গোলাপ

গোলাপ এক প্রকার সুপরিচিত ফুল যা আধুনিক মানুষের কাছে সৌন্দর্যের প্রতীক ও ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে সমাদৃত। গোলাপকে ফুলের রাণী বলা হয়। Rosaceae পরিবারের Rosa গণের এক প্রকারের গুল্ম জাতীয় গাছে গোলাপ ফুল ফুটে থাকে। প্রায় ১০০ প্রজাতির বিভিন্ন বর্ণের গোলাপ ফুল রয়েছে। গোলাপ পাঁপড়ির গড়ন ও বিন্যাসে একরূপ নান্দনিকতা রয়েছে যা মানুষকে আকৃষ্ট করে। সুগন্ধী গোলাপের ঘ্রাণও মানুষের প্রিয়। তবে গোলাপের নিজস্ব কোন গন্ধ নেই। গন্ধ উৎপাদনের কোন ক্ষমতা গোলাপের নেই। অনেক বর্ণের গোলাপ জন্মে থাকে।যেমন গোলাপী, লাল, হলুদ, সাদা, সবুজ ইত্যাদি। ইতোমধ্যে "গার্ডেন রোজ" নামে বিভিন্ন হাইব্রিড গোলাপেরও উৎপাদন করা হচ্ছে। যেগুলো একই সাথে একই ফুলের পাপড়িতে দুই বা ততোধিক রঙের হতে পারে।

হলুদ গোলাপ

Rose / গোলাপ
লাল গোলাপ
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: উদ্ভিদ
বিভাগ: সপুষ্পক উদ্ভিদ
শ্রেণী: ম্যাগ্নোলিয়োসিড
বর্গ: রোসালেস
পরিবার: রোসাসিয়া
উপপরিবার: রোসোইডিয়া
গণ: রোসা
L.
Species

Between 100 and 150, see list

গোলাপ

গোলাপ গাছের কাণ্ডে কাঁটা থাকে। এর পাতার কিনারাতেও ক্ষুদ্র কাঁটা রয়েছে। গোলাপের আদি নিবাস এশিয়া মহাদেশে। অল্প কিছু প্রজাতির আদি বাস ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, ও উত্তরপশ্চিম আফ্রিকা মহাদেশে। ফুলের সৌন্দর্য ও সুবাসের জন্য গোলাপ বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত। [1]

গোলাপ সমন্ধে ইতিহাস

বাাংলাদেশের গোলাপ ফুল

গ্রীক উপকথায় আছে প্রেমের দেবী ভেনাস এর পায়ের রক্ত থেকে গোলাপ এর জন্ম। আরব দেশীয় কাহিনীতে আছে সাদা গোলাপকে বুলবুলি পাখি আলিঙ্গন করায় বুলবুলি পাখি গোলাপ এর কাটায় আহত হয়ে বুলবুলি পাখির রক্ত থেকে সাদা গোলাপ থেকে লাল গোলাপ এর জন্ম। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীতে আছে বিষ্ণু ব্রহ্মাকে পদ্ম-ই শ্রেষ্ঠ ফুল বললে ব্রহ্মা বিষ্ণুকে স্বর্গে নিয়ে সেখানে হালকা রঙের একটি সুগন্ধি গোলাপ দেখান। গোলাপ সমন্ধে এইরকম অনেক গল্প আছে।[2] যশোরের ঝিকরগাছার গদখালিতে গোলাপের চাষ করা হয় । গদখালী ফুলের রাজধানী নামে খ্যাতি লাভ করেছে ।

কয়েক জাতের বিদেশী গোলাপ

১. রানি এলিজাবেথ, ২. ব্ল্যাক প্রিন্স, ৩. ইরান, ৪. মিরিন্ডা, ৫. পাপা মিলাঁ, ৬. আইসবার্গ, ৭. রোজ গুজার্ড, ৮. বেংগলি, ৯. কুইন এলিজাবেথ, ১০. জুলিয়াস রোজ, ১১. ডাচ গোল্ড, ১২. সানসিল্ক, ১৩. কিংস র‌্যানসন, উল্লেখযোগ্য।[2]

কয়েক জাতের বাংলাদেশী গোলাপ

১. ফাতেমা ছাত্তার ২. মল্লিক ৩. রাহেলা হামিদ ৪. পিয়ারী ৫. ভাসানী ৬. শের-এ-বাংলা ৭. ১৯৫২ ৮. জয়ন্তি, ৯. শিবলী উল্লেখযোগ্য। [2]

গোলাপের ব্যবহার

গোলাপ ফুল যে সৌন্দর্যের প্রতীক, তাই নয়। এর রয়েছে বহুমুখী ব্যবহার। গোলাপের পাপড়ি থেকে জ্যাম,জেলি প্রস্তুত করা হয়। পার্সি,চীন ও ভারতে গোলাপজলের প্রচলন ঘটে।সুগন্ধির জন্য গোলাপজল ব্যবহার করা হয়।গোলাপ ফুলের সুবাসকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী তৈরি করা হয়।যেমন:পারফিউম,সাবান ইত্যাদি।গোলাপে গেনারিয়ল নামে একটি অ্যারোম্যাটিক অ্যালকোহল জাতীয় পদার্থ পাওয়া যায়।যা এর সুগন্ধের জন্য দায়ী। মেয়েদের অন্তর্বাস ও ন্যাপকিনেও গোলাপের সুগন্ধ ব্যবহার করা হয়।অর্নামেন্টারি উদ্ভিদ হিসেবে গোলাপের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য।গোলাপ থেকে তেলও উৎপাদিত হয়।[3]

চিকিৎসাক্ষেত্রে গোলাপের গুরুত্ব

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী গোলাপের রয়েছে উল্লেখযোগ্য ব্যবহার।গোলাপ ভিটামিন এ,সি, বি৩ ও ই এর অন্যতম উৎস।গোলাপজল "রিলাক্সিং এজেন্ট" হিসেবে ব্যবহৃত হয় যা স্নায়ুগুলোকে সতেজ করে।গোলাপ পাপড়ির চা আলসার, অ্যাজমা, ডিহাইড্রেশন সহ বিভিন্ন রোগ নিরাময় করতে সহায়তা করে। জ্বর,র্যাশ প্রতিরোধ করে।গোলাপ চা পিত্তথলি ও যকৃতকে ভালো রাখে।এছাড়া গোলাপজল চুলের বৃদ্ধির জন্য উপকারী।[4]

চাষাবাদ

দিনে অন্ত:ত ৫ ঘণ্টা সূর্যালোক পায় এমন আবহাওয়া গোলাপের জন্য উপযুক্ত।অতি বৃষ্টিযুক্ত স্থানে রোপন করা যাবেনা। ফুল বেশি ধরে সাধারণত নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাসে। তবে আগষ্ট থেকে মার্চ পর্যন্ত লাগানোর ভাল সময় আর সর্বোত্তম সময় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর।ফুলের জন্য মে-জুন মাসে ৬০-৯০ সে.মি গভীর বেড তৈরি করে নিতে হয়।যেকোন উর্বর ও নিষ্কাশিত জমিতেই গোলাপ ভাল জন্মে। বিকালের পর এবং সন্ধ্যা নামার আগে গোলাপ গাছ লাগানোর সর্বোত্তম সময়। প্রাথমিক অবস্থায় শিকড়ে হালকা পানি দিতে হয় নিয়মিত।কীট দূরীকরণের কীটনাশক হিসেবে জমিতে ২ মি.লি ফলিথেয়ন, ১০% বি.এইচ.সি, ১০% ডিডিটি,১ মি.লি মেলাথিয়ন,পাউড্রে মিডলিউ ও ব্ল্যাক স্পট স্প্রে প্রতি লিটার পানিতে দু'গ্রাম করে মিশিয়ে জমিতে দিলে কীটপতঙ্গ সংক্রমণ কম হয়।[5]

বংশবিস্তার

গোলাপের বংশ বিস্তারের জন্য  পরিস্থিতিভেদে শাখা কলম, দাবা কলম, গুটি কলম ও চোখ কলম প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নতুন নতুন গোলাপের জাত উদ্ভাবনের জন্য বীজ উৎপাদন করে তা থেকে চারা উৎপাদন করা হয়।

জমি নির্বাচন

গোলাপ রোপণের জন্য উর্বর দোআঁশ মাটির জমি নির্বাচন করা সবচেয়ে উত্তম। যেখানে জলাবদ্ধতা হয় না অথবা ছায়াবিহীন উঁচু জায়গা, এরূপ জমিতে গোলাপ ভালো জন্মায়।

চিত্রশালা

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

  • চিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। "rose"। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস।
  • গোলাপের ছবি
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.