উপনিবেশক মানসিকতা
উপনিবেশক মানসিকতা বলতে উপনিবেশস্থাপনকারীর প্রভুত্বকামী মানসিকতা বোঝায়, যার ফলে উপনিবেশক উপনিবেশিতকে নিজের চেয়ে অনুন্নত ভাবে এবং উপনিবেশিতকে শাসনের অধিকার রাখে বলে মনে করে।[1][2] একে অনেকে ঔপনিবেশিক মানসিকতাও বলে থাকে।[1] বিউপনিবেশায়ন সম্পূর্ণ না হওয়ায় এখনও ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া রাষ্ট্রকাঠামোর উপর চলছে বাংলাদেশ নামক উত্তরউপনিবেশী রাষ্ট্র।[3][4] উপনিবেশক মানসিকতা থেকেই পাকিস্তানি শাসকরা ব্রিটিশদের মতো এদেশের মানুষদের উপনিবেশকদের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখত।[4]
উপনিবেশক মানসিকতার কারণে বাংলাদেশে প্রশাসনিক কর্মকতারা জনসাধারণের কাছ থেকে 'স্যার' সম্বোধন দাবি করে, লিখেছেন আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।[1] ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রকাঠামো প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের "পাবলিক সার্ভেন্টের পরিবর্তে ‘লর্ড অব পাবলিক’" বানিয়ে ফেলে।[1] হাসানুল হক ইনুও বাংলাদেশের আমলাদের মানসিকতাকে উপনিবেশক মানসিকতা বলেছেন।[5] জনগণের ভোটে নির্বাচিত অনেক জনপ্রতিনিধিকেও নিয়োগকর্তা জনগণ 'স্যার' না বললে বিরক্ত হতে দেখা যায়।[1] ২০১০ সালে বিসিএস ক্যাডারদের উদ্দেশে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে।[6] ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে হাসিনা ঔপনিবেশিক মানসিকতা ত্যাগের আহ্বান জানিয়ে লাল দালান আর নয় বলে এগুলো ভেঙে ফেলে নতুন ভবন নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন।[4] ২০১৮ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উপনিবেশক মানসিকতা বর্জন করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন।[7][8][9] উপনিবেশক মানসিকতার বিপরীত মানসিকতা হল উপনিবেশী মানসিকতা। উপনিবেশী মানসিকতার ফলে উপনিবেশিত ব্যক্তি উপনিবেশকের উপনিবেশায়ন মেনে নেয় এবং প্রতিবাদ করে না।
তথ্যসূত্র
- "প্রজাতন্ত্র ও ঔপনিবেশিক মানসিকতা"। কালের কণ্ঠ। ২০১৮-০১-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-০২।
- "খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক মানসিকতা: বি চৌধুরী"। Bangla Tribune। ২০১৯-০২-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-০২।
- রিবেরু, বিধান (২০১৭)। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র। কলকাতা: আত্মজা পাবলিশার্স। পৃষ্ঠা ১২৮।
- "উপনিবেশ নেই, মানসিকতা আছে"। www.jugantor.com। ২০১৯-০২-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-০২।
- "আমলাতান্ত্রিক মানসিকতা গণতন্ত্রের বাধা: ইনু"। প্রথম আলো। ২০১৯-০২-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-০২।
- "সরকারি কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রী: ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের জন্য কাজ করুন"। archive.prothom-alo.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-০২।
- "ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে দেশপ্রেম ও নিষ্ঠার সাথে জনগণের সেবা করুন- প্রধানমন্ত্রী (ইনকিলাব)"। প্রিয়.কম (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০২-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-০২।
- "জেলা প্রশাসকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ২৩ নির্দেশনা"। Jugantor। ২০১৯-০২-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-০২।
- "ডিসিদের ঔপনিবেশিক মানসিকতা পরিহারের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর"। Jugantor। ২০১৯-০২-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-০২।