আবদুল গফুর হালী
আবদুল গফুর হালী (জন্ম: ৬ আগস্ট, ১৯২৯- মৃত্যু: ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬) একজন বাংলাদেশী গীতিকার, সুরকার ও লোকশিল্পী। তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক, মাইজভাণ্ডারী, মুর্শিদি, মারফতি প্রভৃতি ধারায় প্রায় দুই হাজারের অধিক গান রচনা করেছেন। ২০১০ সালে তাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র মেঠোপথের গান।[1]
আবদুল গফুর হালী | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | |
মৃত্যু | ২১ ডিসেম্বর ২০১৬ ৮৭) চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ | (বয়স
নাগরিকত্ব | ![]() ![]() ![]() |
পেশা |
|
পিতা-মাতা |
|
হালী নিজের রচিত অধিকাংশ গানে সুরারোপ করেন। এছাড়াও রচনা করেছেন একাধিক আঞ্চলিক নাটক। আস্কর আলী পণ্ডিতের ভাবশিষ্য হালী যদিও নাটক রচনা ও সুর সৃষ্টি করেন। তার গান নিয়ে দুটি গ্রন্থ তত্ত্ববিধি ও জ্ঞানজ্যোতি।[2]
প্রাথমিক জীবন


আবদুল গফুর হালী ১৯২৮ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার রশিদাবাদে জন্ম নেন। তার পিতা আবদুস সোবহান এবং মাতা গুলতাজ খাতুন। রশিদাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জোয়ারা বিশ্বম্বর চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয় থেকে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেন।[3][4][5] তবে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত একাডেমিক শিক্ষা অর্জনের পর ইস্তফা দেন।
শৈশবকালে তিনি ঐতিহাসিক উল্লেখযোগ্য গায়ক-গীতিকার আসকার আলী পণ্ডিতের কাজ দ্বারা অনুপ্রাণিত হন। পরে মওলানা বজলুল করিম কাঞ্চনপুরী, মাওলানা আবদুল হাদি এবং রমেশ শীলের মতো মাইজভান্ডারী সুফি গায়কদের দ্বারা প্রভাবিত হন। তিনি কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কীভাবে হারমোনিয়াম শিখেননি, তবে তাদের কাজ অনুসরণ করতেন।
কর্মজীবন
অল্প বয়সেই, তিনি আগ্রাবাদ বেতার কেন্দ্রের অডিশনে প্রথম স্থান অর্জন করেছিল। নিবন্ধিত না হওয়ায় ১৯৬৩ সাল থেকে, তার গানগুলি নিয়মিতভাবে রেডিওতে সরাসরিতে প্রচারিত হত। ৭ বছর পরে, তিনি পূর্ব পাকিস্তান রেডিওতে গায়ক-গীতিকার-সুরকার হিসেবে নিবন্ধ করেন। তারপর থেকে তিনি একজন পেশাদার গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক হিসাবে তাঁর জীবন পার করছেন। তিনি বাংলাদেশের টেলিভিশন এবং রেডিও চ্যানেলগুলির জন্য নিয়মিত গান লিখতেন এবং সুর করতেন।
সঙ্গীতজীবন
তিনি ১,৫০০-এরও বেশি গান লিখেছেন এবং সুর দিয়েছেন । তাঁর জনপ্রিয় কিছু সুফি গান হল:
- দুই কূলের সোলতান ভান্ডারী
- দেখে যারে মাইজভাণ্ডারে
- কতো খেলা জানরে মওলা
- মাইজভাণ্ডারে কি ধন আছে
- চল যাই জিয়ারতে মোহছেন আউলিয়ার দরবারে
- আল্লাহর ফকির মরে যদি
তার কয়েকটি জনপ্রিয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক গান হল:
- সোনাবন্ধু তুই আমারে করলি রে দিওয়ানা
- আহমেদুল হক সিদ্দিকী রচিত 'রসিক তেল কাজলা কোন পাঞ্জাবিঅলা'
- বন্ধু আঁর দুয়ারদি যঅ
- অই লাল কোর্তা অলা
- ছোডকাইল্লা পীরিত আঁর
- ন মাতাই ন বোলাই গেলিরে বন্ধুয়া
- মনের বাগানে ফুটিল ফুলরে
- তুঁই যাইবা সোনাদিয়া বন্ধু, মাছ মারিবার লাই
- অ শ্যাম রেঙ্গুম ন যাইও
- ঢোল বাজের আর মাইক বাজের
- বানুরে অ বানু আঁই যাইয়্যুম গই চাটগাঁ শঅরত তোঁয়ার লাই আইন্নুম কি?
নাটক
তিনি ছয়টি আঞ্চলিক নাটক রচনা করেছেন। এর মধ্যে গুলবাহার গীতিনাট্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে মঞ্চায়িত ও বেতার-টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। নাটকটিতে আস্কর আলী পণ্ডিতের কালজয়ী গান ডালেতে লড়িচড়ি বৈও চাতকি ময়নারে সহ অন্যান্য গান অন্তর্ভুক্ত হয়। তিনি আজব সুন্দরী নামেও একটি নাটক রচনা করেছেন। আঞ্চলিক নাটকগুলো হল:[3]
- গুলবাহার
- নীলমণি
- কুশল্যা পাহাড়
- চাটগাঁইয়া সুন্দরী
- সতী মায়মুনা
- আশেক বন্ধু
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

জার্মানির হালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতবর্ষ বিষয়ক দর্শন শাস্ত্রের সহকারী অধ্যাপক হানস হারডার (বর্তমানে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক) ১৯৮৯ সালের দিকে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের মাইজভান্ডারসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। পরে শিল্পী কল্যাণী ঘোষের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় আবদুল গফুর হালীর সঙ্গে। তার জীবন ও গান নিয়ে ২০০৪ ডার ফেরুকটে গফুর, স্প্রিখট (পাগলা গফুর, বলে) নামে একটি গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এতে হালীর ৭৬টি গান অন্তর্ভুক্ত হয়। এগুলোকে আবদুল গফুর হালী রচিত পূর্ববাংলার মরমি গান বলে উল্লেখ করেছেন হানস হারডার। তিনি আবদুল গফুর হালী সম্পর্কে লেখেন, ‘আবদুল গফুর হালীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রি বা উপাধি না থাকলেও নিজের চেষ্টায় তিনি অসাধারণ জ্ঞানের অধিকারী হতে সক্ষম হয়েছেন।[4]
পুরস্কার
তিনি বেশ কয়েকটি জাতীয় এবং প্রাতিষ্ঠানিক পুরষ্কার অর্জন করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি হ'ল:
মৃত্যু
তিনি ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের মাউন্টেন হাসপাতালে মারা যান।[12] তিনি ফুসফুসের ক্যানসার ও বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- নাসির উদ্দিন হায়দার (আগস্ট ৫, ২০১০)। "গফুর হালীকে নিয়ে 'মেঠোপথের গান'"। দৈনিক প্রথম আলো। চট্টগ্রাম। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৬, ২০১৫।
- বাংলাদেশের বিস্মৃতপ্রায় লোকসঙ্গীত, শামসুল আরেফীন। বলাকা প্রকাশন,চট্টগ্রাম।ফেব্রুয়ারি ২০১২। [পৃষ্ঠা ১৩৭]
- সাইমন জাকারিয়া (১৪ এপ্রিল ২০১৫)। "মাইজভাণ্ডারি গানের কিংবদন্তি আবদুল গফুর হালী"। দৈনিক কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২৩, ২০১৫।
- নাসির উদ্দিন হায়দার (জানুয়ারি ২৩, ২০১০)। "গানের সাধক গফুর হালী"। দৈনিক প্রথম আলো। চট্টগ্রাম। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৬, ২০১৫।
- নাসির উদ্দিন হায়দার (নভেম্বর ২৭, ২০১৪)। "সাধক-শিল্পী আবদুল গফুর হালী"। দৈনিক আজাদী। চট্টগ্রাম। ২০১৫-০৯-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৫, ২০১৫।
- "২০১২ সালে চট্টগ্রাম সমিতি পদক পেলেন যাঁরা"। চট্টগ্রাম সমিতি–ঢাকা। ডিসেম্বর ২৫, ২০১৪।
- "চট্টগ্রাম সমিতি ঢাকার 'চট্টগ্রাম উৎসব আজ"। দৈনিক আজাদি। ডিসেম্বর ২৫, ২০১২। সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২৩, ২০১৪।
সম্মাননা পাচ্ছেন আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকসহ ৫ ব্যক্তি
- "Building bridges through melody; World Music Day celebrated in Chittagong"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। জুন ২৪, ২০১৩।
- "'সুখেন্দু স্মৃতি নাট্যপদক' পেলেন গফুর হালী"। সুপ্রভাত বাংলাদেশ। জুলাই ১, ২০১৩। নভেম্বর ২৯, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- "চট্টগ্রামের টুকরো খবর"। সমকাল। মার্চ ২৪, ২০১৪। মার্চ ২৮, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- "জেলা শিল্পকলা একাডেমি সন্মাননা পেলেন ৫ গুণী"। দৈনিক সিটিজি টাইমস। মার্চ ২৩, ২০১৪। মার্চ ২৫, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা’১৩ পেলেন চট্টগ্রামের পাঁচ গুণীব্যক্তিত্ব। তাঁরা হলেন- লোকসংস্কৃতিতে আবদুল গফুর হালী, চারুকলায় আবুল মনসুর, নাট্যকলায় আবদুল জলিল, সঙ্গীতে কল্যাণী ঘোষ ও আবৃত্তিতে রঞ্জিত রক্ষিত
- "মারা গেছেন 'সোনাবন্ধু'-এর গীতিকবি গফুর"। প্রথম আলো। ২১ ডিসেম্বর ২০১৬।