আলাওল

আলাওল মধ্যযুগের একজন বাঙালি কবি। বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে ধর্মীয় বিষয়বস্তুর গতানুগতিক পরিসীমায় রোমান্টিক প্রণয়কাব্যধারা প্রবর্তনকারী হিসাবে মুসলমান কবিগণের অবদান সর্বজনস্বীকৃত। এ সময়ে তারা আরবি ফার্সিহিন্দি সাহিত্যের বিষয়বস্তু ও ভাববৈচিত্র্য অবলম্বনে কাব্য রচনায় এক নবযুগ সৃষ্টি করেন। এপর্যায়ের কবিগণের মধ্যে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের বিচারে কবি আলাওলকে সর্বোচ্চ স্থান দেওয়া হয়। আলাওল আরাকান রাজসভার অন্যতম কবি হিসাবে আবির্ভূত হলেও মধ্যযুগের সমগ্র বাঙালি কবির মধ্যে 'শিরোমণি আলাওল' রূপে শীর্ষস্থান অধিকারী। আরবি ফার্সি হিন্দি ও সংস্কৃত ভাষায় তিনি সুপণ্ডিত ছিলেন। ব্রজবুলিমঘী ভাষাও তার আয়ত্তে ছিল। প্রাকৃতপৈঙ্গল, যোগশাস্ত্র, কামশাস্ত্র, অধ্যাত্মবিদ্যা, ইসলাম ও হিন্দু ধর্মশাস্ত্র-ক্রিয়াপদ্ধতি, যুদ্ধবিদ্যা, নৌকা ও অশ্ব চালনা প্রভৃতিতে বিশেষ পারদর্শী হয়ে আলাওল মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য প্রতিভার পরিচয় দিয়েছন।[1][2]

আলাওল
জন্ম১৫৯৭
মৃত্যু১৬৭৩
পরিচিতির কারণমধ্যযুগের বাঙালি কবি

জীবন

কবি আলাওলের জন্ম ফতেহাবাদ, যা বর্তমান মাদারিপুর জেলার জালালপুরে অবস্থিত, সম্ভবত জন্ম ১৫৯৭ সালে, আর মৃত্যু ১৬৭৩ সালে। তার জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে আরাকানে। আরাকানের রাজার অশ্বারোহী সেনাবাহিনীতে ভর্তি হন। তার কাব্যপ্রতিভার পরিচয় পাওয়া গেলে একসময় তিনি হয়ে পড়েন রাজসভার কবি। তাকে কাব্যচর্চায় বিশেষভাবে উৎসাহিত করেন রাজার একজন প্রধান কর্মচারী মাগন ঠাকুর।

কাব্য

আলাওলের প্রধান কাব্য পদ্মাবতী, যা ছিল কবি মালিক মোহাম্মদ জায়সীর হিন্দি কাব্য পদুমাবৎ-এর অনুবাদ। এ কাব্য তিনি প্রায় তিন বছর সময়ব্যয়ে ১৬২৭ সালে শেষ করেন এবং আরাকানপতির আত্মীয় সৈয়দ মুসা'র উৎসাহে তিনি সয়ফল মুলুক ও বদিউজ্জামাল নামক পারস্য গ্রন্থ অনুবাদ করেন[1][3]। মধ্যযুগের আরেক কবি দৌলত কাজীর অসমাপ্ত কাব্য শেষ করেন আলাওল, এর নাম সতীময়না[3]। এছাড়া তার উল্লেখযোগ্য কাব্যের মধ্যে রয়েছে : তোহ্‌ফা, দারাসেকেন্দারনামা প্রভৃতি। কবি আলাওলের পদ্মাবতী কাব্যের একটি অন্তরা :

প্রেম বিনে ভাব নাই ভাব বিনে রস
ত্রিভূবনে যাহা দেখি প্রেম হুনতে (হতে) বশ
যার হূদে জন্মিলেক প্রেমের অঙ্কুর
মুক্তি পাইল সে প্রেমের ঠাকুর[2]


মহাকবি আলাওল তার বিখ্যাত সপ্ত পয়কর কাব্যে রাসুল বন্দনার প্রসঙ্গে লিখেছেন:

আদ্যেতি নিরুপ ছিল প্রভূর নির্বাকার।
চেতন স্বরুপ যদি হইল প্রচার।।
অতি ঘোরতর তমঃআকার বর্জিত।
মহা জ্যোতিমংয় হৈল আল্লার-ঈঙ্গিত।।
জ্যোতি সমুদ্রে আদ্যি নুর মহাম্মদ।
জগৎ বিজয়ী হৈতে পাইল সম্পদ।।
সপ্ত স্বর্গ উদ্যানের আদ্য নব ফুল।
বৃদ্ধি বাক্যে শিরোমণি ভূবনে অতুল।।
সেই পুস্প হৈতে আদ্যে আদম উজ্জল।
সকল কদর্মপূর্ণ সে-ই নির্মল।।[4]

কবি দৌলত কাজির অসমাপ্ত কাব্য সতীময়না গ্রন্থে মোহাম্মদের 'সিফত' বয়ান হয়েছে এভাবে:

আহাদ আছিল এক
মিম হন্তে পরতেক
যে মিমেত জগৎ মোহন[4]

আলাওলের সৃষ্টিকর্ম

তথ্যসূত্র

  1. মাধ্যমিক বাংলা সাহিত্য কবিতা, প্রকাশক-জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, মতিঝিল, ঢাকা, প্রকাশকাল-১৯৮৩ খ্রি., পৃ. ৪ - ৯
  2. সিলেটের মরমী মানস, প্রাক কথন সৈয়দ মোস্তফা কামাল, প্রকাশনায়- মহাকবি সৈয়দ সুলতান সাহিত্য ও গবেষণা পরিষদ, প্রকাশকাল ২০০৯।
  3. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূর্বাংশ, অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি; দ্বিতীয় ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড, পঞ্চম অধ্যায়, পৃঃ ২৮৪, প্রকাশক: মোস্তফা সেলিম; উৎস প্রকাশন, ২০০৪।
  4. কাসিদায়ে ন'মান অনুবাদক- ডঃ মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, প্রাকাশক গাউছুল আ'যম ও আলা হযরত (রাঃ) রিসার্চ একাডেমী, ঢাকা, প্রকাশকাল- ৩০ মে ২০০০ খ্রিস্টাব্দ।
  5. "বাংলাপেডিয়া"। ২ মার্চ ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১৮

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.