আল্লোপনিষদ্

আল্লাহ্‌ উপনিষদ্‌ বা আল্লোপনিষদ্‌ হল একটি ধর্মগ্রন্থ। এই গ্রন্থের প্রামাণ্যতা স্বীকৃত নয়। এটিকে অথর্ববেদের সঙ্গে যুক্ত এবং মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনকালে রচিত বলে মনে করা হয়।

স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী তার সত্যার্থ প্রকাশ গ্রন্থে বলেছেন যে, আল্লোপনিষদ উপনিষদ্‌ শাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত নয়। এমনকি এটি অথর্ববেদের সঙ্গেও যুক্ত নয়। এটি সম্ভবত মুখল যুগে (আকবরের শাসনকালে) রচিত হয়েছিল।[1][2] এই উপনিষদে আকবরকে ঈশ্বরের দূত বলা হয়েছে।[3]

রচয়িতা ও প্রামাণ্যতা সম্পর্কে মতামত

ধর্মতত্ত্ববিদ আর. অনন্তকৃষ্ণ শাস্ত্রী লিখেছেন ভারতে মুসলমান শাসনকালে "আর্য পণ্ডিতরা শাস্তির হাত থেকে রক্ষা পেতে" এই গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন। তিনি আরও বলেছেন যে, এই গ্রন্থটি "সাধারণ উপনিষদ্‌গুলির রচনাভঙ্গি অনুসরণ করে লেখা হয়নি" এবং এই গ্রন্থে ব্যবহৃত শব্দগুলি "শুনতে অনেকটি আরবির মতো।"[4] ভট্টাচার্য ও সরকার আল্লোপনিষদ্‌কে "ইসলামি রচনা" হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাদের মতে, আকবরের কোনো হিন্দু সভাসদ এটিকে "অথর্ববেদের একটি অপ্রামাণিক অধ্যায়" হিসেবে রচনা করেন। চার্লস এলিয়টের মতে, এই গ্রন্থটি সম্ভবত দিন-ই-ইলাহি ধর্মীয় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এবং "এবং একটি অণুকরণ মাত্র।"[3] স্বামী বিবেকানন্দ লিখেছেন যে, আল্লোপনিষদ্‌ যে অনেক পরবর্তীকালের রচনা তার প্রমাণ রয়েছে। তিনি শুনেছিলেন আকবরের রাজত্বকালে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে এই উপনিষদ্‌টি রচিত হয়েছিল।[5] সদাশিবন লিখেছেন, আকবর যখন নতুন ধর্ম নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছিলেন, তখন ব্রাহ্মণেরা তার জন্য এই গ্রন্থটি রচনা করেন।[6] দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, আকবরের রাজত্বকালে হিন্দুদের ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার উদ্দেশ্যে এই গ্রন্থটি রচিত হয়।[7] বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন যে, আল্লোপনিষদ্‌ ছিল "ভারতের মুসলমান শাসকদের কিছু তোষামোদকারীর নির্লজ্জ রচনা।"[8] আব্রাহাম ইর‍্যালি লিখেছেন যে, মুঘল যুগে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে কিছু আন্তঃসাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের উদ্যোগ। এর উদ্দেশ্য ছিল দুটি সম্প্রদায়কে কাছাকাছি আনা।[9]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৩ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মে ২০১৬
  2. http://www.aryasamajjamnagar.org/chapterfourteen.htm#79
  3. Eliot, Sir Charles (২০০৪)। Hinduism and Buddhism: An Historical Sketch, Volume 1। Philadelphia, USA: Psychology Press। পৃষ্ঠা 270। আইএসবিএন 978-0-7007-0679-2। It declares that the Allah of the prophet Muhammad Akbar (i.e., not the Allah of the Koran) is the God of Gods.
  4. Sastri, R Ananthakrishna (১৮৯৮)। "Allopanishad or Mahomed Upanishad"The Theosophist। Madras, India: Theosophical Publishing House। XIX: 177। সংগ্রহের তারিখ মে ১, ২০১২
  5. Vivekananda, Swami (১৯০৮)। Lectures from Columbo to Almora: Issue 16 of Himalayan series। Madras, India: Prabuddha Bharata Press। পৃষ্ঠা 123। সংগ্রহের তারিখ মে ১, ২০১২
  6. Sadasivan, S. N. (২০০০)। A Social History Of India (Illustrated সংস্করণ)। New Delhi, India: APH Publishing। পৃষ্ঠা 178। আইএসবিএন 978-81-7648-170-0।
  7. Tagore, Satyendranath; Devi, Indira (২০০৬)। The Autobiography Of Devendranath Tagore (Reprint সংস্করণ)। Whitefish, Montana, USA: Kessinger Publishing। পৃষ্ঠা 74। আইএসবিএন 978-1-4286-1497-0।
  8. Bijlert, Viktor A. van (১৯৯৬)। "Sanskrit and Hindu National Identity in Nineteenth Century Bengal"। Houben, Jan E. M.। Ideology and Status of Sanskrit: Contributions to the History of the Sanskrit Language: Volume 13 of Brill's Indological Library (Illustrated সংস্করণ)। Leiden, The Netherlands: E. J. Brill। পৃষ্ঠা 358। আইএসবিএন 978-90-04-10613-0।
  9. Abraham Eraly, The Mughal World: Life in India's Last Golden Age, Penguin Books India 2007
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.