হরিতকী

হরিতকী (ইংরেজি: Terminalia chebula) একটি ভেষজ উদ্ভিদ। ভারত বর্ষে বিভিন্ন স্থানে এটি পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও টাঙ্গাইল প্রভৃতি স্থানে বেশী পাওয়া যায়। হরিতকী ফল বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় এবং রন্ধনশিল্পে বহুল ব্যবহৃত ভেষজ ফল।

হরিতকী
টের্মিনেলিয়া চেব্যুলা
একটি নিষ্পত্র হরিতকী বৃক্ষ
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: উদ্ভিদ
(শ্রেণীবিহীন): সপুষ্পক উদ্ভিদ
(শ্রেণীবিহীন): ইয়ুদিকটস
(শ্রেণীবিহীন): রোসিডস
বর্গ: ম্যার্টালেস
পরিবার: কমব্রেটেসিয়ায়
গণ: টের্মিনেলিয়া
প্রজাতি: টি. চেব্যুলা
দ্বিপদী নাম
টের্মিনেলিয়া চেব্যুলা
Retz.
প্রতিশব্দ[1]
  • Buceras chebula (Retz.) Lyons
  • Combretum argyrophyllum K.Schum.
  • Myrobalanus chebula (Retz.) Gaertn.
  • Myrobalanus gangetica (Roxb.) Kostel.
  • Myrobalanus tomentella Kuntze
  • Terminalia acuta Walp.
  • Terminalia argyrophylla King & Prain
  • Terminalia gangetica Roxb.
  • Terminalia parviflora Thwaites
  • Terminalia reticulata Roth
  • Terminalia tomentella Kurz
  • Terminalia zeylanica Van Heurck & Müll. Arg.

বিবরণ

হরীতকীর বৈজ্ঞানিক নাম টের্মিনেলিয়া চেব্যুলা (Terminalia chebula)। হরিতকী একটি বৃক্ষ জাতীয় সপুষ্পক উদ্ভিদ। বাংলাদেশ ও ভারতে এর আদি নিবাস। ভারতবর্ষের বনাঞ্চলে বা গ্রামাঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে এ গাছ দেখা যায়। উচ্চতা ৪০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে পাতা ঝরে নতুন পাতা গজাতে থাকে। বাকল গাঢ় বাদামি। বাকলে লম্বা ফাটল থাকে। পাতা লম্বা-চ্যাপ্টা, কিনার চোখা, লম্বায় পাঁচ-ছয় ইঞ্চি।

ফুল ফোটে ডালের শেষ প্রান্তে। রং হালকা হলুদাভ সাদা। ফল লম্বাটে, মোচাকৃতি। লম্বায় প্রায় দেড় ইঞ্চি। কাচা ফল সবুজ, পরিপক্ব ফল হালকা হলুদ[2]। শুকালে কালচে খয়েরি রং হয়। ফলের ত্বক ভীষণ শক্ত। এই ফল বছরের পর বছর ভালো থাকে। ফলের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত লম্বা লম্বা পাঁচ-ছয়টি শিরা থাকে। ফলের বাইরের আবরণ কুঁচকানো। ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা হয়। ফলের ভেতর একটিমাত্র ভীষণ শক্ত বীজ থাকে। বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়।

হরিতকী তিতা গন্ধ বিশিষ্ট। ইহা ট্যানিন, এ্যামাইনো এসিড, ফ্রুকটোজ, সাকসিনিক এসিড এবং বিটা সাইটোস্টেরল সমৃদ্ধ।

ব্যবহার

এ গাছের ফল-বীজ-পাতা সবই মানুষের উপকারে আসে । হরীতকীর কাঠ খুব মজবুত। এই কাঠ ফ্রেম, খুঁটি, আসবাব তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। মানুষের রোগ প্রতিরোধে প্রতিষেধক হিসেবে এই উদ্ভিদ বিশেষ কার্যকর। ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসজনিত রোগের ক্ষেত্রে বিশেষ উপকারী। প্রচলিত আছে, প্রতি সকালে এক কাপ পরিমাণ হরীতকী ভেজানো পানি ব্যবহার করলে রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। আমলকী ও বিভীতকীর (বহেড়া) সঙ্গে হরীতকী ভেজানো পানি, সব রোগের আশ্চর্য মহৌষধ। হরীতকী চূর্ণ ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে, পিত্তশূল দূর হয়। পাইলস, হাঁপানি, চর্ম রোগ, ক্ষত রোগ, কনজাংটিভাইটিস রোগে হরীতকী ব্যবহৃত হয় বিশেষভাবে পরিশোধনের মাধ্যমে। ইহা রক্ত চাপ এবং অন্ত্রের খিঁচুনি হ্রাস করে। হৃদপিন্ড ও অন্ত্রের অনিয়ম দূর করে। ইহা রেচক, কষাকারক, পিচ্ছিলকারক, পরজীবীনাশক, পরিবর্তনসাধক, অন্ত্রের খিঁচুনি রোধক এবং স্নায়বিক শক্তিবর্ধক। তাই ইহা নতুন ও পুরাতন কোষ্ঠকাঠিন্য, স্নায়বিক দুর্বলতা, অবসাদ এবং অধিক ওজন এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। হরিতকীতে এ্যানথ্রাকুইনোন থাকার কারণে ইহা রেচক বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ।

স্কেলের পাশে একটি শুকনো হরিতকী, ঢাকা।

চিত্রশালা

তথ্যসূত্র

  1. "The Plant List: A Working List of All Plant Species"। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০১৫
  2. মৃত্যুঞ্জয় রায়, লেখক; দিব্য প্রকাশ ; বাংলার বিচিত্র ফল; ফেব্রুয়ারি, ২০০৭; পৃষ্ঠা-১২৭, আইএসবিএন ৯৮৪-৪৮৩-২৬৬-৭
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.