ইবোলা ভাইরাসজনিত রোগ
ইবোলা ভাইরাস ডিজিজ (EVD), ইবোলা হেমোরেজিক ফিভার (EHF), শুধু ইবোলা অথবা এবোলা হল ইবোলা ভাইরাস ঘটিত মনুষ্য রোগ। সাধারণতঃ লক্ষণগুলি ধরা পড়ে ভাইরাস সংক্রমণের দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর, যেগুলি হল জ্বর, গলা ব্যথা, পেশীর ব্যথা, এবং মাথা ধরা। সাধারণতঃ এর পর গা গোলানো, বমি, এবং ডাইরিয়া হয়,সাথে লিভার ও কিডনীর কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। এই জায়গাতে এসে কিছু মানুষের রক্তপাতজনিত সমস্যা শুরু হয়। [1]
ইবোলা ভাইরাসজনিত রোগ | |
---|---|
![]() 1976 photograph of two nurses standing in front of Mayinga N., a person with Ebola virus disease; she died only a few days later due to severe internal hemorrhaging. | |
শ্রেণীবিভাগ এবং বহিঃস্থ সম্পদ | |
বিশিষ্টতা | সংক্রামক রোগ[*] |
আইসিডি-১০ | A৯৮.৪ |
আইসিডি-৯-সিএম | ০৬৫.৮ |
ডিজিসেসডিবি | ১৮০৪৩ |
মেডলাইনপ্লাস | ০০১৩৩৯ |
ইমেডিসিন | med/626 |
মেএসএইচ | D০১৯১৪২ (ইংরেজি) |
এই ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে কোন সংক্রামিত পশুর (সাধারণতঃ বানর অথবা ফলাহারী বাদুড় fruit bat)-এর রক্ত বা শরীর রস-এর সংস্পর্শ থেকে।[1] প্রাকৃতিক পরিবেশে হাওয়ার মাধ্যমে সংক্রমণের কোন খবর পাওয়া যায়নি । [2] বিশ্বাস করা হয় যে বাদুড় নিজে আক্রান্ত না হয়ে এই রোগ বহন করে ও ছড়ায়। মানব শরীরে একবার সংক্রমণ ঘটলে মানুষের মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। জীবিত পুরুষের বীর্য-এর মাধ্যমে এই রোগ প্রায় দুই মাস পর্যন্ত পরিবাহিত হতে সক্ষম। রোগণিরূপণ করার জন্য সাধারণতঃ একই প্রকার লক্ষণযুক্ত অন্যান্য রোগ, যেমন, ম্যালেরিয়া, কলেরা এবং অন্যান্য ভাইরাল হেমোরেজিক ফিভারগুলিকে বাদ দিতে হয়। রোগণিরূপণকে নিশ্চিত করতে রক্তের নমুনাগুলির পরীক্ষা ভাইরাল অ্যান্টিবডি, ভাইরাল RNA, অথবা এই ভাইরাসটির জন্যই করতে হবে।[1]
রোগ প্রতিরোধ করার জন্য আক্রান্ত বানর ও শূকরের থেকে মানুষের মধ্যে রোগ ছড়ানো হ্রাস হওয়া দরকার। রোগ ধরা পড়লে এইরকম সংক্রমিত প্রাণীদের চিহ্নিত করে মেরে ফেলে দেহগুলি সঠিকভাবে বিনষ্ট করে ফেলার মাধ্যমে এটা করা যেতে পারে। সঠিকভাবে রান্না হওয়া মাংস এবং মাংস নিয়ে কাজ করার সময় প্রতিরোধী পরিচ্ছদ পরা সহায়ক হতে পারে, একইভাবে যখন রোগগ্রস্ত কেউ কাছাকাছি থাকে তখন প্রতিরোধী পরিচ্ছদ পরা এবং হাত ওয়াশকরা প্রয়োজন। রোগগ্রস্ত ব্যক্তির শরীর রস এবং কোষকলার নমুনা বিশেষ সতর্কতার সাথে নাড়াচাড়া করতে হবে। [1]
এই রোগের কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই; আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করতে হয় ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপি (পান করার জন্য সামান্য মিষ্টি ও নোনতা জল) নয়তো ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইডদেওয়া হয়। [1] এই রোগে মৃত্যু হার অত্যন্ত বেশি: প্রায়শ এই ভাইরাস আক্রান্তদের মৃত্যুর হার হয় 50% থেকে 90%-এর মধ্যে।[1][3] EVD প্রথম চিহ্নিত হয় সুদান ও গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রতে। সাধারণতঃ এই রোগ মহামারী আকারে দেখা দেয় সাব-সাহারান আফ্রিকার ট্রপিক্যাল অঞ্চলে।[1] 1976 থেকে (যখন এটি প্রথম শনাক্ত হয়) 2013 পর্যন্ত, fewer than প্রতিবছর 1,000-এর বেশি লোকের সংক্রমণ ঘটেছে।[1][4] আজ পর্যন্ত বৃহত্তম মহামারী এখন চলছে 2014 পশ্চিম আফ্রিকা ইবোলা মহামারী, যার প্রকোপে পড়েছে গিনি, সিয়েরা লিওন, লাইবেরিয়া এবং সম্ভবতঃ নাইজেরিয়া।[5][6] আগস্ট 2014 পর্যন্ত 1600-র বেশি কেস শনাক্ত করা হয়েছে।[7] ভ্যাক্সিন তৈরির চেষ্টা চলছে। তবে এখনও পর্যন্ত কিছু করা যায়নি। [1]
রোগ সংক্রমণ
কিছু প্রাণীর শরীরের রক্তে এ ভাইরাস বসবাস করে। বিজ্ঞানীরা মনে করতেন যে, যে সকল প্রাণী এ ভাইরাস বহন করছে সেগুলো মূলতঃ কয়েক প্রজাতির বানর অথবা কলাবাদুড়।[1] কেবলমাত্র ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের তরল পদার্থ নিষ্কাশনের মাধ্যমে এ রোগ স্থানান্তরিত হয়। ইবোলা বায়ুবাহিত রোগ নয় অথবা আক্রান্ত শরীরের কাছে গেলে হয় না।[2] আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে রক্ত, লালা, ডায়রিয়া, বমি, পানি ইত্যাদির স্পর্শে এটি অন্যের দেহে ছড়াতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে ক্রমাগতভাবে রক্তক্ষরণ হয়। ডায়রিয়া ও বমিতে রক্তপাত হয়ে থাকে। নাক, মুখ এবং জননেন্দ্রীয়ের মাধ্যমে রক্তক্ষরণ হয়। এসকল তরল অত্যন্ত সংক্রমণকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।
উৎপত্তি
মধ্য আফ্রিকার উত্তরাংশে কঙ্গোর উপত্যকায় প্রবাহিত ইবোলা নদী থেকে ইবোলাভাইরাসের নামকরণ করা হয়েছে। সর্বপ্রথম ১৯৭৬ সালে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়। মার্বুগ ভাইরাসের সাথে এ ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে যা ১৯৬৭ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল। উভয় ভাইরাসই ফিলোভিরিডায়ে পরিবারের সাথে জড়িত ও মানবদেহে রোগ সংক্রমণের জন্য দায়ী। ইবোলা ভাইরাসের পাঁচটি ভিন্ন নাম রয়েছে - ইবোলা-জায়ারে, ইবোলা-সুদান, ইবোলা-আইভোরি কোস্ট, ইবোলা-রেস্টন এবং ইবোলা-বুন্দিবুগিও। এ নামকরণগুলো ছড়িয়ে পড়া এলাকার নামানুসারে হয়েছে।
তথ্যসূত্র
- "Ebola virus disease Fact sheet N°103"। World Health Organization। মার্চ ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০১৪।
- "2014 Ebola Virus Disease (EVD) outbreak in West Africa"। WHO। Apr 21 2014। সংগ্রহের তারিখ 3 August 2014। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - C.M. Fauquet (২০০৫)। Virus taxonomy classification and nomenclature of viruses; 8th report of the International Committee on Taxonomy of Viruses। Oxford: Elsevier/Academic Press। পৃষ্ঠা 648। আইএসবিএন 9780080575483।
- "Ebola Viral Disease Outbreak — West Africa, 2014"। CDC। জুন ২৭, ২০১৪। সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৪।
- "CDC urges all US residents to avoid nonessential travel to Liberia, Guinea, and Sierra Leone because of an unprecedented outbreak of Ebola."। CDC। জুলাই ৩১, ২০১৪। আগস্ট ৯, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০১৪।
- "Outbreak of Ebola in Guinea, Liberia, and Sierra Leone"। CDC। আগস্ট ৪, ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৫ আগস্ট ২০১৪।
- "Ebola virus disease update - West Africa"। WHO। আগস্ট ৪, ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৬ আগস্ট ২০১৪।
- Bibliography
- Klenk, Hans-Dieter (জানুয়ারি ১৯৯৯)। Marburg and Ebola Viruses (Current Topics in Microbiology and Immunology)। Berlin: Springer-Verlag Telos। আইএসবিএন 978-3-540-64729-4।
- Klenk, Hans-Dieter; Feldmann, Heinz (২০০৪)। Ebola and Marburg viruses: molecular and cellular biology (Limited preview)। Wymondham, Norfolk, UK: Horizon Bioscience। আইএসবিএন 978-0-9545232-3-7।
- Kuhn, Jens H. (২০০৮)। Filoviruses: A Compendium of 40 Years of Epidemiological, Clinical, and Laboratory Studies. Archives of Virology Supplement, vol. 20 (Limited preview)। Vienna: SpringerWienNewYork। আইএসবিএন 978-3-211-20670-6।
- McCormick, Joseph; Fisher-Hoch, Susan (১৯৯৯) [1996]। Level 4: Virus Hunters of the CDC (Limited preview)। Horvitz, Leslie Alan (Updated [3rd] সংস্করণ)। Barnes & Noble। আইএসবিএন 978-0-7607-1208-5। অজানা প্যারামিটার
|month=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - Pattyn, S. R. (১৯৭৮)। Ebola Virus Haemorrhagic Fever (1st সংস্করণ)। Amsterdam: Elsevier/North-Holland Biomedical Press। আইএসবিএন 0-444-80060-3। ১১ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে মূল (Full free text) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১৪।
- Ryabchikova, Elena I.; Price, Barbara B. (২০০৪)। Ebola and Marburg Viruses: A View of Infection Using Electron Microscopy। Columbus, Ohio: Battelle Press। আইএসবিএন 978-1-57477-131-2।
- গ্রন্থপঞ্জী
- Klenk, Hans-Dieter (জানুয়ারি ১৯৯৯)। Marburg and Ebola Viruses (Current Topics in Microbiology and Immunology)। Berlin: Springer-Verlag Telos। আইএসবিএন 978-3-540-64729-4।
- Klenk, Hans-Dieter; Feldmann, Heinz (২০০৪)। Ebola and Marburg viruses: molecular and cellular biology (Limited preview)। Wymondham, Norfolk, UK: Horizon Bioscience। আইএসবিএন 978-0-9545232-3-7।
- Kuhn, Jens H. (২০০৮)। Filoviruses: A Compendium of 40 Years of Epidemiological, Clinical, and Laboratory Studies. Archives of Virology Supplement, vol. 20 (Limited preview)। Vienna: SpringerWienNewYork। আইএসবিএন 978-3-211-20670-6।
- McCormick, Joseph; Fisher-Hoch, Susan (১৯৯৯) [1996]। Level 4: Virus Hunters of the CDC (Limited preview)। Horvitz, Leslie Alan (Updated [3rd] সংস্করণ)। Barnes & Noble। আইএসবিএন 978-0-7607-1208-5। অজানা প্যারামিটার
|month=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - Pattyn, S. R. (১৯৭৮)। Ebola Virus Haemorrhagic Fever (1st সংস্করণ)। Amsterdam: Elsevier/North-Holland Biomedical Press। আইএসবিএন 0-444-80060-3। ১১ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে মূল (Full free text) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১৪।
- Ryabchikova, Elena I.; Price, Barbara B. (২০০৪)। Ebola and Marburg Viruses: A View of Infection Using Electron Microscopy। Columbus, Ohio: Battelle Press। আইএসবিএন 978-1-57477-131-2।
বহিঃসংযোগ
- ViralZone: Ebola-like viruses – Virological repository from the Swiss Institute of Bioinformatics
- CDC: Ebola hemorrhagic fever – Centers for Disease Control and Prevention, Special Pathogens Branch
- WHO: Ebola haemorrhagic fever – World Health Organization, Global Alert and Response
- Virus Pathogen Database and Analysis Resource (ViPR): Filoviridae
- 3D macromolecular structures of the Ebola virus archived in the EM Data Bank(EMDB)
- Google Map of Ebola Outbreaks
- WHO recommended infection control measures