কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ কুড়িগ্রাম বাংলাদেশের একটি সরকারি কলেজ । এই কলেজটি কুড়িগ্রাম কলেজ নামে পরিচিত। আধুনিক সুযোগ সুবিধা সহ শ্রেণীকক্ষ, গবেষণাগার, গ্রন্থাগার এবং সাধারণ কক্ষ রয়েছে। কলেজ রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে মুক্ত ফলে কলেজটি উপজেলার অন্যতম কলেজের স্বীকৃতি পেয়েছে।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ
নীতিবাক্যজ্ঞনই শক্তি
ধরনসরকারি কলেজ
স্থাপিত১৯৬১ [1]
অধ্যক্ষপ্রফেসর আব্দুল মান্নান
ঠিকানা
উলিপুর-চিলমারী সড়ক
, ,
শিক্ষাঙ্গনশহর
সংক্ষিপ্ত নামকু.স.ক
অধিভুক্তিজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, দিনাজপুর
ওয়েবসাইটওয়েবসাইট

দারিদ্রপীড়িত পশ্চাদপদ ১৬টি নদ-নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত কুড়িগ্রাম জেলার উচ্চ শিক্ষায় অবদান রাখছে প্রাচীন বিদ্যাপীঠ কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ। ১৯৬১ সালে স্থাপিত এ কলেজে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু হলেও নানামুখী সংকট ও সমস্যায় সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে।[2]

ইতিহাস

বিস্তৃত সবুজ মাঠের উত্তর দিকে রয়েছে প্রাচীন অশ্বত্থবৃক্ষ। কত কালের কত সুখ-দুঃখের নীবর সাক্ষী এ মহীরুহ। প্রধান ভবন ছাড়া ও রয়েছে এ্যাকাডেমিক ভবন, ব্যবসায় শিক্ষাভবন, একাডেমিক কাম পরীক্ষা হল, ছাত্রীনিবাস, ছাত্রাবাস, মসজিদ, ছাত্রদের সাইকেল গ্যারেজ। এ্যাকাডেমিক ভবনের পাশেই রয়েছে আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাসের অনন্য স্মারক একুশেমঞ্চ। এই অসাধারণ ঐতিহাসিক স্থাপনটি নির্মাণের প্রধান উদ্যোক্তা ও রূপকার কলেজের সম্মানিত প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আবুল কাশেম সরকার। তার ইতিহাস বোধ ও প্রগতিশীল চেতনা ছাড়া এরকমের একটি শহীদ মিনার তৈরি প্রায় অসম্ভব ছিল। প্রায় পাঁচলক্ষ টাকা ব্যয়ে জাতীয় শহীদ মিনারের আদলে এশহীদ মিনারটি উত্তরাঞ্চল তথা দেশের অন্যতম বৃহৎ শহীদ মিনার। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যায় বাংলাদেশের রক্তাক্ত সংগ্রামের অবিনাশী উত্তরাধিকারেদীপ্ত এ শিক্ষায়তন। এ কলেজেরই কৃতী পুরুষ ইসলামের ইতিহাসও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোঃআব্দুল ওয়াহাব একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে প্রাণদেন। বর্তমান ছাত্রাবাসের নামকরণ তার নামেই করা হয়েছে। ষাটের দশকে ক্রীড়া ক্ষেত্রে এ কলেজের ছিল সুনাম ও খ্যাতি। ১৯৬৪সাল থেকে ১৯৬৭সাল পর্যায় স্কুলের প্রাক্তন বিশিষ্ট শিক্ষক ক্রীড়াবিদ জনাব বিশ্বনাথ রুদ্র। এর মধ্যে ১৯৬৪ সালে উলিপুরের জনাব আমজাদ হোসেন তালুকাদারের সঙ্গে(পরবর্তীতে জাতীয় সংসদ সদস্য, উলিপুর) তিনি যুগ্ন চ্যাম্পিয়ান হন। কলেজের অধ্যক্ষ এবং পরবর্তীতে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সচিব প্রফেসর মোঃ মোখলেসুর রহমানের চেষ্টা ও আন্তরিকতায় ১৯৯৭ সালের ৫টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালুর মধ্যদিয়ে এ কলেজের নবতর যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী বছর আরো ৭টি বিষয়ে অনার্স কোর্স খোলার অনুমোদন দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। উল্লেখ্য অনার্স প্রবর্তনের ক্ষেত্রে এসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ও জি. এস বিশিষ্ট রাজনীতিক মোঃজাফর আলী (জাতীয় সংসদ সদস্য)। এ সময় কমিটির সার্বিক কার্যক্রমের সমন্বয়ক ছিলেন উপাধ্যক্ষ জনাব মোঃ আব্দুল আলী। কুড়িগ্রামের বিশিষ্ট রাজনীতিক মোঃজাফর আলী সংসদ সদস্য থাকাকালিন সময়েই ২০১১ সালে (শিক্ষাবর্ষঃ ২০০৮-২০০৯) ৬টি বিষয়ে মাষ্টার্স কোর্স চালু হয়। এ ছাড়াও তার সময়েই ২০১২ সালে আরো দুইটি বিষয়ে মাষ্টার্স কোর্স চালু হয়। এ সময় সার্বিক কার্যক্রমের সমন্বয়ক ছিলেন কলেজের সুযোগ্য অধ্যক্ষ প্রফেসর সাবিহা খাতুন। তাকে সর্বাত্নক সহযোগিতা করেন উপাধ্যক্ষ জনাব মোঃ তোফায়েল হোসেন। প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃআবুল কাশেম সরকারের নিরন্তর চেষ্টার ফলে ২০০৬-২০০৭ শিক্ষা বর্ষে রসায়ন ও পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স কোর্স শুরু হয়। (শুধু তাই নয়, একুশে মঞ্চের মত গুরুত্বপূর্ণ শহীদ মিনার নির্মাণ, কলেজের সীমানা প্রাচীর তৈরি আভ্যন্তরিণ সড়কনির্মাণ, সাইকেল গ্যারেজ নির্মাণ প্রভৃতি প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসথ মোঃআবুল কাশেম সরকার এর কর্মস্পৃহা ও প্রশাসনিক দক্ষতার পরিচয়। কলেজের দৃষ্টি নন্দন শৈল্পিক মনোগ্রামটি বিনা পারিশ্রমিকে করে দিয়েছেন অত্র কলেজের প্রাক্তন ছাত্র জনাব আব্দুল লতিফ। তিনি বর্তমানে রংপুর ক্যাডেট কলেজের ফাইন আর্টস বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। অনার্সের প্রতিটি বিভাগে রয়েছে নিজস্ব সেমিনার ও গ্রন্থাগার। গণিত বিভাগে নিজস্ব কম্পিউটার ল্যাব ছাড়া ও একটি কেন্দ্রীয় কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে। রসায়ন বিভাগের সামনে সুশোভিত পুষ্পোদ্যানটি এ কলেজের নান্দনিক সৌন্দর্যের উৎস। কিন্তু এ বাগনটি নির্মাণে সবচেয়ে বেশি শ্রম দিয়ে ছিলেন যিনি, যিনি ছিলেন এই মালঞ্চের প্রধান মালাকর, এই পুষ্পোদ্যানের প্রতিটি ফুল-বৃক্ষ ও পাতার যাঁর স্নেহ কোমল স্পর্শ জড়িয়ে আছে তিনি আজ মাটি ও মহাকালের অংশ। তিনি আর কেউ নন, আমাদের শ্রদ্ধাভাজন সর্বজন মান্য রসায়ন বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান আব্দুস সামাদ স্যার। [1][3]

প্রতিষ্ঠা

উত্তর জনপদের ঐতিহ্যমন্ডিত শিক্ষায়তন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ। দুধকুমর, তিস্তা, ধরলা-বিধৌত এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার ঐকান্তিক আকাঙ্ক্ষা থেকেই ১৯৬১ সালে স্থাপিত হয় এ প্রতিষ্ঠানটি। এই কলেজটির জন্ম ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু ত্যাগী শিক্ষাব্রতী মানুষের নাম। তাদের সবার তথ্য আজ আর উদ্ধারযোগ্য নয়। কোনো কোনো ঘটনা হারিয়ে গেছে বিস্মৃতির আড়ালে, কারো কারো অবদান ঢাকা পড়ে গেছে কালের ধুলিমলিন গর্ভে। তদানিন্তন মককুমা প্রশাসক সলিমউদ্দিন আহমেদ (ইপিসিএস) এর সার্বিক সহযোগিতায় ১৯৬১ সালে গড়ে উঠে এ কলেজ। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠার পেছনে যাঁদের অবদান স্মরণ করতে হয় তারা হলেন প্রাক্তন মন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার জনাব রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ভোলা মিয়া, আহমদ আলী বকসী, এ্যাডভোকেট আমানউল্লাহ প্রমুখ। মানবিক ও কমার্স বিভাগ নিয়ে তখনকার কুড়িগ্রাম হাই স্কুলে শুরু হয় কুড়িগ্রাম কলেজের যাত্রা। এ সময়ে কলেজের প্রশাসনিক কাজ দেখা শুনা করতেন বাবু প্রানবল্ভব করঞ্জাই। হাইস্কুলের শিক্ষক ক্ষীতিন্দ্রনাথ রায় খন্ডকালিন শিক্ষক হিসেবে ইংরেজি বিষয়ের ক্লাস নিতেন। স্কুলভবনে তিন-চার মাস কাটানোর পর বর্তমান জায়গায় কলেজটি স্থাপিত হয়।

অনুষদ সুমহ

মাস্টার্স

  • বাংলা,
  • ইংরেজি,
  • রাষ্ট্রবিজ্ঞান,
  • হিসাববিজ্ঞান,
  • ব্যবস্থাপনা,
  • উদ্ভিদবিজ্ঞান,
  • প্রাণিবিজ্ঞান। [4]

সম্মান

  • বাংলা
  • ইংরেজি
  • রাষ্ট্রবিজ্ঞান
  • ইসলামের ইতিহাস
  • ইতিহাস
  • দর্শন
  • অর্থনীতি
  • হিসাব বিজ্ঞান
  • ব্যবস্থাপনা
  • উদ্ভিদবিজ্ঞান
  • প্রাণিবিজ্ঞান
  • গণিত
  • পদার্থবিজ্ঞান
  • রসায়নবিজ্ঞান


ডিগ্রী (পাস) কোর্স

  • বি.এ
  • বি.এস.এস
  • বি.এস-সি
  • বি.বি.এস

উচ্চ মাধ্যমিক

  • মানবিক
  • বিজ্ঞান
  • ব্যবসায় শিক্ষা

শিক্ষার্থী সংখ্যা

কলেজটিতে বর্তমানে মোট ছাত্রী-ছাত্রী সংখ্যা ১১ হাজার ৩৯৭ জন।

  • উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ৬০০ জন,
  • স্নাতক পর্যায়ে ২০০০ জন,
  • স্নাতক সম্মান (অনার্স) পর্যায়ে ৮ হাজার ৫২৭ জন,
  • মাস্টার্স পর্যায়ে ২৭০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।

ভৌত অবকাঠামো

২২ একর ২০ শতাংশ জমির উপর স্থাপিত কলেজটি মাস্টার্স ও অনার্স কোর্সে উন্নীত হলেও নানামুখী সংকটে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন সংকটসহ সীমানা প্রাচীর নেই এ কলেজে। রয়েছে শ্রেণী কক্ষ, ছাত্রী-ছাত্রী হোস্টেল, শিক্ষকদের জন্য ডর্মেটরি ও আবাসন সংকট।

গ্রন্থাগার

বিভিন্ন বিভাগের নিজস্ব পাঠাগার ছাড়াও একটি কেন্দ্রীয় পাঠাগার রয়েছে এই কলেজে। কিন্তু এসব পাঠাগারের বেশিরভাগ বই পুরনো। নতুন বই তেমন একটা কেনা হয় না। লাইব্রেরিয়ানের পদ থকালেও তা শূন্য। সহকারী লাব্রেরিয়ান দিয়ে চলছে পাঠাগার।

অবস্থান

Academic Building. একাডেমিক ভবন

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ কুড়িগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হতে প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্বে উলিপুর-চিলমারী রোডের পাশে অবস্থিত।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. সুবর্ণ প্রহর Subarna Prohor, Yearly Magazine of Kurigram Govt. College published in July, 2008
  2. কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ: ১১ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ৪৪ শিক্ষক বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
  3. কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ, কুড়িগ্রাম। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন
  4. কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে মাস্টার্সকোর্স চালু বাংলাদেশনিউজ২৪x৭.কম

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.