আইসিস

আইসিস অথবা আরও বেশি বিশ্বাসযোগ্যভাবে আসেট (প্রাচীন গ্রিক: Ἶσις) হল প্রাচীন মিশরীয় ধর্মবিশ্বাসে মাতৃত্ব, যাদু এবং ঊর্বরতার দেবী। মূলত মিশরীয় ধর্মবিশ্বাসের দেবী হলেও, আইসিসের উপাসনা প্রাচীন মিশরের বাইরে গ্রিক-রোমান বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়েছিল। আদর্শ মা, স্ত্রী, প্রকৃতি ও যাদুর পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আইসিসের উপাসনা করা হত। দাস, কারীগর, পাপী তাপী জন থেকে শুরু করে ধনবান, অভিজাত, শাসনকর্তা, কুমারী নারী - সবার প্রার্থনাই আইসিস শুনতেন।[1]

আইসিস
মাতৃত্ব, যাদু এবং ঊর্বরতার দেবী
আইসিসকে চিত্রিত করা হয় সিংহাসনাকৃতির মুকুট পরিহিতা নারী হিসেবে, কখনো তার পাখির মত ডানাও দেখান হয়।
প্রধান অর্চনা কেন্দ্রফিলা, Abydos
প্রতীকসিংহাসন, গো-শৃংগ বিশিষ্ট সূর্য চাকতি এবং সিকামোর গাছ
সহোদরওসাইরিস,সেত এবং নেপথিস
সন্তানহোরাস এবং আনুবিস (পালিত সন্তান আনুবিস)

লিখিত ভাবে আইসিসের উপাসনার উল্লেখ পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ এর অল্প কিছু কাল পরেই, পঞ্চম রাজবংশের সময়ে। শুরুর দিকে, মিশরীয় পুরাণ অনুসারে আইসিস হলেন নুটগেবের প্রথমা কন্যা, হোরাসের মা। কালের প্রবাহে হাথরের কিছু বৈশিষ্ট্যও আইসিসের মধ্যে আসতে দেখা যায়। পরের দিকে দেখা যায়, আইসিসের একজন ভাইও রয়েছেন, ওসাইরিস, যিনি পরে তার স্বামী হন এবং তারা জন্ম দেন তাদের সন্তান হোরাস কে। ওসাইরিসের পূনর্জাগরণের ঘটনায় আইসিসের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। অপর এক দেবতা, সেতের এর হাতে ওসাইরিসের মৃত্যু হয়। আইসিস নিজের যাদু ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সেই মৃতদেহের সমস্ত বিচ্ছিন্ন অংশ গুলো জড়ো করেন এবং তাতে প্রাণ সঞ্চালণ করেন।[2] পরবর্তীতে পুরাণের এই ঘটনা মিশরীয়দের ধর্মবিশ্বাসের উপর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে।

আইসিসের অন্যান্য পরিচয়ের মধ্যে রয়েছে সারল্যের দেবী, মৃতদের রক্ষাকারিনী, শিশুদের দেবী যার থেকে সবকিছুর শুরু হয়, রুটি, পানীয় এবং সবুজ ক্ষেতের দেবী। পরের দিকে মিশরীয় পুরাণে এই বিশ্বাস দেখা যায় যে, স্বামী ওসাইরিসকে হারানোর শোকে ক্রন্দরতা আইসিসের অশ্রূ থেকেই নীল নদ প্লাবিত হয়। প্রতি বছর ওসাইরিসের মৃত্যু এবং পুনর্জাগরণকে বিভিন্ন রকম আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপন করা হত। মিশর ছাড়িয়ে আইসিসের উপাসনা ছড়িয়ে পড়েছিল গ্রিক-রোমান বিশ্বেও। খ্রিস্টিয় মতবাদের প্রচার শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আইসিসের উপাসনা চালু ছিল সে সব অঞ্চলে।[3]

দেয়ালচিত্রে আইসিস

নামের উৎস


,
 
or
,
আইসিস
চিত্রলিপিতে

"আইসিস" শব্দটি এই দেবীর নামের গ্রিক সংস্করণের ইংরেজি করা প্রতিরূপ। গ্রিক নামটাও আবার প্রকৃত মিশরীয় নামের বানানের শেষে গ্রিক ভাষার ব্যাকরণের প্রয়োজন মত "-s" যোগ করে পাওয়া গেছে।

মিশ্রীয় নামটা লেখা হয় ỉs.t অথবা ȝs.t হিসেবে, অর্থ হল "সিংহাসনাধিষ্ঠিতা (তিনি)"। প্রকৃরত মিশরীয় ভাষায় উচ্চারণটা অজানা কারণ চিত্রলিপিতে স্বরবর্ণ নেই। সাম্প্রতীক সমীক্ষায় বর্তমান কালের অন্যান্য ভাষা বিশেষ করে গ্রিক এবং কপটিকের উপর ভিত্তি করে অনুমান করা হয় যে উচ্চারণটা হবে *Usat টেমপ্লেট:IPA-sem । ওসাইরিসের নামটাও—*Usir "Osiris" (ws-ỉr) শুরু হয় সিংহাসন চিত্রাক্ষর দিয়ে ʔs (-s)। কপটিক ভাষায় নামটা টিকে ছিল Ēse অথবা Ēsi হিসেবে, এবং যৌগিক নাম যেমন "Har-si-Ese" এর মধ্যে, যার অর্থ হয় "আইসিস পুত্র হোরাস"।

কাজের সুবিধার্থে Egyptologistsগণ সিদ্ধানত নিয়েছেন নামটা "ee-set" হিসেবে উচ্চারণ করার। ক্ষেত্রে বিশেষ "ee-sa" হিসেবেও উচ্চারণ করা হয়, শব্দান্তের "t" হল নারীবাচক অণুসর্গ, মিশরীয় ভাষার শেষ দিকে কত্থ্য রূপ থেকে লোপ পেয়েছিল।

"আইসিস" নামের অর্থ হল "সিংহাসন"। তার মুকুট হল একটি সিংহাসন। সিংহাসনের মনূষ্য প্রতিরূপ হিসেবে ফারাও'র ক্ষমতার বিশেষ প্রতীক ছিলেন আইসিস, ফারাওকে চিত্রিত করা হত তার সন্তান রূপে যার বসার সিংহাসনটাকে মনে করা হত আইসিসের দান। তার উপাসক গোষ্ঠী সমস্ত মিশরেই ছড়িয়ে ছিল, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাসনালয় ছিল নিম্ন মিশরে নীল ব-দ্বীপে বেহবেইত এল-হাগার অঞ্চলে এবং নেক্তানেবো'র (৩৮০-৩৬২ bce) শাসনামেলের শুরু থেকে ঊর্ধ্ব মিশরের ফিলা দ্বীপে।

তথ্যসূত্র

  1. R.E Witt, "Isis in the Ancient World", p. 7, 1997, আইএসবিএন ০-৮০১৮-৫৬৪২-৬
  2. Veronica Ions, Egyptian Mythology, Paul Hamlyn, 1968, আইএসবিএন ০-৬০০-০২৩৬৫-৬
  3. "The Church in Ancient Society: From Galilee to Gregory the Great", Henry Chadwick, p526, Oxford University Press, 2003, আইএসবিএন ০-১৯-৯২৬৫৭৭-১
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.