কে এম ওবায়দুর রহমান

কে এম ওবায়দুর রহমান (জন্ম: ৫ মে ১৯৪০ - মৃত্যু: ২১ মার্চ ২০০৭) একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতা, সাবেক সাংসদ এবং সাবেক মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশের প্রথম, দ্বিতীয়, সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ সদস্য।[1][2][3][4][5]

কে এম ওবায়দুর রহমান
জন্ম(১৯৪০-০৫-০৫)৫ মে ১৯৪০
মৃত্যু২১ মার্চ ২০০৭(2007-03-21) (বয়স ৬৬)
অ্যাপোলো হাসপাতাল ঢাকা, বাংলাদেশ
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
শিক্ষাএমএ
যেখানের শিক্ষার্থীঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ
পিতা-মাতা
  • খন্দকার মোঃ আতিকুর রহমান (পিতা)
  • মাতা রাবেয়া বেগম (মাতা)

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন

কে এম ওবায়দুর রহমানের জন্ম ৫ মে ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব বাংলার ফরিদপুরের নগরকান্দার লস্করদিয়া গ্রামে। তার পিতা খন্দকার মোঃ আতিকুর রহমান ও মাতা রাবেয়া বেগম। ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে লেখা-পড়ার পর তিনি ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাস করেন।

রাজনৈতিক ও কর্মজীবন

কে এম ওবায়দুর রহমান ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় একবার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও দুইবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২-১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে তিনি আইয়ুব বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৩ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের ছয় দফা আন্দোলন সমর্থন করেন এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন। তিনি ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ১৯৬৬-১৯৭১ সালে সমাজকল্যাণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। অসহযোগ আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। ফরিদপুর জেলা সমন্বয় ও প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক হিসেবে তিনি অসহযোগ আন্দোলনে ফরিদপুরে যুব সমাজকে সংগঠিত করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পরে তিনি ভারতে চলে যান এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতের পুরুলিয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে পলিটিক্যাল মোটিভেটর এবং পরে কলকাতায় আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয় পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তখন তিনি আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। [1]

তিনি ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৩-১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের ডাক ও তার প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পর তিনি খোন্দকার মোশতাক আহমেদের সরকারে যোগ দেন। [6] ১৯৭৫ সালের জেল হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন তিনি। [7] ২০০৪ সালে জেল হত্যা মামলায় তিনি খালাস পেয়েছিলেন।[8]

১৯৭৮ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) যোগ দেন এবং ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি প্রথমে মৎস্য ও পশুপালন এবং পরে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬-১৯৮৮ সালে তিনি বিএনপি’র মহাসচিব ছিলেন। এর পর এরশাদের সামরিক সরকারের চাপে নির্বাচনী প্রতীক হিসাবে চাকা নিয়ে জনতা দল গঠন করেছিলেন। এই দল থেকে সর্বশেষ ১৯৯১ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হয়েছিলেন। [9][10] খালেদা সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবারো যোগ দেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে।

জুন ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে ফরিদপুর-২ আসনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[4][5][10] আমৃত্যু বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৬৪ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে দশ বছরের অধিককাল কারান্তরীণ ছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবন

কে এম ওবায়দুর রহমান বিয়ে করেছিলেন অধ্যাপক শাহেদা ওবায়েদকে। তাদের এক কন্যা শামা ওবায়েদ। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-২ থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। [11] শামা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক। [12][13][14]

মৃত্যু এবং উত্তরাধিকার

কে এম ওবায়দুর রহমান ২১ মার্চ ২০০৭ সালে বাংলাদেশের ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে মারা যান। তাকে ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলা লস্করদিয়া গ্রামে সমাহিত করা হয়। [1][13]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Islam, Sirajul (২০১২)। "Rahman, KM Obaidur"Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh (Second সংস্করণ)। Asiatic Society of Bangladesh
  2. "১ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (PDF)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা।
  3. "২য় জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (PDF)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা।
  4. "৭ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (PDF)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা।
  5. "৮ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (PDF)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা।
  6. "Bangabandhu's men - on Aug 15 and after"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১২-০৮-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-২৪
  7. "Next date of Jail Killing Case hearing fixed Feb 15"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ১৯৯৯-০১-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-২৪
  8. "Jail Killing Case"The Daily Star। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-২৪
  9. "WHAT KHALEDA DID"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৫-০৭-২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০৪
  10. "কে এম ওবায়দুর রহমান"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০৪
  11. "Shama poses challenge to AL stalwart Sajeda"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৮-১২-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-২৪
  12. "Daughter not allowed to visit Obaidur Rahman"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ১৯৯৯-০১-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-২৪
  13. "KM Obaid passes away"The Daily Star। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-২৪
  14. "BNP ready with three formulas for election-time government"Dhaka Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-২৪

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.