আবদুল গনি

নবাব আবদুল গণি (১৮৩০ - ১৮৯৬) ঢাকার বড় জমিদারদের মধ্যে অন্যতম। তিনি উনিশ শতকের শেষার্ধে পূর্ববঙ্গের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ঢাকার জমিদার নবাব খাজা আহসানউল্লাহ্‌ ছিলেন তার পুত্র এবং নবাব সলিমুল্লাহ ছিলেন তার নাতি। ঢাকার এই নবাব পরিবারের সদস্যরা আজীবন ঢাকাতেই বাস করেছেন এবং ঢাকাতেই তারা পরলোকগমন করেছিলেন। নবাব আবদুল গণির পূর্বপুরুষেরা ছিলেন কাশ্মিরী। এ পরিবারটি ঢাকাবাসীর কাছে 'নবাব পরিবার' ও 'খাজা পরিবার' হিসেবে পরিচিত ছিল।

নবাব খাজা আবদুল গনি
ঢাকার নবাব
নবাব খাজা আবদুল গনি
রাজত্বকাল১৮১৩-১৮৯৬
জন্ম(১৮১৩-০৭-৩০)৩০ জুলাই ১৮১৩
জন্মস্থানবেগম বাজার, ঢাকা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু২৪ আগস্ট ১৮৯৬(1896-08-24) (বয়স ৮৩)
মৃত্যুস্থানআহসান মঞ্জিল, ঢাকা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
সমাধিস্থলবেগম বাজার, ঢাকা
পূর্বসূরিনবাব খাজা আলিমুল্লাহ
উত্তরসূরিনবাব খাজা আহসানুল্লাহ
দাম্পত্যসঙ্গীইসমাতুন্নেসা
রাজবংশঢাকা নবাব পরিবার
পিতানবাব খাজা আলিমুল্লাহ
মাতাজিনাত বেগম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

নবাব আবদুল গণির জন্ম ১৮৩০ সালে। তাকে নবাব উপাধিতে ভূষিত এবং তা বংশানুক্রমে ব্যবহার করার অধিকার দিয়েছিলেন তৎকালীন বৃটিশ সরকার। তার জমিদারি এবং বৃটিশ সরকারের সাথে সু-সম্পর্ক তাকে আরও প্রভাবশালী করে তুলেছিল। তার বাসভবন আহসান মঞ্জিলে দরবার ছিল যেখান থেকে তিনি পঞ্চায়েত এর মাধ্যমে তার জমিদারির প্রজাদের সহ ঢাকার মুসলমানদের নিয়ন্ত্রন করতেন। তিনি বর্তমান ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের আদি ছাত্রদের একজন। তার সহপাঠীদের মধ্যে, ঢাকা ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা ব্রজসুন্দর মিত্র, জমিদার নিকি পোগজ, জমিদার মৌলভী আব্দুল আলী ছিলেন অন্যতম। আবদুল গণিকে মাত্র আঠারো বছর বয়সে পরিবারের কর্তৃত্ব গ্রহণ করতে হয়েছিল[1]

কর্মজীবন

নবাব আবদুল গণির ইংরেজ শাসকদের সাথে শখ্যতা গড়ে তোলেন মাত্র সাতাশ বছর বয়সে। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের সময় তিনি ইংরেজদের অর্থ, হাতি, ঘোড়া, নৌকা সবকিছু দিয়ে খুবই সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেছিলেন। সে জন্য বাংলার শাসক হ্যালিডের রিপোর্টে গণি মিয়ার নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। ১৮৬০ সালে ঢাকায় মুসলমান শিয়া-সুন্নীদের দাঙ্গা যখন ইংরেজ সরকার থামাতে ব্যর্থ হয়েছিল তখন নবাব আবদুল গণি নিজের চেষ্টায় তিন দিনের মধ্যে ঢাকা শহরকে শান্ত করেছিলেন। এ জন্য সরকার তাকে সি.এস.আই (কম্পানিয়ন অব দি অর্ডার অফ দি স্টার অব ইন্ডিয়া) উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। ১৮৬৭ সালে ভাইসরয় তাকে আইন পরিষদের সদস্য হিসেবে মনোনীত করেন। ১৮৭৫ সালে তাকে বংশানুক্রমিক 'নবাব' উপাধি দেওয়া হয়। ১৮৬৮ সালে কে.সি.এস.আই (কিং কম্পানিয়ন অব দি অর্ডার অফ দি স্টার অব ইন্ডিয়া) উপাধি লাভ করেন।

ঢাকা শহরে নবাব আবদুল গণির প্রভাব প্রতিপত্তের প্রতীক ছিল আলী মিয়ার কেনা রংমহল। যা বর্তমানে 'আহসান মঞ্জিল' নামে পরিচিত। তিনি বাড়িটিকে মেরামত করে ছেলের আসহানউল্লাহ্‌ এর নামে নামকরণ করেন। বাড়িটি ঢাকাবাসীর কাছে 'নবাব বাড়ী' হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিল। ঢাকা শহরের শাহবাগ, বেগুনবাড়ী সহ অনেকাংশেরই মালিক ছিলেন নবাব আবদুল গণি। তিনি বেগুনবাড়ীতে চা বাগান করেছিলেন। ঢাকায় পেশাদারী ঘোড়দৌড় শুরু করেছিলেন বলে অনেকের মতে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানও নাকি নবাব আবদুল গণির সম্পত্তি ছিল। তখন ঘোড়দৌড় ঢাকায় শহুরে বিনোদন হিসেবে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

নবাব আবদুল গণিই ঢাকা শহরে প্রথম বিশুদ্ধ পানির সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিলেন। ১৮৭৯ সালে নবাব আবদুল গণির কে.সি.এস.আই উপাধি পাওয়া এবং প্রিন্স অফ ওয়েলসের সুস্থ হয়ে ওঠা উপলক্ষে সরকারকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দান করেছিলেন। তখন একটি কমিটি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ঢাকাবাসীর জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হবে। নবাব আবদুল গণি আরও প্রায় দুই লক্ষ টাকা দান করেছিলেন এই প্রকল্পে।

ব্যক্তিগত জীবনে আবদুল গণি দুই বার বিয়ে করেছিলেন। তার সন্তানাদির সংখ্যা ছিল ছয় জন। ১৮৭৭ সালে খাজা পরিবারের দায়িত্বভার দিয়েছিলেন পুত্র আহসান উল্লাহের উপর। ১৮৯৬ সালে যেদিন তিনি পরলোকগমন করেন সেদিন ঢাকার সকল স্কুল, কলেজ, অফিস-আদালত বন্ধ ছিল।

১৮৭৫ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রিন্স অফ ওয়েলস, এলবার্ট এডওয়ার্ড (সপ্তম এডওয়ার্ড) উপমহাদেশ  সফরের অঙ্গ হিসাবে কলকাতায় আসেন। কলকাতায় তার পদার্পণ স্মরণীয় করে রাখতে নবাব আবদুল গণি একটি কারুকার্যমন্ডিত পথপার্শ্ব মন্ডপ স্থাপন করেন। স্থাপত্যটির উৎসর্গ ফলকে এখনো পড়া যায় নবাব গনি ও নবাব আহসানুল্লাহ-র নাম।  ভগ্ন ও পরিচর্যাহীন দশাতে আজও কলকাতার ফেয়ারলী প্লেস ও স্ট্র্যান্ড রোডের সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে আছে এই স্মৃতিস্তম্ভ।  স্থাপত্যটির মধ্যে প্রতিদিন চলে একটি চায়ের দোকান।   

তথ্যসূত্র

  1. সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ৩৩-৩৪।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.