উপহ্রদ
লম্বাকৃৃতি উপহ্রদটি ভূমধ্যসাগর থেকে পাথুড়ে পাহাড়ি উচ্চভূমি দ্বারা পৃৃথকীকৃৃৃত৷



উপহ্রদ হলো স্থলভাগের অভ্যন্তরস্থ একপ্রকার জলাধার বা হ্রদ যা কোনো বৃহৎ জলভূমির থেকে প্রবালপ্রাচীর বা কোনো প্রাচীর দ্বীপের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন বা পৃথকীকৃত৷ বিভিন্নক্ষেত্রে প্রাচীর দ্বীপের সাথেনুড়ি মিশ্রিত বালুকাময়ভূমি বা কর্কশ পাথুরে উপকুলভূমির উপস্থিতি ঔ দেখতে পাওয়া যায়৷ উপকুলীয় উপহ্রদের সাথে নদীমোহনা ও খাঁড়ির উপরিপাতন ও লক্ষ্য করা যায়৷ বিশ্বের বিভিন্ন উপকুলী ভূভাগে উপহ্রদের উপস্থিতি একটি সাধারন উপকুলীয় বৈশিষ্ট৷
সংজ্ঞা
উপহ্রদগুলি অগভীর ও মূলত লম্বাকৃতির জলাধার হয়ে থাকে, যা বড়োকোনো জলভুমির খণ্ডের থেকে অনতিদীর্ঘ উন্মুক্ত বালুকাময় তটভূমি বা প্রবালপ্রাচীর অথবা এরূপ কোনো ভূমিরূপ দ্বারা বিচ্ছিন্ন থাকে৷ অনেকে স্বাদুজলের উপস্থিতিও উপহ্রদের সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত করতে চান, যদি বিপরীতপক্ষে অনেকে উপহ্রদে লবনাক্ততার কথা উল্লেখ করে থাকেন৷ উপহ্রদ ও নদীমোহনা উভয়ের সংজ্ঞার সূক্ষ্মতায় অভিজ্ঞদের একাধিক মতবিরোধ রয়েছে৷ জুনিয়র রিচার্ড এ. ডেভিস উপহ্রদে স্বাদুজলের উপস্থিতিকে প্রাধান্য দেন এবং কোনো উপসাগরে সামান্যতম স্বাদুজলের উপস্থিতিকে তিনি মোহনা বলে উল্লেখ করার পরামর্শ দেন৷ তিনি আরো দাবী তোলেন যে উপহ্রদ ও মোহনার বিজ্ঞানের ভাষাতে প্রায়শই না বুঝে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে৷[1] টিমোথি এম. কুস্কির মতে উপহ্রদ সাধারণত তটভূমির সমান্তরালে অবস্থান করে আবার নদী মোহনা হলো একটি নিমজ্জিত নদী উপত্যকা যার অভিমুখ তটভূমির সাথে লম্বালম্বিভাবে থাকে৷[1][2][3][4][5] প্রবালপ্রাচীর বাস্তুতন্ত্রের ক্ষেত্রে উপহ্রদ ও বলয়াকৃৃতি প্রবালদ্বীপ সমার্থক৷[6] উপকুলীয় উপহ্রদগুলি ভূ-অভ্যন্তরস্থ জলভূমির তালিকাভুক্ত৷[7][8]
প্রবালপ্রাচীর বেষ্টিত উপহ্রদ

যখন প্রবালপ্রাচীর সমুদ্রতল থেকে উপরে উত্থিত হতে থাকে এবং প্রাচীরবেষ্টিত দ্বীপটি কোনো কারণে নিমজ্জিত বা জলমগ্ন হয়ে পড়ে তখন ঐ দ্বীপ অঞ্চলে প্রবালপ্রাচীর বেষ্টিত উপহ্রদগুলির সৃৃষ্টি হয়৷ প্রবালপ্রাচীর বেষ্টিত উপহ্রদগুলির তীরে প্রাকৃৃতির কারণে নুড়ি ও বালি সঞ্চিত হয়ে বেলাশৈল সৃৃষ্টি হয়৷ এই উপহ্রদগুলির তটের উচ্চতা সমুদ্রপৃৃষ্ঠের থেকে খুববেশি না হলেও গভীরতা ২০ মিটার বা তার বেশি হয়ে থাকে৷
উপকূলীয় উপহ্রদ


যেসমস্ত উপকুল অঞ্চলের ঢাল খুব কম, প্রাচীর দ্বীপ বা প্রবালপ্রাচীর স্রোতের প্রতিকুলে সৃষ্ট এবং সমুদ্রতলের উচ্চতা ভুতলের তুলনায় অধিক বা জলমগ্ন সেই সকল অঞ্চল উপকুলীয় উপহ্রদ সৃৃষ্টির অনুকুল৷ পাহাড়ি উপকুল অঞ্চলে বা ঢেউয়ের উচ্চতা ৪ মিটার (১৩ ফু) হলে সেইসকল অঞ্চলে উপকুলীয় হ্রদ সাধারণত সৃৃষ্টি হতে পারে না৷ ঢালু ভূমিতে সৃৃষ্টি হওয়ার জন্য উপহ্রদগুলি অগভীর হয়৷ উপকুলবর্তী হওয়ায় এগুলি বিশ্ব উষ্ণায়ন বা সমুদ্রতলের বৃৃদ্ধির ওপর নির্ভরশীল৷ জলস্তর হ্রাসে ফলে উপহ্রদগুলি জলহীন বা জলস্তর বৃদ্ধির ফলে প্রাচীর দ্বীপের নাশ ও ফলস্বরূপ উপহ্রদের অবলুপ্তি ঘটে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক৷ ভৌগোলিকদের মতে, উপকুলীয় উপহ্রদগুলি প্রবীন, পরিবর্তনশীল ও স্বল্পস্থায়ী হয়৷ পৃথিবীর সমগ্র উপকুলভাগের প্রায় ১৫ শতাংশই এইধরনের উপহ্রদ দ্বারা সৃষ্ট, এছাড়া ভারতেই রয়েছে ৩৪টি বৃহৎ এবং অন্যান্য অনেক ক্ষুদ্রাকৃতি উপহ্রদ৷[9]
উপকুলীয় উপহ্রদ মুলত সমুদ্র বা সমাসাগরের সাথে প্রাচীরদ্বীপমধ্যস্থ খাঁড়ির মাধ্যমে যুক্ত থাকে৷ খাঁড়ির সংখ্যা, আকৃৃতি, অধঃক্ষেপন, বাষ্পায়ন এবং স্বাদুজলের ধারার উপস্থিতি কোনো উপহ্রদের বৈশিষ্ট্যকে প্রভাবিত করে৷ যেসস্ত উপহ্রদে স্বল্প সমুদ্র সংসুতি, কম বা শূণ্য সাদুজলের ধারার উপস্থিতি সহ উচ্চ বাষ্পায়ন হার দেখা যায় সেখানে জলের প্রকৃতি লবনাক্ত হয়৷ সমুদ্র সংযুতিহীন ও পর্যাপ্ত স্বাদুজলের উৎস থাকলে উপহ্রদটি মিষ্টিজলের উপহ্রদ হয়৷ আবার ওয়াডেন সাগরের ক্ষেত্রে একাধিক খাঁড়িসহ একাধিক স্বাদুজলের উৎস উপহ্রদগুলির মিশ্র প্রকৃৃতির ও তরঙ্গপ্রভাবিত হওয়ার জন্য দায়ী৷
নদীমুখ উপহ্রদ
যেসকল উপকুলবর্তী অঞ্চলে নদী উপকুলীয় পরিবেশে উপরিপাতিত হয় ও উপকুলভুমি খুব চওড়া, কম ঢালযুক্ত ও সমুদ্রপৃৃষ্ঠের উচ্চতার প্রায় সমান হয় সেক্ষেত্রে নদীমোহনা অঞ্চলে এইধরনের উপহ্রদ সৃৃষ্টি হয়৷ এগুলি মুলত বালি ও নুঁড়ি মিশ্রিত উপকুলভাগের ওপর সৃৃষ্ট৷[11] এইরকম উপহ্রদ সর্বাধিক দেখতে পাওয়া যায় নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ উপকুলভাগে৷ নিউজিল্যান্ডের অধিবাসী মাওরিরা স্থানীয় ভাষাতে এইধরনের উপহ্রদগুলিকে হাপুয়া বলে থাকে৷
তথ্যসূত্র
- Davis, Richard A., Jr. (১৯৯৪)। The Evolving Coast। New York: Scientific American Library। পৃষ্ঠা 101, 107। আইএসবিএন 9780716750420।
-
- Allaby, Michael, সম্পাদক (১৯৯০)। Oxford Dictionary of Earth Sciences। Oxford: Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-921194-4।
- Kusky, Timothy, সম্পাদক (২০০৫)। Encyclopedia of Earth Sciences। New York: Facts on File। পৃষ্ঠা 245। আইএসবিএন 0-8160-4973-4।
- Nybakken, James W., সম্পাদক (২০০৩)। Interdisciplinary Encyclopedia of Marine Sciences। 2 G-O। Danbury, Connecticut: Grolier Academic Reference। পৃষ্ঠা 189–90। আইএসবিএন 0-7172-5946-3।
- Reid, George K. (১৯৬১)। Ecology of Inland Waters and Estuaries। New York: Van Nostrand Reinhold Company। পৃষ্ঠা 74।
- Aronson, R. B. (১৯৯৩)। "Hurricane effects on backreef echinoderms of the Caribbean"। Coral Reefs। 12 (3–4): 139–142। doi:10.1007/BF00334473।
- Maurice L. Schwartz (২০০৫)। Encyclopedia of coastal science। Springer। পৃষ্ঠা 263। আইএসবিএন 978-1-4020-1903-6। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০১২।
- Kjerfve, Björn (১৯৯৪)। "Coastal Lagoons"। Coastal lagoon processes। Elsevier। পৃষ্ঠা 1–3। আইএসবিএন 978-0-444-88258-5।
- http://iomenvis.nic.in/index2.aspx?slid=758&sublinkid=119&langid=1&mid=1
- "The eyes of Atacama"। www.eso.org। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৭।
- Kirk, R.M. and Lauder, G.A (২০০০)। Significant coastal lagoon systems in the South Island, New Zealand: coastal processes and lagoon mouth closure। Department of Conservation।