কর্ণ (মহাভারত)

কর্ণ (Sanskrit: कर्ण, IAST transliteration: কর্ণ) (প্রকৃত নাম বসুসেন) ছিলেন হিন্দুধর্মীয় মহাকাব্য মহাভারতের অন্যতম একটি কেন্দ্রীয় চরিত্র। মহাকাব্যটিতে তাঁকে অঙ্গ (বর্তমান ভাগলপুরমুঙ্গের) রাজ্যের রাজা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। কর্ণ ছিলেন মহাভারতে বর্ণিত সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধাদের একজন এবং তিনিই ছিলেন একমাত্র যোদ্ধা যিনি মহাভারতের আরেক শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা অর্জুনকে যুদ্ধে পরাজিত করতে সক্ষম ছিলেন[1]। মহাভারতের বর্ণনামতে, কর্ণ ছিলেন সেযুগের একমাত্র যোদ্ধা যিনি সমগ্র পৃথিবী জয় করেছিলেন[2]। কর্ণ একক উদ্যোগে দিগ্বিজয় যাত্রা সম্পন্ন করেছিলেন এবং বিশ্বের সকল রাজাকে পরাজিত করে বৈষ্ণব যজ্ঞ পরিচালনার মাধ্যমে তাঁর বন্ধু হস্তিনাপুরের যুবরাজ দুর্যোধনকে বিশ্বের সম্রাট হিসেবে অধিষ্ঠিত করেছিলেন[3]

কর্ণ ছিলেন সূর্যদেবকুন্তির সন্তান এবং সেই সূত্রে পাণ্ডবদের বড় ভাই। কিন্তু ভাগ্যচক্রে তিনি কৌরব রাজকুমার দুর্যোধনের ঘনিষ্ঠতম মিত্রে পরিণত হন এবং ফলশ্রুতিতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে তিনি কৌরবদের পক্ষে নিজ ভাই পাণ্ডবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। কর্ণ সমগ্র জীবনব্যাপী প্রতিকূল ভাগ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতেন। ধারণা করা হয়, বর্তমান ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের কর্নাল শহরটি কর্ণই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন[4]। কর্ণ তাঁর ত্যাগ, সাহসিকতা, দানশীলতা, বীরত্ব এবং নি:স্বার্থপরতার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন।

জন্ম, শিক্ষা ও অভিশাপ

কুন্তীভোজের রাজকুমারী কুন্তী যৌবনকালে দুর্বাসা মুনির কাছে আশীর্বাদরূপে পুত্রেষ্ঠী মন্ত্র লাভ করেন। কুমারী অবস্থায় একদিন কুন্তী কৌতূহলবশত মন্ত্রবলে সূর্যদেবতাকে আহ্বান করেন। সূর্য উপস্থিত হলে ভীত কুন্তী তাকে অজ্ঞানতাবশত এই কাজের কথা বলেন, কিন্তু, মন্ত্রের সম্মান রক্ষার্থে সূর্যদেব তার গর্ভসঞ্চার করতে বাধ্য হন এবং সূর্যের সাথে মিলনের ফলে তার গর্ভে কবচকুন্ডল পরিহিত কর্ণের জন্ম হয়। বিবাহের পূর্বে কর্ণের জন্ম হওয়ায় কুন্তী লোকনিন্দার ভয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। সমাজে নিজের সম্মান রক্ষার তাগিদে তিনি শিশুপুত্রকে একটি বেতের পেটিকাতে শুইয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেন। ভীষ্মের রথের সারথী অধিরথ ও তার স্ত্রী রাধা দেবী তাঁকে উদ্ধার করেন। তারা কর্ণকে পুত্রস্নেহে পালন করতে থাকে এবং তাঁর নাম হয় বসু্ষেন। কর্ণকে 'রাধেয়' নামেও ডাকা হয়ে থাকে।

বাল্যকাল থেকে কর্ণ ধনুর্বিদ্যায় আগ্রহী ছিলেন। তিনি কুরু রাজকুমারদের অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্যের কাছে শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে গেলে, দ্রোণাচার্য তাঁকে সুতপুত্র বলে প্রত্যাখ্যান করেন। দ্রোণাচার্যের প্রত্যাখ্যানের পর কর্ণ দ্রোণাচার্যের গুরু পরশুরামের নিকট শিক্ষাগ্রহণের জন্য যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।[5] পরশুরাম যেহেতু শুধুমাত্র ব্রাহ্মণদের শিক্ষা দিতেন, তাই কর্ণ নিজেকে ব্রাহ্মণ হিসাবে পরিচয় দেন। অতঃপর পরশুরাম তাঁকে শিষ্য হিসাবে গ্রহণ করেন। তিনি কর্ণকে ব্রহ্মাস্ত্র,ব্রহ্মঃশীর অস্ত্র এবং ব্রহ্মান্ড অস্ত্রের ত্যাগ ও অস্ত্র সংবরণ করার পদ্ধতি শিখিয়ে দেন। শিক্ষার শেষে পরশুরাম তাঁকে নিজের সমতুল্য যোদ্ধা ও ধনুর্বিদ বলে ঘোষণা করেন। একদিন পরশুরাম আশ্রমের কাছে এক জায়গায় কর্ণের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। এমন সময়ে একটি বিছা জাতীয় কীট কর্ণের ঊরুতে দংশন করে। কিন্তু গুরুর নিদ্রাভঙ্গের হতে পারে ভেবে তিনি অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করেও কর্ণ নিশ্চল রইলেন। রক্তের ধারা পরশুরামের গায়ে লাগলে তাঁর ঘুম ভেঙে যায় এবং তিনি সিদ্ধান্তে আসেন যে কর্ণ ব্রাহ্মণ নয়। অতপর কর্ণ নিজের প্রকৃত পরিচয় ব্যক্ত করতে বাধ্য হন। পরশুরাম তাঁর এই মিথ্যাচারে ক্ষুব্ধ হয়ে অভিশাপ দেন যে সংকটকালে ব্রহ্মাস্ত্র এর বিদ্যা বিস্মৃত হবেন। কিন্তু তিনি তার ভুল বুঝতে পেরে কর্ণের অধ্যাবসায়ে খুশি হয়ে পরশুরাম তাঁকে "ভার্গবাস্ত্র" নামক দৈবাস্ত্র ও "বিজয়" নামক ধনুক উপহার দেন,যা কিনা অর্জুনের গান্ডীবের তুলনায় শক্তিশালী

একবার কর্ণ ভূলবশত ধনুর্বিদ্যাচর্চাকালে একটি গাভীকে হত্যা করায় ঐ গাভীর পালক ব্রাহ্মণ তাঁকে শাপ দেন যে, মৃত্যুকাল উপস্থিত হলে কর্ণের রথের চাকা যখন মাটিতে বসে যাবে তখন সে এই গাভীর মতই অসহায় হয়ে পড়বে।[6]

দুর্যোধনের সঙ্গে মিত্রতা

কর্ণের রাজ্যাভিষেক

কুরুকুমারদের অস্ত্রশিক্ষার শেষে দ্রোণাচার্য তাদের মধ্যে এক বন্ধুসুলভ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। তাঁর প্রিয় শিষ্য অর্জুনের অস্ত্রকৌশলে যখন সকলে মুগ্ধ তখন কবচকুন্ডল পরিহিত কর্ণ রঙ্গভূমিতে প্রবেশ করে এবং অর্জুনকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহ্বান করেন। কিন্তু কৃপাচার্য কর্ণের বংশ পরিচয় জানতে পেরে এই যুদ্ধে অসম্মতি প্রকাশ করেন। কারণ নিয়ম অনুসারে, কোন ক্ষত্রিয় একমাত্র ক্ষত্রিয়ের সাথেই দ্বন্দ্ব করতে পারে। এই সময় দুর্যোধন এগিয়ে এলেন এবং কর্ণকে অঙ্গরাজ্যের রাজা হিসাবে গ্রহণ করলেন। যখন কর্ণ জানতে চাইলেন এর প্রতিদানে তিনি কী চান, তখন দুর্যোধন চিরস্থায়ী মিত্রতার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। এই ঘটনায় কর্ণ দুর্যোধনের বিশ্বস্ত ও অকৃত্রিম বন্ধুতে পরিণত হন। কলিঙ্গরাজ চিত্রাঙ্গদের কন্যাকে বিবাহ করতেও তিনি দুর্যোধনকে সহায়তা করেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে সূর্যদেবতাকে আরাধনার সময় আগত কোনো ভিক্ষাপ্রার্থীকে তিনি শূন্য হাতে ফেরাবেন না।পান্ডবদের নির্বাসন কালে কর্ণ দুর্যোধনের প্রতিনিধি হিসাবে সাম্রাজ্য বিস্তারে সহায়তা করেন[7]

পান্ডবদের সঙ্গে বৈরিতা

দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভায় কর্ণ অন্যতম পাণিপ্রার্থী ছিলেন। কিন্তু দ্রৌপদী সুতপুত্রকে বরণ করতে রাজি হননি। এই স্বয়ম্বর সভায় পান্ডবরাও ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে উপস্থিত ছিলেন এবং অর্জুন লক্ষ্যভেদ করে দ্রৌপদীকে লাভ করেন। যখন অর্জুনের পরিচয় প্রকাশিত হয় তখন তাঁর প্রতি কর্ণের বিদ্বেষ আরও তীব্র হয়ে ওঠে।

দ্যূতক্রীড়ায় শকুনির কাছে যুধিষ্ঠির সর্বস্ব হেরে গেলেন। তখন দুঃশাসন দ্রৌপদীকে সভায় জোর করে টেনে আনেন । বিকর্ণ এই আচরণের প্রতিবাদ করলে কর্ণ বলেন " দেবতারা স্ত্রীদের একজন স্বামীই নির্দিষ্ট করেছেন, কিন্তু দ্রৌপদীর অনেক স্বামী তাই ইনি গণিকা এতে কোন সন্দেহ নেই । তাই এঁকে এইভাবে সভায় আনা কোন আশ্চর্যের বিষয় না । " কর্ণ দুঃশাসনকে পাণ্ডবদের ও দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করতে বলেন ।[8][9] ভীম দ্রৌপদীর অপমানে ক্রুদ্ধ হয়ে ভীষণ প্রতিজ্ঞা নেন। অবশেষে ধৃতরাষ্ট্রের বরে সকলে দাসত্ব থেকে মুক্তি পান। পান্ডবরা চলে গেলে কর্ণ ও শকুনির সঙ্গে পরামর্শ করে দুর্যোধন পুনর্বার যুধিষ্ঠিরকে পাশাখেলায় আহ্বান করেন। যুধিষ্ঠির পুনরায় পরাজিত হন এবং শর্তানুসারে বারো বছর বনবাস ও এক বছর অজ্ঞাতবাসে নির্বাসিত হন। যাওয়ার পূর্বে অর্জুন কর্ণকে, ভীম দুর্যোধন ও দুঃশাসনকে এবং সহদেব শকুনিকে হত্যার প্রতিজ্ঞা করেন।[10]

যুদ্ধের প্রস্তাবনা

বনবাসের দিন যতই শেষ হতে চলল, পাণ্ডবরা মানসিকভাবে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এই সময় ইন্দ্র, অর্জুনের পিতা, বুঝতে পারেন কর্ণ তাঁর কবচকুণ্ডলের জন্য অজেয়। তাই তিনি কর্ণের সূর্য উপাসনার সময় ব্রাহ্মণ বেশে উপস্থিত হন এবং ভিক্ষারূপে তাঁর কবচকুন্ডল প্রার্থনা করেন। কর্ণ প্রতিজ্ঞা অনুসারে তাঁর প্রার্থনায় সম্মত হন। কিন্তু তার পরিবর্তে ইন্দ্রের একাঘ্নী অস্ত্র চান। ইন্দ্র অস্ত্র দিতে রাজী হন। কিন্তু বলেন এই অস্ত্র একবার ব্যবহারের পর তা ইন্দ্রের কাছে ফিরে আসবে।

নির্বাসনের পরও কৌরবরা পাণ্ডবদের রাজ্য প্রত্যাবর্তনে অস্বীকৃত হলে কৃষ্ণ মাত্র পাঁচটি গ্রামের পরিবর্তে শান্তির প্রস্তাব নিয়ে কৌরবসভায় আসেন। কিন্তু এই দৌত্য ব্যর্থ হলে তিনি কর্ণের কাছে তাঁর জন্মরহস্য উন্মোচন করে তাঁকে পাণ্ডবপক্ষে যোগ দিতে বলেন। কিন্তু দুর্যোধনের প্রতি মিত্রতার খাতিরে তিনি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। স্বয়ং কৃষ্ণ তাঁর এই আনুগত্যের প্রশংসা করেন।[11]

অবশেষে কুন্তী কর্ণের সূর্য উপাসনার সময়ে গঙ্গাতীরে এসে উপস্থিত হন। কর্ণ মধ্যাহ্নকাল পর্যন্ত জপ করে পিছনে ফিরে তাকিয়ে কুন্তীকে দেখতে পান। কুন্তী তাঁর কাছে নিজের কন্যা অবস্থায় পুত্রলাভের কথা ব্যক্ত করেন এবং পান্ডবপক্ষে যোগ দিতে অনুরোধ জানান। কর্ণ এই অনুরোধ অগ্রাহ্য করেন। কিন্তু তিনি কুন্তীকে কথা দেন যে যুদ্ধে অর্জুন ছাড়া আর অন্য কোনো পাণ্ডবকে তিনি হত্যা করবেন না।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ

ভীষ্ম পর্ব

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ভীষ্ম কৌরব সেনাবাহিনীর সেনাপতি নিয়োজিত হন। কর্ণ কে দুর্যোধন সবসময় এগিয়ে রাখতেন আর তার জন্য ভীষ্মের অসুবিধা হয়, তারজন্য তিনি কর্ণকে যুদ্ধ হতে নিরস্ত্র করেন, আসলে তিনি কুন্তীর কন্যাবস্থায় পুত্রলাভের কথা পরে জানতে পেরেছিলেন নারদ ও ব্যাসদেবের নিকট এবং চান নি কর্ণ আপন ভাইদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করুক। যুদ্ধের দশম দিনে ভীষ্ম শরশয্যায় শায়িত হন। ভীষ্মের শরশয্যায় শায়িত হবার পর কর্ণ তথায় গেলেন এবং অনুশোচনা করতে লাগলেন, তখন ভীষ্ম তার প্রকৃত জন্মপরিচয় স্মরণ করে দিলেন, আর বললেন তুমি পুত্র দুর্যোধনের সাথে মিশে রেষারেষি করতে তোমারই অনুজদের সাথে তাই আমি তোমাকে শাসন করতাম কিন্তু তোমাকে কখনো ছোট করে দেখিনি, তুমি তোমার ভাইদের সাথে মিলে যাও, তুমি ই হবে হস্তিনাপুরের রাজা, কর্ণ তথাপি অটল থাকলেন এবং বললেন তিনি এই যুদ্ধে নিজের রণকৌশল দেখিয়ে যুদ্ধ করতে চান নয়ত বীরের মতই মৃত্যুবরণ করে নিতে চান, তখন ভীষ্ম তার প্রশংসাপূর্বক ক্ষত্রিয়ধর্ম পালন করতে বলেন এবং আশীর্বাদ করেন।

দ্রোণ পর্ব

ভীষ্মের পতনের পর একাদশ দিনে দ্রোণ কৌরব বাহিনীর সেনাপতি হন এবং কর্ণ যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করেন। ত্রয়োদশ দিন শেষ হয় চক্রব্যূহে অর্জুনপুত্র অভিমন্যুর মৃত্যু দিয়ে। চতুর্দশ দিনে কর্ণ ভীম এবং সহদেবকে দ্বৈরথ যুদ্ধে পরাজিত করেন এবং একই দিন রাত্রিকালীন যুদ্ধে ভীমপুত্র ঘটোৎকচকে ইন্দ্রের একপুরুষঘাতিনী/বাসবিশক্তি অস্ত্র দ্বারা হত্যা করেন। পঞ্চদশ দিনে কর্ণ আবার ভীমকে দ্বৈরথ যুদ্ধে পরাজিত করেন।[12] এদিন দ্রোণাচার্য দ্রৌপদীর ভাই ধৃষ্টদ্যুম্নের হাতে নিহত হন।

কর্ণ পর্ব

দ্রোণের মৃত্যুর পর ষোড়শ দিনে কর্ণ কৌরব পক্ষের সেনাপতি হন। এদিন নকুল কর্ণের নিকট দ্বৈরথ যুদ্ধে পরাজিত হন। এদিন পাণ্ডব সেনাপতিরা কর্ণকে ঘিরে ফেলেছিলেন, কিন্তু তাঁরা কর্ণকে পরাজিত করতে ব্যর্থ হন।[13] সূর্যাস্তের সময় কর্ণ সৈন্য প্রত্যাহার করেন।

সপ্তদশ দিনে যুধিষ্ঠির এবং ভীম কর্ণকে আক্রমণ করেন, কিন্তু দ্বৈরথ যুদ্ধে কর্ণের নিকট পরাজিত হন।[14][15] নকুল কর্ণের ছেলে বৃষসেনের নিকট পরাজিত হন, কিন্তু অর্জুনের নিকট বৃষসেন পরাজিত ও নিহত হন। একই সময়ে ভীম দু:শাসনকে পরাজিত করেন এবং নির্মমভাবে হত্যা করেন।

কর্ণ ক্ষিপ্ত হয়ে অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হন। ভীষণ যুদ্ধ লাগে। দুইজন সমান যোদ্ধা হওয়ার কারণে কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছিলেন না। সবাই নিজ নিজ যুদ্ধ ভুলে অর্জুন এবং কর্ণের যুদ্ধ দেখতে লাগলেন। কর্ণের রথের সারথী ছিলেন শল্য, যিনি ছিলেন সম্পর্কে পাণ্ডবদের মামা। তিনি কর্ণকে নানা কথায় কাবু করতে লাগলেন।[16] হঠাৎ কর্ণের রথের চাকা মাটিতে বসে গেল। একদিন কর্ণের তীরে ভুলবশত এক ব্রাহ্মণের গরুর বাছুর মারা যায়। তখন সেই ব্রাহ্মণ কর্ণকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে শেষ যুদ্ধের সময় কর্ণের রথের চাকা মাটিতে বসে যাবে।[17] এদিকে পরশুরামের অভিশাপে কর্ণ ব্রহ্মাস্ত্রের মন্ত্র ভুলে গেলেন।তখন কর্ণ অর্জুনকে ধর্মের দোহাই দিয়ে যুদ্ধ বন্ধ করতে বললে,শ্রীকৃষ্ণ কর্ণকে তার অন্যায়যুদ্ধে অভিমন্যু বধ,দ্রৌপদীকে সভামধ্যে বস্ত্রহরণে অপমান ইত্যাদি স্মরণ করিয়ে দেন।তখন অর্জুন অঞ্জলীক বাণ দ্বারা কর্ণের মস্তক ছেদন করলেন।তখন কর্ণের দেহ থেকে এক দিব্যজ্যোতি নির্গত হয়ে সূর্যমন্ডলে মিশে যায়।এভাবে কর্ণের মৃত্যু হয়।দুর্যোধন কর্ণশোকে ব্যাকুল হয়ে শিবিরে ফিরে যান

পরবর্তী

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শেষে পান্ডবদের জয়ের পরেও মাতা কুন্তী কাঁদতে লাগলেন। তখন যুধিষ্ঠির কারণ জানতে চাইলে কুন্তি সবকিছু খুলে বলেন। সব শুনে পঞ্চপাণ্ডবও ভেঙে পড়েন। যুধিষ্ঠির বলেন, একথা আগে জানলে এ যুদ্ধই হত না!

অবশেষে স্বর্গে গিয়ে সকলে মিলিত হন।

তথ্যসূত্র

  1. Ganguli, Kisari Mohan। The Mahabharata, Book 7: Drona Parva। Netlancers Inc, 2014।
  2. Kisari Mohan Ganguli (১৮৯৬)। "Mahabaratha ,Digvijaya yatra of Karna"The Mahabharata। Sacred Texts। সংগ্রহের তারিখ জুন ১১, ২০১৫
  3. Ganguli, Kisari Mohan। The Mahabharata, Book 3: Vana Parva। Netlancers Inc, 2014।
  4. "Karnal"। District of Karnal। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৩
  5. Website dedicated to the story of Karna
  6. James L. Fitzgerald (২০০৩)। The Mahabharata, Volume 7: Book 11: The Book of the Women Book 12: The Book of Peace। University of Chicago Press। পৃষ্ঠা 173। আইএসবিএন 0226252507।
  7. https://mythaktvindia.in%5B%5D
  8. http://www.sacred-texts.com/hin/m02/m02067.htm |title=The Mahabharata, Book 2: Sabha Parva: Section LXII |publisher=Sacred-texts.com
  9. https://archive.org/stream/mahabharata_nk/mahabharata_nilakanthas_commentary#page/n403/mode/2up
  10. Winternitz 1996, পৃ. 327।
  11. http://www.pushti-marg.net/bhagwat/Mahabharata/Krushna-Karna.htm
  12. http://sacred-texts.com/hin/m07/m07185.htm
  13. http://sacred-texts.com/hin/m08/m08030.htm
  14. http://sacred-texts.com/hin/m08/m08048.htm
  15. http://sacred-texts.com/hin/m08/m08051.htm
  16. http://books.google.co.in/books?id=YkmXk3-1j7UC&printsec=frontcover&dq=inauthor:%22Kevin+McGrath%22&hl=en&sa=X&ei=_oeTUuPXJYLWrQfuhIDgBA&ved=0CEgQ6AEwBA#v=onepage&q&f=false
  17. http://mahabharatastories.in/karna-vs-arjuna-finale-battle-mahabharata-stories/

আরো পড়ুন

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.