অ্যামিবোজোয়া
অ্যামিবোজোয়া (ইংরেজি: Amoebozoa) প্রায় ২৪০০টি প্রোটিস্ট প্রজাতি সমন্বিত একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব বিশেষ,[1] যাদের অধিকাংশের অঙ্গুলাকৃতি ভোঁতা সিউডোপড এবং নলাকৃতি মাইটোকন্ড্রিয়ার ক্রিস্টি বর্তমান।[2][3] বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অ্যামিবোজোয়াকে প্রোটিস্টা জগতের[4] বা প্রোটোজোয়া জগতের[5] একটি পর্ব হিসেবে শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব প্রোটিস্টোলজিস্টস কর্তৃক অ্যামিবোজোয়াকে সুকেন্দ্রিক জগতের একটি মহাদল হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।[2] বেশিরভাগ ফাইলোজেনেটিক প্রমাণ অনুসারে অ্যামিবোজোয়াকে ওপিস্থোকোন্ট নামক সুকেন্দ্রিক জগতের অপর এক মহাদলের সঙ্গে[1][3] একসঙ্গে ইউনিকোন্ট[6] বা অ্যামর্ফিয়া[2] বা ওপিমোডা[7] নামক এক শ্রেণীতে রাখা হয়ে থাকে।
অ্যামিবোজোয়া সময়গত পরিসীমা: নিওপ্রোটেরোজোয়িক–বর্তমান | |
---|---|
![]() | |
ক্যাওস ক্যারোলিনেনসিস নামক একটি অ্যামিবোজোয়া প্রজাতি | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
ক্ষেত্র: | ইউক্যারিওটা |
পর্ব: | অ্যামিবোজোয়া ম্যাক্স লূহে, ১৯১৩ টমাস ক্যাভালিয়র-স্মিথ, ১৯৯৮ |
উপপর্ব ও অধোপর্ব | |
| |
প্রতিশব্দ | |
|
বৈশিষ্ট্য
অ্যামিবোজোয়া বিভিন্ন প্রকারের প্রজাতির সমষ্টি হলেও অধিকাংশ সদস্যের মধ্যে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য বর্তমান। অ্যামিবোজোয়ার কোষগুলি সাধারণতঃ দানাদার এন্ডোপ্লাজম এবং স্বচ্ছ এক্টোপ্লাজমে বিভক্ত। চলনের সময় এন্ডোপ্লাজম সামনের দিকে এবং এক্টোপ্লাজম কোষ পর্দার সমান্তরালে ভেতরের দিকে প্রবাহিত হয়। এই সময়, বেশির ভাগ অ্যামিবোজোয়ার প্রজাতির স্পষ্ট একটি সামনের ও পেছনের দিক তৈরি হয়, যার ফলে সমগ্র কোষটি একটি সিউডোপডের আকার নেয়। আবার অনেক সময় একটি নির্দিষ্ট দিকে অনেকগুলি সিউডোপড তৈরি হয়, যা সেই দিকে চলনে সহায়তা করে। যতক্ষণ না পর্যন্ত জীবটি দিকপরিবর্তন করে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোষের দানাদার এন্ডোপ্লাজম একটি নির্দিষ্ট দিকে সিউডোপডের দিকে প্রবাহিত হয় এবং এক্টোপ্লাজম অন্যদিকে সরে যায়।[8] সমস্ত অ্যামিবোজোয়া ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতির মাধ্যমে খাদ্যসংগ্রহ করে থাকে, যেখানে কোষটি সিউডোপডের সাহায্যে খাদ্যকণাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে একটি ভ্যাকুওল তৈরি করে তার মধ্যে আবদ্ধ করে, যাতে সেগুলিকে বিভিন্ন প্রকার উৎসেচকের সাহায্যে ভেঙ্গে গ্রহণ করা যায়।
অ্যামিবা ও ক্যাওসের মত অধিকাংশ অ্যামিবোজোয়ার বহিরাবরণ থাকে না অথবা ককলিওপোডিয়াম ও কোরোটনেভেলার মত অ্যামিবোজোয়ার সূক্ষ বহিরাবণ থাকে। আবার আর্কেলিনিডা বর্গের প্রজাতিদের দেহ কঠিন বহিরাবণ থাকে, যার একটিমাত্র ছিদ্র দিয়ে সিউডোপড বেরিয়ে আসতে পারে।
শ্রেণীবিন্যাস
| |||||||||||||||||||
অ্যামিবোজোয়া ও ওপিস্থোকোন্টের মধ্যেকার সাদৃশ্য লক্ষ্য করে অন্যমান করা হয়েছে যে এই দুইটি দলের প্রজাতি একটি বিশেষ ক্লেড গঠন করে।[9] টমাস ক্যাভেলিয়ার-স্মিথ এই শাখার নাম দিয়েছেন ইউনিকোন্ট, যারা একটিমাত্র ফ্ল্যাজেলা যুক্ত একটি সাধারণ পূর্বপুরুষের বংশধর।[6] কিন্তু ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে অ্যাডল এই শাখার নাম দিয়েছেন অ্যামর্ফিয়া। সাম্প্রতিককালে এক গবেষণায় অ্যামর্ফিয়া এবং মালাউইমোনাসা ও কোলোডিক্টায়ন গণের জীবদের একত্রে ওপিমোডা নামক শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।[7]
সাধারণতঃ সমস্ত কন্দাকৃতি সিউডোপড যুক্ত অ্যামিবোজোয়া প্রজাতিকে লোবোসা উপপর্বের অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে টমাস ক্যাভেলিয়র-স্মিথ ও চাও তাদের গবেষণাপত্রে মত দেন যে, আর্ক্যামিবা ও মাইসিটোজোয়া লোবোসা উপপর্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত এবং পার্কোলোজোয়া ও এই উপপর্বের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই।[10] এরপর তারা অ্যামিবোজোয়া পর্বের মধ্যে কোনোসা নামক একটি নতুন উপপর্ব প্রচলন করেন ও তার মধ্যে আর্ক্যামিবা ও মাইসিটোজোয়া অধোপর্ব হিসেবে স্থান পায়র[11] সাম্প্রতিককালে অণু জিনবিদ্যার উপাত্ত তাদের এই শ্রেণিবিন্যাসকে সমর্থন করছে। লোবোসা উপপর্বে ফ্ল্যাজেলা বিহীন, ভোঁতা কন্দাকৃতি সিউডোপড বিশিষ্ট অ্যামিবোজোয়া এবং কোনোসা উপপর্বে ফ্ল্যাজেলা যুক্ত সূচালো অল্প শাখাযুক্ত সিউডোপড বিশিষ্ট অ্যামিবোজোয়া স্থান পেয়েছে।
তথ্যসূত্র
- Pawlowski; ও অন্যান্য (নভেম্বর ৬, ২০১২)। "CBOL Protist Working Group: Barcoding Eukaryotic Richness beyond the Animal, Plant, and Fungal Kingdoms"। PLOS biology। 10 (11)। doi:10.1371/journal.pbio.1001419।
- Adl; ও অন্যান্য (২০১২)। "The Revised Classification of Eukaryotes"। Journal of Eukaryotic Microbiology। doi:10.1111/j.1550-7408.2012.00644.x। PMID 23020233। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ৭, ২০১৫।
- Cavalier-Smith; ও অন্যান্য (২০১৫)। "Multigene phylogeny resolves deep branching of Amoebozoa"। Molecular Phylogenetics and Evolution। doi:10.1016/j.ympev.2014.08.011। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ৭, ২০১৫।
- Corliss, John O. (১৯৮৪)। "The Kingdom Protista and its 45 Phyla"। BioSystems। 17 (2): 87–126। doi:10.1016/0303-2647(84)90003-0। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ৭, ২০১৫।
- Cavalier-Smith, Thomas (২০০৩)। "Protist phylogeny and the high-level classification of Protozoa"। European Journal of Protistology। doi:10.1078/0932-4739-00002।
- Cavalier-Smith, Thomas (২০০৩)। "Protist phylogeny and the high-level classification of Protozoa"। European Journal of Protistology। 39 (4): 338–348। doi:10.1078/0932-4739-00002।
- Derelle; ও অন্যান্য (২০১৫)। "Bacterial proteins pinpoint a single eukaryotic root"। Proceedings of the National Academy of Sciences। doi:10.1073/pnas.1420657112। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ৭, ২০১৫।
- Jeon, Kwang W. (১৯৭৩)। Biology of Amoeba। New York: Academic Press। পৃষ্ঠা 100।
- Eichinger, L.; Pachebat, J.A.; Glöckner, G.; Rajandream, M.A.; Sucgang, R.; Berriman, M.; Song, J.; Olsen, R.; Szafranski, K.; Xu, Q. (২০০৫)। "The genome of the social amoeba Dictyostelium discoideum"। Natur। 435 (7038): 43–57। doi:10.1038/nature03481। PMID 15875012। পিএমসি 1352341
। - Cavalier-Smith, T.; Chao, E.E. (১৯৯৬)। "Molecular phylogeny of the free-living archezoan Trepomonas agilis and the nature of the first eukaryote"। Journal of Molecular Evolution। 43 (6): 551–562। doi:10.1007/BF02202103। PMID 8995052।
- Cavalier-Smith, T. (১৯৯৮)। "A revised six-kingdom system of life"। Biological Reviews of the Cambridge Philosophical Society। 73 (3): 203–266। doi:10.1111/j.1469-185X.1998.tb00030.x। PMID 9809012।
আরো পড়ুন
![]() |
উইকিপ্রজাতিতে-এ বিষয় সম্পর্কিত তথ্যে রয়েছে: Amoebozoa |
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে অ্যামিবোজোয়া সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
- Schilde C, Schaap P (২০১৩)। "The Amoebozoa" (PDF)। Methods Mol. Biol.। Methods in Molecular Biology। 983: 1–15। doi:10.1007/978-1-62703-302-2_1। PMID 23494299। আইএসবিএন 978-1-62703-301-5। পিএমসি 4037983
। - "Amoebozoa"। NCBI Taxonomy Browser। 554915।
টেমপ্লেট:অ্যামিবোজোয়া