ইত্যাদি

ইত্যাদি বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান। ইত্যাদি প্রথম প্রচার হয় ১৯৮৯ সালে। বাংলাদেশ টেলিভিশনে তিন মাস পর পর প্রচারিত এই কৌতুকাশ্রয়ী ব্যাঙ্গাত্মক অনুষ্ঠানটির উপস্থাপক হানিফ সংকেত

ইত্যাদি
ইত্যাদি
অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে হানিফ সংকেত
ধরণবিচিত্রানুষ্ঠান
নির্মাতাহানিফ সংকেত
উপস্থাপকহানিফ সংকেত
প্রস্তুতকারক দেশ বাংলাদেশ
মূল ভাষাবাংলা
নির্মাণ
অবস্থানঢাকা
সম্প্রচার
মূল চ্যানেলবাংলাদেশ টেলিভিশন
ছবির ফরম্যাটডিভিবি

প্রাক কথন

১৯৯০-এর দশকে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় অনুষ্ঠান হিসাবে স্থান করে নিয়েছে। অনুষ্ঠানটি প্রায় ৩০ বছর ধরে প্রচারিত হচ্ছে।[1] এর প্রধান আকর্ষণীয় দিক হলো সমাজের নানা অসংগতিকে বিদ্রুপ ও রসময় করে উপস্থাপন করা। তবে বর্তমানে এটি তিন মাস অন্তর অন্তর বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। সাধারণত একটি নতুন ইত্যাদি মাসের পঞ্চম শুক্রবার রাত ৮ টার বাংলা সংবাদের পর এবং সংকলিত ইত্যাদি প্রতি মাসের প্রথম রবিবার রাত ১০ টার ইংরেজি সংবাদের পর সম্প্রচার করা হয়। এছাড়া প্রতি বছর ঈদ-উল-ফিতর এর পরদিন রাত ১০ টার ইংরেজি সংবাদের পরেও অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারিত হয়।

উল্লেখযোগ্য পর্বসমূহ

নানা-নাতি

নিয়মিত পর্বগুলোর মধ্যে নানা-নাতি,[2] চিঠিপত্র, দর্শক পর্ব, বিদেশী চলচ্চিত্রের বাংলা সংলাপ, মামা-ভাগ্নে উল্লেখযোগ্য। নানা-নাতির নানা চরিত্রের অভিনেতা অমল বোস স্বর্গলোকপ্রাপ্তি হলে [3] নানা-নাতি পর্বটি নানী-নাতি পর্বে পরিবর্তিত হয়ে পড়ে। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই নাতির সাথে নানার কিংবা নানীর সম্পর্ক মধুরতায় শুরু হয়, এবং নাতির অতিসচেতনতায় তিক্ততায় গিয়ে সমাপ্ত হয়। নাতি চরিত্রটি সাধারণত সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণা, ভুল শব্দচয়ন ইত্যাদিকে উপজীব্য করে নানা/নানী'র ভুল ধরতে থাকে, এতে বিরক্ত হতে থাকেন নানা/নানী।

মামা-ভাগ্নে

শুরু থেকে ভাগ্নে চরিত্রে অভিনয় করেন আফজাল শরীফ আর মামার চরিত্রে অভিনয় করেন আব্দুল কাদের। ভাগ্নে খুব ব্যবসা-প্রবণ এবং ব্যবসায়ের নতুন নতুন ফন্দি সে খুঁজতে থাকে। কিন্তু সব ফন্দির মধ্যেই জনস্বার্থকে হেয় করার বিষয়টা খুব বেশি চোখে পড়ে বলে বিদেশ ফেরত মামা সব সময়ই ভাগ্নের ব্যবসায়ে বাধা সৃষ্টি করেন, ব্যবসায়ে সম্মত হন অধিকাংশ সময় তৎকালীন টেলিভিশন ও সাধারণ জীবন-যাত্রার নেতিবাচক বিষয়গুলোকে উপজীব্য করে ব্যাঙ্গাত্মক উপস্থাপনায় ভাগ্নের ব্যবসায়িক পরিকল্পনাগুলোকে উপস্থাপন করা হয়, এবং মামা, পর্বের শেষাংশে নৈতিকতার বিষয়টি ধরিয়ে দিয়ে ইতি টানেন।

বিদেশী ছবির বাংলা সংলাপ

ইত্যাদির পুরনো পর্বগুলোতে বিদেশী বিভিন্ন কমেডি সিরিজের দৃশ্যকে ব্যাঙ্গাত্মক বাংলা করে উপস্থাপন করা হতো এই পর্বে। পর্বগুলোতে কণ্ঠ দিতেন স্বয়ং হানিফ সংকেত, এবং সহশিল্পীবৃন্দ। পরবর্তীতে তাঁর জনপ্রিয়তা দেখে অনেক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানই এই ধারণায় অনুবাদের চেষ্টা শুরু করে। দৃশ্যগুলোর বেশিরভাগ থাকতো সাদা-কালো, তবে শেষের দিকের কিছু কিছু দৃশ্য রঙিনও পরিলক্ষিত হয়।

দর্শক পর্ব

অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত দর্শকদের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক দর্শক নির্বাচনের ক্ষেত্রে অভিনব সব কৌশল ব্যবহার করে দর্শকদের মুগ্ধ করতেন হানিফ সংকেত। কখনওবা সব দর্শকের হাতে বেলুন দিয়ে তার মধ্যে ব্যতিক্রম বেলুনওয়ালাদের মঞ্চে আহ্বান করতেন, কখনও সবাইকে দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের ক্ষুদ্রাকৃতি দিয়ে তার মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু ধরনের বাদ্যযন্ত্রধারীদের মঞ্চে আহ্বান করতেন। তবে ইদানিং (২০১০) হানিফ সংকেত দর্শক নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে। বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সেখানে দেশ, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে প্রশ্ন করে তার থেকে দুজন-দুজন চারজনকে নির্বাচন করে আনা হয় অনুষ্ঠানস্থলে। অতঃপর অনুষ্ঠানস্থলে বিভিন্ন পন্থায় উপস্থিত দর্শকদের থেকে দুজন বা চারজন নির্বাচন করা হয়। দর্শক নির্বাচনেও একইভাবে করা হয় দেশভিত্তিক সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন। নির্বাচিত দর্শকদের করতালির মাধ্যমে মঞ্চে আহ্বানের পর তাদের জন্য থাকে বিভিন্ন রকম পরীক্ষা। কখনও বাংলাদেশের বিভিন্ন ধারার সঙ্গীতকারদের গান ও বাদ্য বাজিয়ে দর্শকদের তার ধরন শনাক্ত করতে দেয়া হয়, কখনও কোনো এলাকার ঐতিহ্য নিয়ে গান তৈরি করে গানের মধ্য থেকে অধিকাংশ সংখ্যক ঐতিহ্যকে মনে রাখতে বলা হয় ইত্যাদি। বিজয়ীদের সাধারণত কম্পিউটার বা অন্যান্য গৃহস্থালী সামগ্রী উপহার দেয়া হয়, তবে নির্বাচিত সবার জন্যই থাকে, হানিফ সংকেতের ভাষায়:

ইত্যাদির নিয়মিত শিল্পীদের পরিবেশনা

বহুকাল আগে থেকেই ইত্যাদিতে হানিফ সংকেতের নিজস্ব ক'জন শিল্পী ব্র্যাকড্যান্সের মাধ্যমে বিভিন্ন প্যারোডি গান পরিবেশন করে থাকেন। কখনও মাইকেল জ্যাকসনের জাস্ট বিট ইট, কখনও হিন্দি চলচ্চিত্রের গানকে প্যারোডি করে বাংলাদেশের কোনো সামাজিক অবক্ষয়, কিংবা ভুল ধারণা, অসংগতিকে উপস্থাপন করে থাকেন তারা।

তথ্যসূত্র

  1. বিনোদন (১৯ মার্চ ২০১৯)। "তিন দশকে ইত্যাদি"দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা, বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৯
  2. আনন্দ (২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২)। "নানা ছাড়া নাতি অসম্পূর্ণ"দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা, বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জানুয়ারি ২০১২
  3. বিনোদন (২৪ জানুয়ারি ২০১২)। "চলে গেলেন অমল বোস"দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা, বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৯

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.