জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল
জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (১৩ই জুন, ১৮৩১ - ৫ই নভেম্বর, ১৮৭৯) স্কটিশ পদার্থবিজ্ঞানী যিনি তড়িচ্চুম্বকীয় তত্ত্ব আবিষ্কারের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। উনবিংশ শতকের বিজ্ঞানী হয়েও বিংশ শতকের বিজ্ঞানের উপর এতো প্রভাব ম্যাক্সওয়েল ছাড়া আর কারো ছিল না। এজন্যই আবিষ্কারের মৌলিকত্বের বিচারে নিউটন ও আইনস্টাইনের সাথে তার নাম উচ্চারিত হয়। ১৯৩১ সালে ম্যাক্সওয়েলের জন্ম শতবার্ষিকী পালিত হয়েছিল। সে সময় আইনস্টাইন বলেছিলেন, নিউটনের পর থেকে পদার্থবিজ্ঞান যত বিজ্ঞানীর দেখা পেয়েছে, তার মধ্যে ম্যাক্সওয়েলই সবচেয়ে সফল এবং প্রভাবশালী।
জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল | |
---|---|
![]() James Clerk Maxwell (1831–1879) | |
জন্ম | এডিনবরা, স্কটল্যান্ড | ১৩ জুন ১৮৩১
মৃত্যু | ৫ নভেম্বর ১৮৭৯ ৪৮) কেমব্রিজ, ইংল্যান্ড | (বয়স
নাগরিকত্ব | United Kingdom |
জাতীয়তা | স্কটিশ |
কর্মক্ষেত্র | পদার্থবিজ্ঞান and গণিত |
প্রতিষ্ঠান | Marischal College, Aberdeen King's College London ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় |
প্রাক্তন ছাত্র | এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় |
শিক্ষায়তনিক উপদেষ্টাবৃন্দ | William Hopkins |
উল্লেখযোগ্য ছাত্রবৃন্দ | George Chrystal |
পরিচিতির কারণ | ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণসমূহ Maxwell distribution Maxwell's demon Maxwell's discs Maxwell speed distribution Maxwell's theorem Maxwell material Generalized Maxwell model Displacement current |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | Smith's Prize (1854) Adams Prize (1857) Rumford Medal (1860) Keith Prize (1869-71) |
স্বাক্ষর ![]() |
ম্যাক্সওয়েলের আবিষ্কারগুলোর সবচেয়ে বড় দিক ছিল, তার প্রায় সবগুলোই বিংশ শতকে বিজ্ঞানের প্রধান প্রধান আবিষ্কারের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণের ধারণা শুরু হয়েছে ম্যাক্সওয়েলের মাধ্যমে। মাইকেল ফ্যারাডে বৈদ্যুতিক ও চৌম্বক বলরেখা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যে বৈশিষ্ট্যগুলো দাঁড়া করিয়েছিলেন সেগুলোর উপর ভিত্তি করে ম্যাক্সওয়েল তার ক্ষেত্র সমীকরণ প্রতিপাদন করেন। এই সমীকরণগুলোই আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছিল। এভাবেই ফ্যারাডে থেকে ম্যাক্সওয়েল হয়ে আইনস্টাইনে এসে ভর-শক্তির সমতুল্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়। ম্যাক্সওয়েলের মতবাদ ও তত্ত্ব কোয়ান্টাম তত্ত্বের আবিষ্কারের পথ করে দিয়েছিল। তিনি তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণের যে ব্যাখ্যা করেছিলেন তা তাপ বিকিরণের অসন্তোষজনক সূত্রের জন্ম দিয়েছে যা মাক্স প্লাংকের কোয়ান্টাম প্রকল্পের আগমনকে ত্বরিত করেছে। এভাবে একসময় আমরা বুঝতে পারি যে, তাপ বিকিরণ গুচ্ছে গুচ্ছে ঘটে যে গুচ্ছগুলোকে কোয়ান্টা বলে। প্লাংকের প্রকল্পের মূল অংশ অর্থাৎ তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণ ও পদার্থের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার ধারণাটিই পরমাণু এবং অণুর গঠন আবিষ্কারকে সহজ করে দিয়েছিল।
জীবনী
প্রাথমিক জীবন

ম্যাক্সওয়েলের জন্ম এডিনবরার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। পরিবারের একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। তাদের পরিবারের মূল নাম ছিল ক্লার্ক, ম্যাক্সওয়েল নামটি তার আইনজীবী বাবা পরে সংযুক্ত করেছিলেন। পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে মিড্লবাইয়ের বিশাল সম্পত্তি লাভ করার পরই তিনি এই নতুন নাম গ্রহণ করেছিলেন। ম্যাক্সওয়েলের বাবা-মা অনেক দেরিতে বিয়ে করেছিলেন। এজন্যই তার জন্মের সময় তার মায়ের বয়স ছিল ৪০ বছর। তার জন্মের পরপরই ম্যাক্সওয়েল পরিবার এডিনবরা ছেড়ে মিড্লবাই এস্টেটে তাদের নিজস্ব বাড়িতে চলে যায়।
১৮৩৯ সালে তার মা উদরের ক্যান্সারে কারণে মৃত্যুবরণ করেন। ম্যাক্সওয়েল নিজেও এই বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বাল্যকালে তিনি এক গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তেন যিনি তার মেধার ব্যাপারটি ঠিক ধরতে পারেননি। তিনি মনে করতেন ম্যাক্সওয়েল সবকিছু দেরিতে বুঝে। অবশ্য সেই বয়সেই বোঝা গিয়েছিল যে তার প্রচণ্ড উৎসাহ ও প্রখর স্মৃতিশক্তি আছে। খালা জেইন কেই ১৮৪১ সালে তাকে এডিনবরায় নিয়ে এসে এডিনবরা একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেন। এই একাডেমিতে তার সাথে পড়াশোনা করতো তার জীবনীকার লুইস ক্যাম্পবেল ও বন্ধু Peter Guthrie Tait।
পাঠ্যবইয়ের বাইরের বিষয়েই তার উৎসাহ বেশি ছিল। পরীক্ষার ফলাফলকে তেমন গুরুত্ব দিতেন না। মাত্র ১৪ বছর বয়সে প্রথম গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। এই গবেষণাপত্রে তিনি গোলাকার বক্রের একটি সাধারণীকৃত সিরিজ বর্ণনা করেছিলেন, উপবৃত্তের উদাহরণ ব্যবহার করে পিন এবং সূতোর মাধ্যমে যা তৈরি করা যায়। জ্যামিতি ও যান্ত্রিক নকশার প্রতি তার এই ভালবাসা সারা জীবনই বজায় ছিল। পূর্ণবয়স্ক ম্যাক্সওয়েলের গবেষণাকর্মে এই ভালবাসা অনেক কাজে দিয়েছে।