আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া

আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া (১ মার্চ ১৯৪৩ - ২৭ জুলাই ২০১০)[2] একজন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা, সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়-এর সাবেক মন্ত্রী। তিনি নরসিংদী-৩ আসন থেকে পঞ্চম, যষ্ঠ, সপ্তমঅষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা ৪ বার বিজয়ী সংসদ সদস্য ছিলেন। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তকাল পর্যন্ত তিনি বিএনপির মহাসচিব ছিলেন। [3][4][5][6]

আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া
কাজের মেয়াদ
২৬ জুন ১৯৯৬  ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭
পূর্বসূরীআব্দুস সালাম তালুকদার
উত্তরসূরীখোন্দকার দেলোয়ার হোসেন
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়
কাজের মেয়াদ
১০ অক্টোবর ২০০১  ২৮ অক্টোবর ২০০৬
পূর্বসূরীজিল্লুর রহমান -আওয়ামী লীগ
উত্তরসূরীসৈয়দ আশরাফুল ইসলাম- আওয়ামী লীগ
নরসিংদী-৩ সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
২০ মার্চ ১৯৯১  ২৯ অক্টোবর ২০০৬
পূর্বসূরীশাহজাহান সাজু - (জাতীয় পার্টি) [1]
উত্তরসূরীজহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন- আওয়ামী লীগ
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মমার্চ ১, ১৯৪৩
নরসিংদী
মৃত্যু২৭ জুলাই ২০১০(2010-07-27) (বয়স ৬৭)
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
বাংলাদেশ
পেশারাজনীতিবিদ
যে জন্য পরিচিতবিএনপি মহাসচিব

জন্ম ও শিক্ষা

আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার জন্ম ১৯৪৩ সালের ১ মার্চ। নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়নের আসাদ নগরে নানার বাড়িতে তার জন্ম। গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষার পর শিবপুর হাই স্কুল থেকে এসএসসি ও নরসিংদী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রির পাশাপাশি মান্নান ভূঁইয়া এলএলবি ডিগ্রিও অর্জন করেন। [7] বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শেষে কিছুদিন শিক্ষকতাও করেন মান্নান ভূঁইয়া।

রাজনৈতিক জীবন

ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন মান্নান ভূঁইয়া। ছাত্র ইউনিয়ন দিয়ে তার ছাত্র রাজনীতির যাত্রা শুরু। এই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পরীক্ষার আগে তাকে গ্রেপ্তার হয়ে বেশ কিছুদিন কারাবরণ করতে হয়। ১৯৬০ সালে মান্নান ভূঁইয়া নরসিংদী কলেজ ছাত্র সংসদে সমাজসেবা সম্পাদক নির্বাচিত হন। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের অন্যতম সংগঠক হিসেবে ১৯৬২ সালে তিনি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পরবর্তী দুই বছর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৪-৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।[8]

ছাত্রজীবন শেষে মান্নান ভূঁইয়া মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ এ যোগ দেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন দীর্ঘদিন। গ্রামাঞ্চলে অবহেলিত কৃষকদের উন্নয়নে তার নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে উঠেছিলো। ন্যাপ থেকে মান্নান ভূঁইয়া ১৯৭৮ সালে ইউনাটেড পিপলস পার্টির (ইউপিপি) সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। কয়েক বছর তিনি ওই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এরপর প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অণুরোধে ১৯৮০ সালে মান্নান ভূঁইয়া বিএনপিতে যোগ দেন। জিয়া তাকে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের আহবায়ক মনোনীত করেন। তিনি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি বিষয়ক সম্পাদকও ছিলেন।

স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনি বিএনপির অন্যতম রূপকারও ছিলেন। ১৯৮৮ সালে থেকে মান্নান ভূঁইয়া বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন টানা সাড়ে ৮ বছর, অর্থাৎ '৯৬ সালের ২৫ জুন পর্যন্ত। '৯৬ সালের ২৬ জুন খালেদা জিয়া তাকে দলের মহাসচিব মনোনীত করেন। টানা ১১ বছর মান্নান ভূঁইয়া বিএনপির মহাসচিব ছিলেন। পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে তিনি টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার প্রথম সরকারের শ্রম ও জনশক্তি এবং পরে কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। জোট সরকারের তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ছিলেন। ১/১১ এর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জরুরি অবস্থার সময় দলের পক্ষ থেকে সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করলে খালেদা জিয়া ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মহাসচিব পদ এবং দল থেকে মান্না ভুঁইয়াকে বহিষ্কার করেন।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তিনি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। নরসিংদীর শিবপুরসহ বিশাল এলাকা জুড়ে তিনি মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। তিনি ওই অঞ্চলের কমান্ডার ছিলেন।

সম্মাননা ও স্বীকৃতি

পরিবার

ব্যক্তিজীবনে মান্নান ভূঁইয়া দুই ছেলের জনক। বড় ছেলে ভূঁইয়া অনিন্দ মোহায়েমেন রাজন এবং ছোট ছেলে ভূঁইয়া নন্দিত নাহিয়ান স্বজন। স্ত্রী অধ্যাপক মরিয়ম বেগম ঢাকা কলেজে অধ্যক্ষ থাকাকালে অবসরে যান।

মৃত্যু

মান্নান ভূঁইয়া দীর্ঘদিন ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। এ জন্য তিনি দুই দফা সিঙ্গাপুর যেয়ে চিকিৎসা নেন। সর্বশেষ ৩১ মে ২০১০ সালে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য যান। সেখানে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন। সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে ৭ জুলাই ২০১০ সালে তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। ২৮ জুলাই, ২০১০ তারিখে তিনি ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।[9]

তথ্যসূত্র

  1. "List of 4th Parliament Members"www.parliament.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৬
  2. "মান্নান ভূঁইয়া ছিলেন চাল-চুলোহীন"বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম অনলাইন। ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৭
  3. "৫ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (PDF)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা।
  4. "৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (PDF)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা।
  5. "৭ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (PDF)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা।
  6. "৮ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (PDF)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা।
  7. "মান্নান ভূঁইয়ার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন", জুলাই ২৭, ২০১০
  8. "Bhuiyan ready to join govt, whoever wins"দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০১৯
  9. "মান্নান ভূঁইয়া আর নেই"www.prothom-alo.com। ২৯ জুলাই ২০১০।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.