অস্ট্রালোপিথেকাস সেডিবা

অস্ট্রালোপিথেকাস সেডিবা আদি প্লাইস্টোসিন যুগের অস্ট্রালোপিথেকাস গণের একটি প্রজাতি যা ২০ লক্ষ বছর পূর্বে আফ্রিকাতে বসবাস করতো বলে জানা গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত ক্র্যাডল অফ হিউম্যানকাইন্ড অঞ্চলের "মালাপা জীবাশ্মস্থান" থেকে এই প্রজাতির অন্তত চারটি আংশিক জীবাশ্ম উদ্ধার করা হয়েছে। প্রথম জীবাশ্মটি পাওয়া যায় ২০০৮ সালের ১৫ই আগস্ট। এখন পর্যন্ত পাওয়া জীবাশ্মগুলো হচ্ছে, "এমএইচ১" নামে একটি বয়স্ক পুরুষ, "এমএইচ২" নামে একটি বয়স্ক নারী, আরেক জন বয়স্ক মানব যার লিঙ্গ জানা যায়নি এবং ১৮ মাস বয়সী একটি শিশু।[2][3] এমএইচ১ এবং এমএইচ২ জীবাশ্ম দুটি একসাথে ছিল এবং হিসাব করে তাদের বয়স নির্ণয় করা হয়েছে ১৯.৭৭ থেকে ১৯.৮ লক্ষ বছরের মধ্যে।[4][5]

অস্ট্রালোপিথেকাস সেডিবা
সময়গত পরিসীমা: ১.৯৫–১.৭৮কোটি
কা
পা
ক্রি
প্যা
প্লাইস্টোসিন
কারাবো-র খুলির ইন সাইট্যু জীবাশ্ম[1]
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: Mammalia
বর্গ: Primates
পরিবার: Hominidae
গণ: Australopithecus
প্রজাতি: A. sediba
দ্বিপদী নাম
Australopithecus sediba
বার্গার ও তার দল, ২০১০[2]

এখন পর্যন্ত এই প্রজাতির প্রায় ২২০ খণ্ড জীবাশ্ম উদ্ধার করা গেছে।[2] দক্ষিণ আফ্রিকার জীবাশ্ম-নৃবিজ্ঞানী লি বার্গার এবং তার সহকর্মীরা এই আবিষ্কারের বিস্তারিত ২০১০ সালে প্রথমবারের মত বিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স-এ প্রকাশ করেন।

নামকরণ

লি এবং তার সহকর্মীরা এই প্রজাতির নাম দেন অস্ট্রালোপিথেকাস সেডিবা। যেখানে প্রথম জীবাশ্ম পাওয়া গেছে সে অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা সোথো-তে সেডিবা শব্দের অর্থ প্রাকৃতিক ঝর্ণা।[2] পরবর্তীতে দক্ষিণ আফ্রিকায় দেশব্যাপী একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় সেডিবার নামকরণের জন্য। অস্ট্রালোপিথেকাস সেডিবা বৈজ্ঞানিক নাম, কিন্তু এর একটি সাধারণ নাম দিতে বলা হয় সবাইকে। বিচারকদের মধ্যে স্বয়ং লি বার্গারও ছিলেন। অবশেষে জোহানেসবার্গের ১৭ বছর বয়সী এক ছাত্রী বিজয়ী হয়। তার দেয়া নাম "কারাবো"-ই আনুষ্ঠানিক নাম হিসেবে গৃহীত হয়। Tswana ভাষায় কারাবো শব্দের অর্থ উত্তর। তার কথা অণুযায়ী সেডিবা যেহেতু মানুষের উৎপত্তি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে এজন্যই তার নাম হওয়া উচিত কারাবো।[1]

আবিষ্কার

২০০৮ সালের ১৫ই আগস্ট সেডিবার প্রথম জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন দক্ষিণ আফ্রিকার জীবাশ্ম-নৃবিজ্ঞানী লি বার্গার এবং তার ৯ বছর বয়সী ছেলে ম্যাথিউ। জোহানেসবার্গের উত্তরে মালাপা গুহার আশপাশে ডলোমাইটসমৃদ্ধ পাহাড়ে বাবার খননের স্থানগুলোতে জীবাশ্ম খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎই ম্যাথিউ একটি জীবাশ্মীকৃত হাড়ের সন্ধান পায়। সে সাথেই সাথে বাবাকে ডাকে আর বার্গার দেখেই বুঝতে পারেন এটি কোন হোমিনিড প্রাণীর কলারের হাড় ক্ল্যাভিকল। বার্গার প্রথমে নিজের চোঁখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তবে হাড় যে শিলার সাথে লেগে ছিল সেটি উল্টোতেই তিনি বিস্ময়ের সাথে আরও ফসিল দেখতে পেলেন, একটি ম্যান্ডিবল এবং সাথে কিছু দাঁত, একটি শ্বদন্ত পুরো বেরিয়ে আছে। পরে গবেষণা করে দেখা যায় এই জীবাশ্মটি ৪ ফুট ২ ইঞ্চি দীর্ঘ্য এক কিশোরের যার মাথার খুলি আবিষ্কৃত হয় ২০০৯ সালের মার্চ মাসে। এসব আবিষ্কারের খবর জনসাধারণকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয় ২০১০ সালের ৮ই এপ্রিল।

চার চারটি হোমিনিড জীবাশ্মের পাশাপাশি মালাপা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে অনেক ধরনের প্রাণীর ফসিল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আছে বিড়াল, বেঁজি এবং অনেক কৃষ্ণসার মৃগ বা এন্টিলোপ। বার্গার এবং তার সহকর্মী ভূতত্ত্ববিদ পল ডার্কস ধারণা করছেন, হোমিনিডসহ এই সব প্রাণী সম্ভবত পানির সন্ধানে এই গুহার কাছাঁকাছি এসে আটকে গিয়েছিল। মালাপা গুহাটি একসময় ১০০-১৫০ ফুট বা ৩০-৪৬ মিটার গভীর মৃত্যকূপ হিসেবে কাজ করেছিল বলে মনে করছেন তারা। মৃত্যুর পর এই মরদেহগুলো সম্ভবত মাটির নিচের কোন চুনসমৃদ্ধ হ্রদে গিয়ে পড়ে যার নিচে বালি ছিল। এই পরিবেশই তাদেরকে ফসিলে পরিণত করতে সাহায্য করে।[6]

আরও দেখুন

  • মানব বিবর্তন
  • জীবাশ্মস্থানসমূহের তালিকা
  • মানব বিবর্তন সংশ্লিষ্ট জীবাশ্মের তালিকা

তথ্যসূত্র

  1. Juliet King (জুন ৪, ২০১০)। "Australopithecus sediba fossil named by 17-year-old Johannesburg student"। Origins Centre। ২৫ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৯, ২০১১
  2. Berger, L. R.; de Ruiter, D. J.; Churchill, S. E.; Schmid, P.; Carlson, K. J.; Dirks, P. H. G. M.; Kibii, J. M. (২০১০)। "Australopithecus sediba: a new species of Homo-like australopith from South Africa"। Science328 (5975): 195–204। doi:10.1126/science.1184944। PMID 20378811
  3. Ann Gibbons (২০১১)। "A new ancestor for Homo?"। Science332 (6029): 534। doi:10.1126/science.332.6029.534-a। PMID 21527693
  4. African fossils put new spin on human origins story - BBC News - Jonathan Amos - Retrieved 9 September 2011.
  5. Dirks, P. H. G. M.; Kibii, J. M.; Kuhn, B. F.; Steininger, C.; Churchill, S. E.; Kramers, J. D.; Pickering, R.; Farber, D. L.; Mériaux, A.-S. (২০১০)। "Geological setting and age of Australopithecus sediba from Southern Africa"। Science328 (5975): 205–208। doi:10.1126/science.1184950। PMID 20378812
  6. Celia W. Dugger; John Noble Wilford (এপ্রিল ৮, ২০১০)। "New hominid species discovered in South Africa"New York Times। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ৮, ২০১০

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.