ইমরুল কায়েস (কবি)

ইমরুল কায়েস হলেন ৬ষ্ঠ শতকের আরবি ভাষার উল্লেখযোগ্য ও শ্রেষ্ঠ কবি। তার পুরো নাম হল ইমরুল কায়েস বিন হুযর আল কিন্দি। তার পিতার নাম হুযর ইবনে আল-হারিছ এবং মাতার নাম ফাতিমা বিন্তে রাবিয়াহ আল-তাগলিবি। তিনি আরবের নাজদ এলাকায় ৬ষ্ঠ শতকের প্রথম দিকে জন্মগ্রহণ করেন এবং প্রাথমিক জীবন রাজকীয়ভাবে যাপন করেন। তিনি বাল্যকাল এ কবিতা রচনা শুরু করলে তার পিতা তাকে বাড়ি থেকে বহিস্কার করে দেন। তারপর তিনি বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়ে মদ্যপায়ী জীবন শুরু করেন। তার প্রেমিকার নাম ছিল উনাইযা।

 তিনি হলেন আরবি ভাষায় লেখা বিখ্যাত কাব্য সংকলন মুআল্লাক্বা র অন্যতম ও শ্রেষ্ঠ লেখক।

এই মহান কবি ৫৪০ খ্রীঃ মৃত্যু বরণ করেন। [1]

বংশ

কিনদাহ বংশের আদি আবাসস্থল ছিলো দক্ষিণ আরবে, সেখান থেকে তারা উত্তরে অগ্রসর হয়ে ৪র্থ অথবা ৫ম শতাব্দির দিকে নাযদে বসবাস শুরু করে। ৫ম শতাব্দির দিকে তারা ইয়েমেনের রাজাকে তাদের জন্য একজন রাজা নির্বাচনের আরজি জানায়, এবং হূযর আকিল আল-মুরার প্রথম কিনদাহ রাজা নির্বাচিত হয়। [2] হূযর আকিল আল-মুরারের পরবর্তী রাজা ছিলো তার পুত্র আমর, তার পরবর্তীতে তার পুত্র আল-হারিছ, যিনি ছিলেন কিনদাহ রাজাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। আল-হারিছের পুত্রদের মধ্যে একজন হূযর। আর হূযর ছিলেন ইমরুল কায়েসের পিতা।

এটা নিশ্চিত নয় যে আল-হারিছ কিভাবে মারা গিয়েছিলো, কিন্ত কিছু উৎস থেকে জানা যায় তাকে বন্দি করা হয়েছিলো, এবং তাকে তার দুই পুত্র ও তার গোত্রের চল্লিশের ও বেশি লোকজনের সাথে হত্যা করা হয়েছিলো। [3]

প্রারম্ভিক জীবন

ইমরুল কায়েসের জন্ম নিয়ে ইতিহাসবিদ্গনের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে, তবে ধারনা করা হয় তিনি ৫২৬ খ্রিষ্টাব্দের দিকে জন্মগ্রহণ করেন। [3] তিনি আসাদ ও ঘুতফান বংশের রাজা হূযরের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন। তিনি শৈশবকাল থেকেই কবিতা লিখতেন, কিন্ত এইটা তার পিতা খুব অপছন্দ করতেন কারণ একজন রাজার সন্তানের জন্য এইটা যথোপযুক্ত নয়।

তার পিতার সাথে বৈসাদৃশ্যের আরেকটি কারণ হলো ইমরুল কায়েস অতিরিক্ত মদ্যপায়ী ও মহিলার প্রতি আকর্ষণ। একটি কাহিনী থেকে জানা যায় ইমরুল কায়েস তার চাচাতো বোন উনাইযা কে ভালোবাসতো, তাকে বিয়ে করার চেষ্টা ব্যর্থ হলে তার সাথে গোপণে সম্পর্ক রাখতে চায়, যা তার পরিবারের জন্য লজ্জাজনক, এ কারনে তাকে তার পিতা বর্জন করে। আরেকটি কাহিনী থেকে জানা যায় ইমরুল কায়েস তার পিতার স্ত্রীদের ও দাসীদের নিয়ে বাজে কবিতা চয়ন করেন, একারণে তাকে বর্জন করা হয়।[4] কারণ যাই হোক না কেনো অধিকাংশ কাহিনী একমত যে, হূযর তার পুত্রের আচরণে ক্রূদ্ধ হয়ে তাকে রাজ্য থেকে বিতাড়িত করেন।

বাবার মৃত্যুবরন

কিছু কাহিনী থেকে জানা যায়,যখন ইমরুল কায়েসের পিতা নিহত হন তখন তিনি তার বাবার সৈন্যবাহিণীর পক্ষে যুদ্ধ করতেছিলেন, কিন্ত এই ব্যাপারে সবাই একমত নয়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাহিনী ইবনে আল-কালবি থেকে জানা যায়, ইবনে আল-কালবির মতে, যখন তার পিতা মারা যান তখন তিনি নির্বাসনে ছিলেন। পিতার মৃত্যুসংবাদ যখন তার কাছে পৌছায় তখন তিনি তার বন্ধুদের সাথে আনন্দ ফুর্তিতে লিপ্ত ছিলেন। মৃত্যু সংবাদ শোনার পর তিনি বলেন, আল্লাহ আমার পিতার প্রতি দয়াবান হোক। যখন আমি ছোটো ছিলাম তিনি আমাকে বিপথে ঠেলে দিয়েছেন, এখন আমি পুর্নবয়স্ক আর তার মৃত্যুতে ভারাক্রান্ত। আজ কোনো সতর্কতা থাকবেনা এবং কাল থাকবেনা কোনো উন্মত্ততা। তার বিখ্যাত উদ্ধৃতি: "আজকের দিন শুরা পানের আর কালকের দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজের।" (আরবিতেঃ "اليوم خمر وغداً أمر") [3]

বলা হয় যে ইমরুল কায়েসের ভাইদের মধ্যে তিনিই ছিলেন পিতার হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার মতো একমাত্র দায়িত্ববান।[5] একটি কাহিনী থেকে জানা যায় যে, আসাদ গোত্র তার কাছে একজন গোয়েন্দা প্রেরণ করে এবং তাকে তিনটি উপায়ন্তর প্রদান করে, তিনি তার পিতার হত্যার বদলে তাদের কোনো উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে হত্যা করবেন অথবা তিনি সহস্র ভেড়া ও উটের সমপরিমাণ অর্থমূল্য গ্রহণ করবেন অথবা তিনি তাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবেন সেক্ষেত্রে তাদের প্রস্তুতির জন্য একমাস সময় দিতে হবে। ইমরুল কায়েস তৃতীয় উপায় পছন্দ করলেন। বকর ও তাগলিব গোত্র তাকে সমর্থন জানালো এবং আসাদ গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে অসংখ্য লোককে হত্যা করলো। বকর ও তাগলিব গোত্র যখন বুঝলো যে, হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য যথেষ্ট লোককে হত্যা করা হয়েছে তখন তারা তাদের সমর্থন তুলে নিলো।[3]

তথ্যসূত্র

  1. তারিখুল আদাব আরবি (আহমাদ হাসান যাইয়াত)
  2. আরবি আদাব কি তারিখ (মহম্মদ কাযেম)
  3. A Literary History of The Arabs (R.A.Nicholson)
  1. Tarikhul adab AL arabi by Ahmad Hasan zaiyaat, আইএসবিএন ৯৯৫৩-৮৫-০০৯-৭.
  2. Makki 2005, pg 213
  3. ""A Note on the Poet""। ২০১১-০৭-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-১৫
  4. Makki 2005, pg 215
  5. Makki 2005, pg 220

    সূত্র তালিকা

    • “A Note on the Poet: Imru’ al-Qais” [Arabic: نبذة على الشاعر :: إمرؤ القيس]. almoallaqat.com. Web.
    • Makki, al-Tahir Ahmad. "Imru' al-Qays." Dictionary of Literary Biography. Ed. Cooperson, Michael and Toorawa, Shawkat. Vol. 311. Detroit: Thomson Gale, 2005. Print.
    • al-Samarra’i, Mazhar. Imru’ al-Qais: Poet and Lover [Arabic: إمرؤ القيس الشاعر العاشق]. Amman, Jordan: Dar al-Ibda’, 1993. Print.
    Attribution
    • এই নিবন্ধটি একটি প্রকাশন থেকে অন্তর্ভুক্ত পাঠ্য যা বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনে: চিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। "Amru'-Ul-Qais"। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস।[[বিষয়শ্রেণী:উইকিসংকলনের তথ্যসূত্রসহ ১৯১১ সালের এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা থেকে উইকিপিডিয়া নিবন্ধসমূহে একটি উদ্ধৃতি একত্রিত করা হয়েছে]]
    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.