ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে

ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবি (ইংরেজি: Westminster Abbey) গ্রেট ব্রিটেনের বিখ্যাত গোথিক চার্চ হিসেবে পরিচিত স্থাপনা। ব্রিটিশ জনগোষ্ঠীর অনেক সনাতনী প্রথার সাথে এর নামটি জড়িয়ে আছে। ব্রিটিশ রাজন্যবর্গের রাজ্যাভিষেকসহ রাজাদের শবদেহ এখানে সমাহিত করা হয়। যুক্তরাজ্যের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় ভবন। এর অবস্থান লন্ডনের সিটি অফ ওয়েস্টমিনস্টারে। এটি ঠিক ওয়েস্টমিন্‌স্টার প্রাসাদের পশ্চিমদিকে। পূর্বে আনুষ্ঠানিকভাবে একে ওয়েস্টমিনস্টারের কলেজিয়েট চার্চ অফ সেন্ট পিটার নামে ডাকা হতো। একাদশ শতক থেকে ঊনবিংশ শতকের মধ্যে অনেকবার নির্মাণকাজ পরিচালিত হয়েছে। প্রধান গির্জার পাশাপাশি ভজনালয়, মঠ, যাজক ঘর ও দুর্গ রয়েছে। ১৫৪০ থেকে ১৫৫০ সালের মধ্যে প্রধান গির্জার মর্যাদা পায় ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবি।

ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে
অ্যাবে’র পশ্চিমাংশের সম্মুখভাগ
অবস্থানসিটি অফ ওয়েস্টমিনস্টার, লন্ডন, ইংল্যান্ড
স্থানাঙ্ক৫১°২৯′৫৮″ উত্তর ০০°০৭′৩৯″ পশ্চিম
নির্মিত১০ম শতাব্দী[1]
স্থাপত্যশৈলীগোথিক
দাপ্তরিক নাম: ওয়েস্টমিন্‌স্টার প্রাসাদ, ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবি ও সেন্ট মার্গারেট’স চার্চ
ধরনসাংস্কৃতিক
নির্ণায়কi, ii, iv
মনোনীত১৯৮৭ (১১শ সভা)
সূত্র নং৪২৬
দেশযুক্তরাজ্য
অঞ্চলইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা
[[Listed building#England and Wales|]] – শ্রেণী I
দাপ্তরিক নাম: ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবে (দ্য কলেজিয়েট চার্চ অফ সেন্ট পিটার)
মনোনীত২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৮
সূত্র নং১২৯১৪৯৪[2]
বৃহত্তর লন্ডনে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবের অবস্থান

ইতিহাস

সনাতনী ধারায় প্রথমবারের মতো জানা যায় যে, অলড্রিচ নামীয় একজন জেলে টেম্‌স নদীর তীরে সেন্ট পিটারকে দেখতে পান। এরফলে পরের বছর থেকে জেলেরা স্যামন মাছ উপহারস্বরূপ পাঠাতে থাকেন। আধুনিককালেও ফিসমঙ্গার্স কোম্পানি প্রতিবছর এ ধারা অব্যাহত রেখে চলেছেন। প্রমাণিত যে, ৯৬০-এর দশক অথবা ৯৭০-এর দশকে সাধু ডানস্টান রাজা এডগারকে বেনেডিকটাইনের সাধু সম্প্রদায়ের একডজন ব্যক্তিকে এখানে অবস্থানের জন্য সহায়তা করেছেন। বর্তমানে প্রায় আশিজন সাধু অবস্থান করছেন।[3]

১০৪২ থেকে ১০৫২ সালের মধ্যে ইংরেজদের রাজা এডওয়ার্ড দ্য কনফেসর পুরনো রোমান চার্চের পার্শ্বে এ অবকাঠামোর নির্মাণকার্য্য শুরু করেন চার্চে নিজের শবদেহ সমাহিত করার জন্যে। ইংল্যান্ডে এটিই প্রথম চার্চ, যা নরম্যান রোমান ধাঁচে তৈরী করা হয়েছে। ১০৯০ সালের মধ্যেও এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। কিন্তু ২৮ ডিসেম্বর, ১০৬৫ তারিখে ঈশ্বরের সেবার জন্য উদ্বোধন করা হয়। এর একসপ্তাহ পরই ৫ জানুয়ারি, ১০৬৬ তারিখে কনফেসর মৃত্যুবরণ করেন।[4] এরপরদিন তাকে চার্চে সমাহিত করা হয়। নয় বছর পর তার স্ত্রী এডিথ মারা গেলে তাকেও কনফেসরের সমাধিস্থলের পাশে সমাহিত করা হয়।[5] ১০৬৬ সালে উত্তরাধিকারী হিসেবে দ্বিতীয় হ্যারল্ডের সম্ভবতঃ অ্যাবেতেই রাজ্যাভিষেক ঘটে। কিন্তু প্রামাণিক দলিলে একই বছরে রাজ্য অভিষেকের প্রথম ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয় উইলিয়াম দ্য কনকুয়েরের[6] এরপর থেকেই রাজ্যাভিষেকসহ এডওয়ার্ডের সময় থেকে ১৭৬০ সাল পর্যন্ত রাজা দ্বিতীয় জর্জের শবদেহ দুর্গের অভ্যন্তরভাগে সমাহিত করা হয়।

রাজা ছাড়াও বিখ্যাত ইংরেজদের সমাধি রয়েছে এখানে। তন্মধ্যে, উইলিয়াম শেক্সপিয়র, কবি জিওফ্রে চসার, পদার্থবিদ আইজ্যাক নিউটন, প্রকৃতিবিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের নাম উল্লেখযোগ্য।

১২৪৫ সালে রাজা তৃতীয় হেনরি এর পুণঃনির্মাণ কাজ শুরু করেন।[7] বর্তমান নির্মাণশৈলীতে বিশেষ করে ঝুলন্ত দেয়াল ও জানালার পাথরের উপরের কারুকাজে প্রাচীন ফরাসী গথ জাতিদের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এর উচ্চতা প্রায় ৩১ মিটার বা ১০২ ফুট। ১৫০৩ সালে টিউডর ধাঁচে নির্মিত সপ্তম হেনরি’র ভজনালয় এখানে যুক্ত করা হয় যাতে চমকপ্রদ পাখা রয়েছে।

রাজ্য অভিষেক

পূর্বে উল্লেখিত ১০৬৬ সালে হ্যারল্ড গডউইনসন ও উইলিয়াম দ্য কনকুইয়ারের পর থেকে নিয়মিতভাবে অ্যাবেতে ইংরেজ ও ব্রিটিশ রাজাদের রাজ্যাভিষেক হয়ে আসছে।[8][9] তবে, তৃতীয় হেনরি’র পক্ষে লন্ডনে রাজ্যাভিষেকের সৌভাগ্য ঘটেনি। তখন ফরাসি রাজকুমার লুইস নগরের নিয়ন্ত্রণভার নিয়েছিলেন। তাই তাকে গ্লুসেস্টার ক্যাথেড্রেলে রাজমুকুট পরিধান করেছিলেন। তারপর এ বিষয়টি পোপ কর্তৃক নীতিবিরুদ্ধ বিবেচিত হওয়ায় পুণরায় ১৭ মে, ১২০ তারিখে এখানে রাজ্যাভিষেক পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।[10] রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছিলেন সনাতনী ধারার পাদ্রী ক্যান্টারবুরির আর্চবিশপ

তথ্যসূত্র

  1. Newcomb, Rexford (১৯৯৭)। "Abbey"। Johnston, Bernard। Collier's Encyclopedia। I A to Ameland (First সংস্করণ)। New York, NY: P.F. Collier। পৃষ্ঠা 8–11।
  2. "The National Heritage List For England"English Heritage। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৭-৩১
  3. Harvey 1993, p. 2
  4. Eric Fernie, in Mortimer ed., Edward the Confessor, pp. 139–143
  5. Pauline Stafford, 'Edith, Edward's Wife and Queen', in Mortimer ed., Edward the Confessor, p. 137
  6. Imogen Levy and Duck Soup http://ducksoupdev.co.uk (২ জুন ১৯৫৩)। "Westminster Abbey, Coronations"। Westminster-abbey.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৭-৩১
  7. History – Westminster Abbey, Retrieved 29 April 2011
  8. "History"। Dean and Chapter of Westminster Abbey। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০০৮
  9. "Coronations"। Dean and Chapter of Westminster Abbey। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০০৮Westminster-abbey.org
  10. "Henry III, Archonotology.org"। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০০৮

পাদটীকা

  • Bradley, S. and N. Pevsner (2003) The Buildings of England – London 6: Westminster, New Haven: Yale University Press, pp. 105–207. আইএসবিএন ০-৩০০-০৯৫৯৫-৩
  • Mortimer, Richard ed., Edward the Confessor: The Man and the Legend, The Boydell Press, 2009. Eric Fernie, 'Edward the Confessor's Westminster Abbey', pp. 139–150. Warwick Rodwell, 'New Glimpses of Edward the Confessor's Abbey at Westminster', pp. 151–167. Richard Gem, Craftsmen and Administrators in the Building of the Confessor's Abbey', pp. 168–172. আইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৪৩৮৩-৪৩৬-৬
  • Harvey, B. (1993) Living and Dying in England 1100–1540: The Monastic Experience, Ford Lecture series, Oxford: Clarendon Press. আইএসবিএন ০-১৯-৮২০১৬১-৩
  • Morton, H. V. [1951] (1988) In Search of London, London: Methuen. আইএসবিএন ০-৪১৩-১৮৪৭০-৬
  • Trowles, T. (2008) Treasures of Westminster Abbey, London: Scala. আইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৫৭৫৯-৪৫৪-৬

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.