত্র অক্টোবরে, অধিকাংশ উদ্ভিদ তাদের বীজ ছেড়ে দেইয়ার পর তাদের উজ্জ্বল বর্নের ফুল তৈরি করে; যাদের রঙ হালকা বেগুনী রঙের বর্ণ থেকে বিলেখিত ফিকে লাল রঙের বর্ণের হয়ে থাকে।[20] ফুলের সুবাস একটি মিষ্টি, মধুর মত হয়ে থাকে। ফুল ফোটার পর, গাছের উচ্চতা ২০–৩০ সেমি (৮–১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং যাতে সংখ্যায় ৪টি ফুল ধারন করতে পারে। প্রতিটি ফুল থেকে একটি তিন প্রান্তিক গর্ভমুণ্ড বের হয় যা দৈর্ঘ্যে ২৫-৩০ মি.মি. (১-১.২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতিটি প্রান্তিক গাঢ়লাল রঙের গর্ভমুন্ডে গিয়ে শেষ হয়, যা ফুলের গর্ভপত্র এর দূরবর্তী অংশ। [19] [16]
চাষ
জাফরন ক্রোকাস, সম্ভবত ক্রোকাস কার্ট্রাইটিয়ানাস থেকে উদ্ভদ হয়েছে যা বন্য পরিবেশে জন্মায় না। এটি একটি বহু ক্রোমোজোমক্রোমোজোম বিশিষ্ট যা "স্ব-অসঙ্গতিপূর্ণ" এবং পুরুষ নির্বীজ; এই ঊডভীডে বিচ্যুত কোষ বিভাজন হয় ও স্বাধীন ভাবে বংশবৃদ্ধি করতে অসমর্থ হয় যার ফলে বাহ্যিক "বিভাজন এবং স্থাপন" বা আন্তঃপ্রজাতী শঙ্করীকরণের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করতে হয়। [18] [15]
ক্রোকাস সাটিভাস ব্যাপক হারে বেড়ে উঠে ভূমধ্যসাগরীয় জীবাঞ্চল এলাকায় যা বৈশিষ্ট্যর দিক থেকে উত্তর আমেরিকার জীবাঞ্চলের মতো এবং একই রকম জলবায়ু বিষিষ্ট অঞ্চল বিশেষ করে যে এলাকায় গরম ও শুষ্ক গ্রীষ্মকালীন মৃদুমন্দ বাতাস অর্ধ-শুষ্ক ভূমির উপর দিয়ে বয়ে যায়। তা সত্ত্বেও এই গাছ শীতকালীয় ঠান্ডা আবহাওয়ায় বেঁচে থাকতে পারে, বিশষ করে −১০ °সে (১৪ °ফা) তাপমাত্রার হিম বাতাস সহ্য করার পাষাপাশি সংক্ষিপ্ত সময়ের তুষারপাতও সহ্য করতে পারে।[19] [20] কাশ্মীরের মতো আর্দ্র পরিবেশের বাইরে জাফরনের চাষ করতে হলে সেচের প্রয়োজন হয় বিশেষ করে যেখানে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান ১,০০০–১,৫০০ মিমি (৩৯–৫৯ ইঞ্চি) এবং গ্রীসের (৫০০ মিমি অথবা ২০ ইঞ্চি)ও স্পেনের (৪০০ মিমি অথবা ১৬ ইঞ্চি) জাফরান চাষের ক্রমবর্ধমান অঞ্চল সমূহ যা ইরান এর প্রধান প্রধান জাফরান চাষের অঞ্চলের চেয়ে অনেক শুকনো। এইসব স্থানে জাফরান চাষ সম্ভব হয় সাধারনত উপযুক্ত সময়ে বর্ষা ঋতুর আগমনের কারনেন এবং বসন্তে খুবই ভালো পরিমান এর বৃষ্টি ও গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া অনুকূল শুষ্ক হবার কারনে। ফুল ফোটার আগে বৃষ্টি হলে প্রচুর পরিমানে জাফরন উৎপন্ন হয় তবে ফুল ফোটার সময় বৃষ্টি ও ঠান্ডা আবহাওয়ার কারনে ফুল রোগাক্রান্ত হয় এবং জাফরানের উৎপাদন কমে যায়। টানা আর্দ্র এবং গরম আবহাওয়ার ফলে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, [19] এবং খরগোশ, ইঁদুর এবং পাখি দ্বারা মাটি খুঁড়ে জাফরন কান্ড বের করার ফলে ফসলের ক্ষতি হয়। নিমাতোডা[প্রানী] গনের প্রানী দ্বারা,পাতায় ফাংগাস এর আক্রমন এবং কান্ডে পচনের কারনেও ফসলের ক্ষতি হয়। তবুও বেসিলাস সাবটিটিস প্রজাতির গাছের কলমের কারনে চাষিদের জাফরনা চাষ লাভজনক হয় কারনে এতে কান্ড দ্রুত বেড়ে উঠে এবং ভালো পরিমানে জাফরনে ফুলের গর্ভমুণ্ড তৈরি হয়। [21]
- "Saffron – Definition and More"। Merriam-Webster। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১২।
- Rau 1969।
- Hill 2004।
- "World's COSTLIEST spice blooms in Kashmir"। Rediff। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০১৩।
- Gresta, F.; Lombardo, G. M. (২০০৮)। "Saffron, an alternative crop for sustainable agricultural systems. A review": 95–112। doi:10.1051/agro:2007030।
- Ghorbani, R.; Koocheki, A. (২০১৭)। "Sustainable Cultivation of Saffron in Iran"। Sustainable Agriculture Reviews। Springer। পৃষ্ঠা 170–171। doi:10.1007/978-3-319-58679-3। আইএসবিএন 978-3-319-58679-3।
- Schmidt, Thomas; Heitkam, Tony (২০১৯)। "Adding color to a century-old enigma: multi-color chromosome identification unravels the autotriploid nature of saffron (Crocus sativus) as a hybrid of wild Crocus cartwrightianus cytotypes"। doi:10.1111/nph.15715। PMID 30690735। আইএসএসএন 1469-8137।
- Harpke, Dörte; Meng, Shuchun (২০১৩-০৩-০১)। "Phylogeny of Crocus (Iridaceae) based on one chloroplast and two nuclear loci: Ancient hybridization and chromosome number evolution": 617–627। doi:10.1016/j.ympev.2012.10.007। PMID 23123733। আইএসএসএন 1055-7903।
- McGee 2004।
- Katzer, G. (২০১০)। "Saffron (Crocus sativus L.)"। Gernot Katzer's Spice Pages। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১২।
- Russo, Dreher এবং Mathre 2003।
- Ghorbani 2008।
- "Saffron"। Online Etymology Dictionary, Douglas Harper। ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১৬।
- Asbaghi, Asya (১৯৮৮)। Persische Lehnwörter im Arabischen। O. Harrasowitz। আইএসবিএন 978-3447027571। ওসিএলসি 19588893।
- Grilli Caiola 2003।
- Kafi et al. 2006।
- Rubio-Moraga এবং অন্যান্য 2009।
- Negbi 1999।
- Deo 2003।
- Willard 2002।
- Sharaf-Eldin et al. 2008।