পাট
পাট একটি বর্ষাকালীন ফসল। বাংলাদেশে পাটকে সোনালী আঁশ বলা হয়ে থাকে এবং পাটই বাংলার (বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গের) শত বর্ষের ঐতিহ্য।

দুই ধরনের পাট বাংলাদেশে দেখতে পাওয়া যায়: Corchorus capsularis (সাদা পাট) ও Corchorus olitorius (তোষা পাট)। এটি Tiliaceae পরিবারের অন্তর্গত একটি উদ্ভিদ। মনে করা হয় সংস্কৃত শব্দ পট্ট থেকে পাট শব্দের উদ্ভব হয়েছে। পাটের ইংরেজি নাম জুট (Jute )। সম্ভবতঃ উড়ে (উড়িষ্যা, ভারত) ভাষা থেকে এসেছে।

জিনোম অনুক্রম
১৬ জুন ২০১০ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে পাটের জিনোম অনুক্রম (জীবনরহস্য) আবিষ্কারের ঘোষণা দেন। পাটের জিনোম এর আবিষ্কারক ড.মাকসুদুল আলম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট ও ডেটাসফ্ট সিস্টেম্স বাংলাদেশ লি. বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে বিজ্ঞান-পত্রিকায় প্রকাশিতব্য এ খসড়া জিনোম আবিষ্কার করেছে। এতে সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় ও মালয়েশিয়া বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়।[1][2][3]

পাটের পরিচিতি
পাট একটি বর্ষজীবী ফসল। এর জীবনকাল ১০০ থেকে ১২০ দিন পর্যন্ত। চৈত্র/বৈশাখ থেকে আষাঢ়/শ্রবণ। পাট বৃষ্টি নির্ভর ফসল। বায়ুর আদ্রতা ৬০% থেকে ৯০% এর পছন্দ। পাট চাষে কোনো রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োজন হয় না। গড় ফলন হেক্টর প্রতি প্রায় ২ টন। পাটের আঁশঃ পাটের আঁশ নরম উজ্জ্বল চক্চকে এবং ১-৪ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। তবে একক আঁশ কোষ ২-৬ মিলি মিটার লম্বা এবং ১৭-২০ মাইক্রণ মোট হয়। পাটের আঁশ প্রধানত সেলুলোজ এবং লিগনিন দ্বারা গঠিত। সাধারণত: পাট গাছ জৈব প্রক্রিয়ায় পানিতে জাগ দিয়ে আঁশ ছাড়ানো হয়।[4]
পাটের কৃষিতাত্ত্বিক উপযোগীতা
ধান ও গম বাংলাদেশের প্রধান দুটি খাদ্য শস্য। কিন্তু বছরের পর বছর একই জমিতে ধান এবং গমের আবাদ করা হলে পরিবেশগত দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি হয়। ধান ও গমের শিকড় ৩-৪ ইঞ্চির বেশি গভীরে প্রবেশ করতে পারে না। তাছাড়া শিকড়ের নিচে একটি শক্ত আস্তরণ সৃষ্টি হয়; এর নিচে গাছের খাদ্য উপাদান জমা হয়। কিন্তু ধান ও গমের শিকড় সেখানে পৌঁছাতে পারে না। তবে এর উপরের স্তরের খাদ্য উপাদান নিশেষিত হয়ে যায়। এ অবস্থায় ফসল- চক্রে পাট চাষ করা হলে পাটের ১০-১২ ইঞ্চি লম্বা শিকড় মাটির তলার শক্ত আস্তরণ ভেঙ্গে ফেলে এবং নীচের স্তর থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। আরো জানা যায় যে, পাটগাছ যে খাবার খায় তার ৬০% মাঠে দাঁড়ানো অবস্থায় পাতা ঝড়ানোর মাধ্যমে মাটিতে ফিরিয়ে দেয়। তাই ধান, গম এবং অন্যান্য ফসলের আবাদ টিকিয়ে রাখতে হলে শস্য পর্যায়ে পাট চাষ অবশ্যই করতে হয়।
পাট চাষ
বায়ুর ৭০-৯০% আপেক্ষিক আর্দ্রতায়, চৈত্র-বৈশাখ মাসের প্রাক বর্ষায় পাট বীজ বোনা হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসের অপেক্ষাকৃত খড়ায় নিড়ী,গাছ বাছাই ও অন্যান্য অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা সম্পন্ন করা হয়। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের ভরা বর্ষায় যখন,নালা ডোবা, খাল-বিল, পানিতে ভরে ওঠে তখন পাট কাটা হয়। নিকটবর্তী জলাশয়ে পাট গাছ জাগ দেয়া হয়। পাট পোচানোর এ পদ্ধতির নাম "রিবন রেটিং"। পরিবেশের এ সব কিছুই পাট চাষের সাথে নিবীড়ভাবে সম্পর্কিত। পাট সম্পূর্ণ বৃষ্টি নির্ভর ফসল। সাময়িক খরা অথবা জলাবদ্ধতায় পাট ফসল তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। পাট ক্ষেতে কোন রকম সেচ অথবা পানি
নিস্কাশন প্রয়োজন হয় না।

পাটের উৎপাদন
শীর্ষ দশ পাট উৎপাদনকারী দেশ— ২০১১[5] | ||
---|---|---|
দেশ | উৎপাদন (টনস) | |
![]() |
১,৯২৪,৩২৬ | |
![]() |
১,৫২৩,৩২৫ | |
![]() |
৪৩,৫০০ | |
![]() |
১৮,৯৩০ | |
![]() |
১৪,৪১৮ | |
![]() |
৮,৩০৪ | |
![]() |
২,৫০৮ | |
![]() |
২,২৯৮ | |
![]() |
২,১৮৪ | |
![]() |
২,১০০ | |
বিশ্ব | ৩,৫৮৩,২৩৫ |
বাংলাদেশে সবচাাইতে বেশী পাট উৎপন্ন হয় ফরিদপুর জেলায়।
পাটের বিপনণ
পাট তিন পর্যায়ে বাজার জাত করা হয়। প্রথম পর্যায়ে ছোট ছোট বাজারে, দ্বিতীয় পর্যায়ে বড় বড় বাজারে এবং তৃতীয়পর্যায়ে দেশীয় পাটকল সমূহে এবং বিদেশী বাজারে রপ্তানী করা হয়। কৃষকের হাত হতে একটি বিপনন ব্যবস্থার মাধ্যমে পাট রপ্তানী করা হয়। মার্কেটিং প্রক্রিয়ায় মধ্যস্বত্ব ভোগীরা জড়িত রয়েছেন। এ ব্যবস্থায় ফড়িয়া, বেপারী, আড়তদার, দালাল, কাঁচাবেলার ও পাকা বেলাররা জড়িত থাকেন।
পাটের ব্যবহার
পাট পরিবেশ বান্ধব,বহুমুখী
ব্যবহার যোগ্য আঁশ । শিল্প বিপ্লবের সময় ফ্লাক্স এবং হেম্প এর স্থান দখল করে পাটের যাত্রা শুরু। বস্তা তৈরির ক্ষেত্রে পাট এখনও গুরুত্বপূর্ণ। পাটের আঁশের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অন্য অনেক আঁশের সঙ্গে মিশ্রণ করে ব্যবহার করা যায়। টেক্সটাইলঃ প্রচলিত বয়ন শিল্পে পাটের উল্লেখযোগ্য ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে সুতা, পাকানো সুতা, বস্তা, চট, কার্পেট ব্যাকিং ইত্যাদি। পর্দার কাপড়, কুশন কভার, কার্পেট, ইত্যাদি পাট থেকে তৈরি হয়। গরম কাপড় তৈরীর জন্য উলের সঙ্গে মিশ্রণ করা হয়। মোড়কঃ কৃষি পণ্য এবং অন্যান্য দ্রব্যাদি বস্তাবন্দি ও প্যাকিং করার জন্য ব্যাপকভাবে পাট ব্যবহার করা হয়। পাট খড়ি পাট চাষের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ। পাট আঁশের দ্বিগুণ পরিমাণ খড়ি উৎপাদিত হয়। ঘরের বেড়া, ছাউনী এবং জ্বালানী হিসাবে খড়ির ব্যবহার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। উপজাতঃ পাটের আঁশের বহুমুখী ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে প্রসাধনী, ওষুধ, রং ইত্যাদি। পাট খড়ি জ্বালানী, ঘরের বেড়া, ঘরের চালের ছাউনীতে ব্যবহার হয়। বাঁশ এবং কাঠের বিকল্প হিসাবে পার্টিকেল বোর্ড, কাগজের মন্ড ও কাগজ তৈরিতেও পাট খড়ি ব্যবহৃত হয়।সম্প্রতি পাট থেকে জুট পলিমার তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করেন ড.মোবারক আহমেদ খান যা "সোনালি ব্যাগ" নামেও পরিচিত।
.jpg)
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে পাট সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
- "পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন"। প্রথম আলো।
- "Jute genome sequence decoded by Bangladeshi scientists"। Hindusthan Times।
- "স্বপ্নযাত্রা"। Jute Genome Project। ১৯ জুন ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১০।
- http://ubinig.org/index.php/blog/printAerticle/10
- "Food And Agricultural Organization of United Nations: Economic And Social Department: The Statistical Division"। Faostat.fao.org। ২০১৩-০৮-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৯।