আব্দুর রৌফ চৌধুরী
আব্দুর রৌফ চৌধুরী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ। সাবেক প্রতিমন্ত্রী। তিনি জুন ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে দিনাজপুর-১ আসন (বীরগঞ্জ-কাহারোল) থেকে জাতীয় নির্বাচিত সংসদ সদস্য।[1][2]
আব্দুর রৌফ চৌধুরী | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | ধনতলা, বোঁচাগঞ্জ, দিনাজপুর | ২৮ ডিসেম্বর ১৯৩৭
মৃত্যু | ২১ অক্টোবর ২০০৭ ৬৯) ধনতলা, বোঁচাগঞ্জ, দিনাজপুর | (বয়স
জাতীয়তা | ![]() |
পেশা | রাজনীতিবিদ |
পরিচিতির কারণ | রাজনীতিবিদ, ক্রীড়াবিদ |
সন্তান | খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (ছেলে) |
পারিবারিক জীবন
তিনি ২৮ ডিসেম্বর ১৯৩৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) দিনাজপুর জেলার বোঁচাগঞ্জ থানার ধনতলা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মৌলভী খোরশেস চৌধুরী এবং মাতা আয়েশা খাতুন চৌধুরী। আট ভাইবোনের মধ্যে তিনিই ছিলেন সব থেকে ছোট। পিতা মৌলভী খোরশেস চৌধুরী সমাজ সেবক ছিলেন। রৌফ চৌধুরীর জন্মের ১ বছর পর তার পিতা পরলোক গমন করেন। ১৯৬২ সালে তিনি পঞ্চগড়ের ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন সরকারের জ্যেষ্ঠ কন্যা রমিজা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ৫ কন্যা ও এক পুত্রের জনক।
তার একমাত্র পুত্র খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বর্তমানে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বাংলাদেশ সরকারের পরপর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
শিক্ষাজীবন
১৯৫২ সালে সিরাজগঞ্জ থেকে মেট্রিক পাশ করেন। এরপর ঢাকা কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করেন। পরবর্তীতে দিনাজপুর তৎকালীন সুরেন্দ্রনাথ (এস.এন) কলেজে বি.এ পড়েন।
রাজনৈতিক জীবন
উচ্চ মাধ্যমিক পড়াকালীন সময়ই তিনি ছাত্র নেতা ছিলেন। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তার শখ্যতা গড়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই তিনি দিনাজপুর এস.এন কলেজের ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিত্ব করেন। পাকিস্তান আমলে বৃহত্তর দিনাজপুর (বর্তমান দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়) জেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আব্দুর রৌফ চৌধুরী।
১৯৯০ সালে তিনি বোচাগঞ্জ উপজেলায় চেয়্যারম্যন নির্বাচিত হোন। ১৯৯৬ সালের পূর্ববর্তী সময়ে দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন একাধারে ১৫ বছর। ১৯৯৬ সালে দিনাজপুর-১ আসন (বীরগঞ্জ-কাহারোল) থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হোন।[3] পরবর্তীতে ডাক তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[4] ২০০২ সালে জোট সরকারের শাসন আমলে ১৫ আগস্ট সেতাবগঞ্জে জাতীয় শোক দিবস কর্মসূচীতে পুলিশের বাঁধার সম্মুখীন হয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান তিনি। এরপর দীর্ঘদিন চিকিৎসারত ছিলেন।
আন্দোলন
১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। ’৭৫ পরবর্তী সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনে সামনের কাতারে নেতৃত্ব দেন।
মুক্তিযুদ্ধ
আব্দুর রৌফ চৌধুরী যুদ্ধকালীন সময়ে মুজীব নগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের দূত হিসেবে ছিলেন পূর্বাঞ্চলীয় জোনে। সেই সাথে বোঁচাগঞ্জ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠক ছিলেন। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বোঁচাগঞ্জ উপজেলাকে পাক-হানাদার মুক্ত করেন।
ক্রীড়াজীবন
৫০ থেকে ৬০ এর দশকে ফুটবল খেলায় দিনাজপুরের জন্য অনেক সুনাম বয়ে এনেছিলেন তিনি। তৎকালীন স্থানীয় ডি.এস.এ দলের অপরিহার্য খেলোয়াড় ছিলেন এবং দিনাজপুর ডি.এস.এ দলের হয়ে রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, পাবনা, রাজশাহী জেলায় নানা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জয়ের মুকুট ছিনিয়ে নিয়ে আসেন। সেই সময় উত্তরবঙ্গের সেরা ফুটবলার হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন। খেলোয়াড়ের পাশাপাশি তিনি সফল ক্রীড়া সংগঠকও ছিলেন। তার নির্দেশনায় অনেক কৃতী খেলোয়াড় গড়ে ওঠেন। [5]
মৃত্যু
আব্দুর রৌফ চৌধুরী ২০০৭ সালের ২১ অক্টোবর রাত ৯ টায় তার নিজ বাসভবন, বোঁচাগঞ্জ থানার ধনতলা গ্রামে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। [4]
তথ্যসূত্র
- BanglaNews24.com। "আব্দুর রৌফ চৌধুরীর ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী সোমবার"। banglanews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২৫।
- "মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুর রৌফ চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ | কালের কণ্ঠ"। Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২৫।
- "৭ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (PDF)। জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশ সরকার। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা।
- বীরগঞ্জ প্রতিদিন, প্রয়াত মন্ত্রী আব্দুর রৌফ চৌধুরীর ৬ষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকী পালিত
- যোদ্ধা অনলাইন পত্রিকা, ৬ আগস্ট ২০১৪