এম সাইদুর রহমান খান

অধ্যাপক এম. সাইদুর রহমান খান (ইংরেজি: Professor M. Sayeedur Rahman Khan) (জন্ম অক্টোবর ৬, ১৯৪৬) একজন বাংলাদেশী খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ ও কূটনীতিক। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য[1] ও যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার ছিলেন।[2]

ড. এম. সাইদুর রহমান খান
এম. সাইদুর রহমান খান
জন্মঅক্টোবর ৬, ১৯৪৬
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ববাংলাদেশ
পেশাঅধ্যাপনা, কূটনীতিক
দাম্পত্য সঙ্গীকুমু খান

জন্ম ও পরিবার

১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ৬ অক্টোবর পাবনা জেলার বড় নওগাঁ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[3] বাবা চায়েন উদ্দিন ছিলেন এক জন স্কুল শিক্ষক এবং মা তৈয়বুন নেছা ছিলেন গৃহিণী। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। খুব অল্প বয়সে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় তিনি বাবাকে হারান।

এম. সাইদুর রহমান খানের স্ত্রী কুমু খান একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। দাম্পত্য জীবনে তাদের দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তান আছে। তার দুই কন্যা বর্তমানে স্বামীসহ আমেরিকাতে বসবাস করছেন এবং একমাত্র পুত্র জার্মানিতে অর্থনীতিতে পি এইচ ডি করছেন।

শিক্ষা ও গবেষণা

তিনি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত নিজ গ্রামে থেকেই পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে ঠাকুরগাঁও চলে যান। সেখানে ঠাকুরগাঁও হাইস্কুল হতে ১৯৬৩ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন সম্পন্ন করেন এবং বোর্ডে ষষ্ঠ অবস্থান লাভ করেন। এরপর তিনি পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ হতে ১৯৬৫ সালে প্রথম বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ হতে অনার্সে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৯ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ হতে এম এস সি তে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করে উক্ত বিভাগেই প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭৭ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় হতে পি এইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেন।

সাইদুর রহমান খান দেশে এবং বিদেশে বিভিন্ন সময়ে তার গবেষণা কর্ম চালিয়েছেন। তিনি লন্ডনের ব্রুনেল বিশ্ববিদ্যালয়, সুইডেনের চালমার্স প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও চীনের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টোরাল রিসার্চ সম্পন্ন করেন। তিনি সুইডেনের উপাসালা ও গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, চীনের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইটালির ট্রিয়েস্টে অবস্থিত ICTP তে উচ্চতর গবেষণা করেন। তার গবেষণার ক্ষেত্র মূলত থিন ফ্লিম ও সোলার এনার্জি কেন্দ্রিক। তার তত্ত্বাবধানে বেশ কয়েকজন গবেষক পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।[4]

কর্মজীবন

এম. সাইদুর রহমান খান রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সাথে

১৯৭০ সালের ১লা জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৮০-৮২ সাল পর্যন্ত জাম্বিয়ার লুসাকাতে অবস্থিত জাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ১৯৮২-৮৪ সাল পর্যন্ত নাইজেরিয়ার আহমাদ বেল্লু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৬-৮৯ পর্যন্ত তিনি তার নিজ বিভাগ পদার্থ বিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স এর সভাপতি ও মাদার বক্স হলের প্রভোস্টের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৮৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য এবং ১৯৮৯ সালে সিনেট সদস্য ছিলেন। ১৯৯৭-৯৯ পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য এবং ১৯৯৯-২০০১ পর্যন্ত উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন।[5] উল্লেখ্য তিনি উপ-উপাচার্য থাকাকালীন ১৯৯৮ সালে স্বাধীনতার পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১২ তে ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান ও ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ হতে অবসর গ্রহণের পর বর্তমানে রাজশাহীতে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন।[6] এছাড়াও বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর একজন সদস্য। [7]

২০০৯-২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার এবং আয়ারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[2] ১৯৯৯ সালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ইউনেস্কো "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" হিসেবে ঘোষণা করে। এতে প্যারিসে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

উল্লেখ্য এম সাইদুর রহমান খান ৩৫ টির মত দেশ ভ্রমণ করেছেন[8] এবং বিভিন্ন দেশে ২০ টির মত আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন।

প্রকাশনা

দেশ-বিদেশ মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ টি জার্নালে তার বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশ পেয়েছে। বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত "তড়িৎ চুম্ববকীয় তত্ত্ব" এবং "পালস ও সুইচিং বর্তনী" পাঠ্যপুস্তক দুইটির তিনি যুগ্ন লেখক। ২০০৭ সালে ২০-২৪ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্ঘটিত ঘটনার প্রেক্ষিতে যৌথবাহিনী তাকে গ্রেফতার করে। দশ দিনের রিমান্ড শেষে প্রায় সাড়ে তিন মাস কারাগারে বন্দি থাকার পর ৪ ডিসেম্বর ২০০৭ সালে আদালতের রায়ে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে মুক্তি পান। সেসব দিনের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে তার রচিত "অন্ধকারায় বন্দি বিবেক" বই ২০০৮ সালে প্রকাশিত হয়।[9] এছাড়াও অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫ তে "বিলেতের একাল- সেকাল এবং কূটনীতির স্বাদ" নামক আরেকটি বই প্রকাশিত হয়। [10]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "News Details"bssnews.net। ২০১৭-১০-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-১৮
  2. http://71.18.217.100/?p=238%5B%5D
  3. Dept. of Applied Physics & Electronic Engineering (২০১৬)। "Profiles"। Keramat, Mamnunul। Golden Jubilee & Reunion 2016 (Text)। University of Rajshahi: Dept. of Applied Physics & Electronic Engineering। পৃষ্ঠা 22।
  4. বিলেতের একাল-সেকাল এবং কূটনীতির স্বাদ-অধ্যাপক এম. সাইদুর রহমান খান
  5. "রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য সাইদুর রহমান খানের বিদায় সংবর্ধনা"Education। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮
  6. ":: Varendra university -  AdviserVarendra university"vu.edu.bd। ২৭ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ line feed character in |শিরোনাম= at position 3 (সাহায্য)
  7. "বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে সোনার বাংলা গড়বে আমাদের প্রজন্ম « Tha Daily Sunshine"dailysunshine-bd.com
  8. "রাবির সাবেক উপাচার্য সাইদুর রহমান খানের বিদায় সংবর্ধনা"sonalisangbad.com
  9. "অন্ধকারায় বন্দি বিবেক-ড. এম সাইদুর রহমান খান --ROKOMARI.COM--"rokomari.com
  10. "'বিলেতের একাল- সেকাল এবং কূটনীতির স্বাদ'"Priyo.com

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.