পত্র উপন্যাস
পত্র উপন্যাস হলো ধারাবাহিক লিখিত পত্রের আকারে লেখা একটি উপন্যাস। সাধারণত চিঠিপত্রের রূপে লেখা হলেও দিনপঞ্জী, পত্রিকার কাটিং এবং অন্যান্য নথিপত্র ব্যবহার করেও লেখা যায়। সম্প্রতি ইলেকট্রনিক "ডকুমেন্ট" যেমন রেকর্ডিং, রেডিও, ব্লগ এবং ই-মেইল মাধ্যও ব্যবহৃত হচ্ছে। পত্র উপন্যাসের ইংরেজি প্রতিশব্দ epistolary এসেছে গ্রীক শব্দ ἐπιστολή epistolē (মানে অক্ষর) থেকে লাতিন হয়ে।

পত্ররূপটি গল্পে অনেকটা বাস্তবভাব আনে, যেহেতু চিঠিপত্র বাস্তব জীবনের অংশ। সবজান্তা কথক কৌশলের আশ্রয় না নিয়েই এভাবে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ দেখানো সম্ভব হয়।
প্রাথমিক রচনাসমূহ
পত্র উপন্যাসের উৎপত্তি সম্পর্কে দুটো তত্ব বিদ্যমান। প্রথম মতানুসারে, সাধারণ উপন্যাসগুলোতে পাত্রপাত্রীর চিঠির বর্ণনা দেয়া থেকেই এ ধারার শুরু, পরে ক্রমে ক্রমে উপন্যাসের লেখা কমিয়ে কেবল চিঠিতেই তা সীমাবদ্ধ করা হয়।[1] অন্য মতে, একসময় পত্র ও কবিতা প্রভৃতি নিয়ে যে সংকলনগুলো বেরোত সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি চিঠিকে একত্র করে সাধারণত (প্রায়শই রগরগে) গল্প বানানো হতো।[2] দুটি মতই স্বীকৃত।
বাংলা সাহিত্যে
বাংলা সাহিত্যে পত্রোপন্যাস খুব বেশি লেখা হয়নি। বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের পোনুর চিঠি, কাজী নজরুল ইসলামের বাঁধন হারা, প্রেমেন্দ্র মিত্রের প্রিয়তমাসু, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের ক্রৌঞ্চমিথুন ও তরুণকুমার ভাদুড়ীর সন্ধ্যাদীপের শিখা উল্লেখযোগ্য।[3]
ধরন
বহু ধরনের পত্র উপন্যাস আছে: একপাক্ষিক (ক কেবল একটি চরিত্রের চিঠি দেয়া, যেমন লেটার্স অফ এ পর্তুগিজ নান এবং দ্য স্প্যারোস অফ ইয়াং ওয়েদার), সংলাপীয় ( দুটি চরিত্রের চিঠি চালাচালি, যেমন লেটার্স অফ ফ্যানি বাটলার্ড), এবং বহপাক্ষিক (থিন বা তারো বেশি লোকের চিঠি, যেমন ব্রাম স্টোকারের ড্রাকুলা)। এছাড়াও, ক্লারিসা বা ডেন্জারাস লিয়াজোঁ প্রভৃতি বহুপাক্ষিক পত্র উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য-কৌশলটি হলো- একইসাথে, তবে আলাদাভাবে, নায়িকা এবং খলনায়কের পত্রবিনিময় দেখানো যা নাটকীয় উত্তেজনা তৈরি করে।
তথ্যসূত্র
- E.Th. Voss. Erzählprobleme des Briefromans, dargestellt an vier Beispielen des 18. Jahrhunderts. Bonn, 1960.
- B.A. Bray. L'art de la lettre amoureuse: des manuels aux romans (1550-1700). La Haye/Paris, 1967
- সাহিত্যের শব্দার্থকোশ, (১৯৯৯) সুরভি বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি কলকাতা, ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ৭০।