খান সারওয়ার মুরশিদ

খান সারওয়ার মুরশিদ ( ১ জুলাই, ১৯২৪ - ৮ ডিসেম্বর, ২০১২) বাংলাদেশের একজন বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদ। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ভাষা আন্দোলন সহ বাংলাদেশের সকল গণ-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের নেপথ্য রূপকারদের তিনি একজন। আজীবন তার পেশা ছিল শিক্ষকতা; এবং শিক্ষক হিসাবে তিনি ছিলেন এক কিংবদন্তিতূল্য প্রতিভা। ১৯৪৭-এ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কিছু পর ইংরেজি ত্রৈমাসিক পত্রিকা নিউ ভ্যালুজ প্রকাশনা করে তিনি দেশের বিদ্যোৎসমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেলন।

খান সারওয়ার মুরশিদ
জন্মখান সারওয়ার মুরশিদ
(1924-07-01) ১ জুলাই ১৯২৪
ঢাকা
মৃত্যু৮ ডিসেম্বর, ২০১২
পেশাশিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ববাংলাদেশী
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিকালের কথা
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারবাংলা একাডেমী পুরস্কার
দাম্পত্যসঙ্গীনূরজাহান বেগম

জীবদ্দশায় তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন।[1] ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া খান সারওয়ার মুরশিদ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যানেরও দায়িত্বও পালন করেছেন।

জন্ম, শিক্ষা ও কর্মজীবন

তার জন্ম ১৯২৪ খ্রীস্টাব্দের ১ জুলাই তারিখে। পিতা আলী আহমদ খান ছিলেন মুসলিম লীগের রাজনীতিবিদ; প্রথমে অবিভক্ত বাংলা ও ১৯৪৭-এর পর পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য। বাড়ীতেই শিক্ষানুকূল পরিবেশে প্রাথমিক শিক্ষা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জর্জ হাইস্কুলে আনুষ্ঠানিক অধ্যয়নের শুরু। এ স্কুলের ছাত্র হিসাবে ১৯৩৯ খ্রীস্টাব্দের প্রবেশিকা (বতর্মান এস.এস.সি) পরীক্ষায় পাস। ফেনী সরকারি কলেজ থেকে এফ. এ (ইন্টারমিডিয়েট)। কিছুদিন কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়াশুনা। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগে অধ্যয়ন।
১৯৪৮-এ ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যে এম. এ. ডিগ্রী অর্জ্জন।[2] এ বছরই নূরজাহান বেগমের সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ। স্ত্রী নূরজাহান বেগম স্বাধীনতা পরবর্তীকালে আওয়ামী সরকারের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৪৮ খ্রীস্টাব্দে ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগ দান। ১৯৪৯ খ্রীস্টাব্দে ইংরেজি ত্রৈমাসিক নিউ ভ্যালুজ-এর গোড়াপত্তন। অভিজাত শ্রেণীর এ পত্রকাটি ১৯৬৬-এ বন্ধ হয়ে যায়। অল্প পরে ব্রিটেনের নটিংহাম বিশ্বিবদ্যালয়ে গমন এবং পিএইচ.ডি'র জন্য গবেষণা: বিষয়বস্তু ইয়েটস, হাক্সলে এবং এলিয়টের ওপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাব।

১৯৫১ খ্রীস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করেন প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী ‘সংস্কৃতি সংসদ।’। ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ১৯৬১ খ্রীস্টাব্দে রবীন্দ্র-জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক। ১৯৬৫ খ্রীস্টাব্দ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন।

১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদের দায়িত্ব পালন।
১৯৭৫ পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরীতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের পদে নিয়োগ।[2] ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত গণ-আদালতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত গণতদন্ত কমিশনের সদস্য। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যূর আগ পর্যন্ত তিনি মানবাধিকার ভিত্তিক সংস্থা নাগরিক উদ্যোগের চেয়ারম্যান ছিলেন।

প্রকাশনা

বৃদ্ধিজীবি এবং চিন্তাবিদ হিসেবে প্রসিদ্ধি থাকলেও তার লেখালিখির পরিমাণ খুবই কম৤ তার একমাত্র গ্রন্থ কালের কথা ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দ মাওলা ব্রাদার্স কর্তৃক প্রকাশিত। তবে তার কিছু ইংরেজী প্রবন্ধ-নিবন্ধ অগ্রন্থিত অবস্থায় রয়েছে।

মৃত্যূ

দীর্ঘ দিন তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। ২০০৪-এ হৃদপিন্ডের সারাই হয়েছিল সফল। বেলজিয়ামের ব্রাসেলস শহরের হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা করাতেন। ২০১২-এর মাঝামাঝি শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ধরা পড়লে অক্টোবরে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।[3] চিকিত্সাধীন অবস্থায় তিনি একাধিকবার হূদরোগে আক্রান্ত হন। ডিসেম্বরের শুরুতে সম্শ্চেপূর্তণ নিশ্চেতন হয়ে পড়লে তাকে কৃত্রিম ব্যবস্থায় শ্বাসপ্রশ্বাস দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়।[4] ৮ ডিসেম্বর ২০১২ ঘন কুয়াশাস্নাত অপরাহ্নে অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।[2][5] মৃত্যুকালে খান সারওয়ার মুর্শিদের বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

পুরস্কার ও সম্মাননা

  • ১৯৯৬ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক "আজীবন সম্মাননা" প্রদান।
  • ২০০৬ : জাহানারা ইমাম স্মৃতি পদক
  • ২০০৮ : কণ্ঠশীলন পুরস্কার।
  • ২০১০: বাংলা একাডেমী পুরস্কার।
  • ২০১০: তার সম্মানে স্মারক গ্রন্থ প্রকাশন: খান সারওয়ার মুরশিদ সংবর্ধনা গ্রন্থ [6]

তথ্যসূত্র

  1. "খান সারওয়ার মুরশিদ আর নেই"। ৯ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১২
  2. বরেণ্য শিক্ষাবিদ খান সারওয়ার মুরশিদ আর নেই
  3. বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত হবেন খান সারওয়ার মুরশিদ
  4. কৃত্রিম উপায়ে বেঁচে আছে খান সারওয়ার মুরশিদ
  5. "খান সারওয়ার মুরশিদের মৃত্যুতে খালেদা জিয়ার শোক"। ১২ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১২
  6. প্রকাশ হলো ‘খান সারওয়ার মুরশিদ সংবর্ধনা গ্রন্থ’

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.